“রবীন্দ্রনাথ কখনো লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্ম তোলার লাইনে দাঁড়ান নি
জুকু আমাকে তিনদিন এর ফাঁসি দিয়েছিলো। কি অপরাধ না আমি সামান্য একটা কমেন্ট করেছিলাম একজনের পোস্টে। কোন ফেবু আইনে এই কমেন্ট হেট্ স্পিচ হয় সেটা জুকুপাগ্লা চো ই বলতে পারবে!
মজার কথা কি জানেন … এখন ফেসবুক একটা আপিল করার বন্দোবস্ত করেছে। ওভারসাইট বোর্ড …যেখানে আপিল করা যেতে পারে ফেসবুকের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। যদিও ওরাই লিখেছে – ওভারসাইট বোর্ড সামান্য দেখে, অতি সামান্য বোঝে আর কিছুই করে না। তা সেই আপিল করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম … অনেকটা কন্টেন্ট বাংলা তে লেখা আছে অথচ ল্যাংগুয়েজ সিলেক্ট এর অপশনে উর্দু আছে, হিন্দি আছে কিন্তু “বাংলা” নেই! বিশ্বে বাংলা ভাষা ষষ্ঠ সবথেকে বেশি লোকের মাতৃভাষা কিন্তু ফেসবুক বাংলা তে অনেক কিছু লিখলেও বাংলা ভাষা ল্যাংগুয়েজ এর লিস্টে রাখে না ! এটাই আমার কমেন্টের মূল বক্তব্য ছিল – অর্থনৈতিক ভাবে সারা দেশের মধ্যে ষষ্ঠ না হতে পারলে বিশ্বে ভাষায় ষষ্ঠ হয়ে লাভ নেই, বাংলা ও বাঙালি চিরকাল তৃতীয় ছাগশিশু ই থাকবে!
কিন্তু বাংলা অর্থনৈতিক ভাবে প্রথম সাড়ির রাজ্য হবে কি করে? উত্তর – লক্ষ্মীর ভান্ডার! দেবাংশু সহ অনেক কে বলতে শুনলাম – নোবেলজয়ী দুই হাফ-বাঙালি অর্থনীতিতবিদ বলেছেন – মানুষের হাতে টাকা তুলে দাও, তাহলেই পশ্চিমবাংলার অর্থনীতি ভারতে কেন সারা দেশের মধ্যে প্রথম এমনকি পুরো সৌরজগতে প্রথম হবে। ঠিক এক ই বক্তব্য পুজো কমিটি গুলো কে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দেবার বিষয়ে – অর্থনীতি এক লাফে আমেরিকা কে ছাড়িয়ে যাবে! কিন্তু সত্যি ই কি তাই? যদি তাই হতো তাহলে নরেন্দ্র মোদী যখন প্রত্যেক ভারতবাসী কে ১৫ লাখ টাকা দেবেন বলেছিলেন তখন বিরোধী দল গুলো ধন্য ধন্য করলো না কেন? কোথায় মাত্র ৫০০/১০০০ টাকা আর কোথায় ১৫ লাখ !!
অর্থনীতি কোন বাচ্চার হাতের মোয়া নয় … দাঁড়ি চেটে বা চটি চেটে অর্থনীতি সুদৃঢ় হয় না। হ্যাঁ এটা ঠিক মানুষের হাতে টাকা এলে তার খরচ বাড়বে মানে সে খাবার জামাকাপড় বিলাস সামগ্রী শিক্ষা স্বাস্থ্যের পিছনে খরচ করবে … তাতে মানি সার্কুলেশন হবে। কিন্তু মানুষের হাতে ফোকটে টাকা এলে অর্থনীতি জাপানি তেল লাগিয়েও দাঁড়াবে না … অর্থনীতি শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াবে যদি মানুষের “রোজগার” বাড়ে – পার ক্যাপিটা ইনকাম! আর রোজগার বাড়াতে লাগে “লেন-দেন” মানে বাণিজ্য। নয়তো ভাবুন না … সরকার ৫০০ টাকা না দিয়ে যদি প্রত্যেকের হাতে ৫০০০ টাকা দিতো … তাহলে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি ১০ গুন্ বেড়ে যেত, তাই না? যদি ৫০,০০০ দিতো তাহলে … একশো গুন্। আর যদি ১৫ লাখ দিতো প্রতি মাসে? তাহলে সবাই উড়োজাহাজ কিনতো অফিস যেতে বা স্টিমার কিনতো পুকুরে বোটিং করতে। পশ্চিমবাংলার প্রত্যেক পুকুরে ডক বানিয়ে স্টিমার কারখানা হতো, প্রত্যেকের ছাদে এরোপ্লেন কারখানা হতো। কি, তাই না?
কিন্তু টাকা যে সরকার দেবে, সরকার কে দেয় কে? সরকার এর একমাত্র সোর্স হলো ট্যাক্স … মানে মানুষের টাকা। সেই টাকায় দানখয়রাতি। মানে বাম পকেটের টাকা ডান পকেটে ঢুকিয়ে মানি সার্কুলেশন এর স্বপ্ন দেখছে কিছু কচি কচি মহম্মদ বিন তুঘলক।
অর্থনীতি সুদৃঢ় হতো যদি ভর্তুকি টা ভোট কেনার জন্যে না দিয়ে বাণিজ্যের জন্যে দেওয়া হতো। গতকাল দেখছিলাম বিশ্বের প্রথম সাড়ির দেশের লিস্ট যারা বাইসাইকেল এক্সপোর্ট করে … ভারত কোথাও নেই! আমাদের রাজ্যে লাখ লাখ কন্যাশ্রীর সাইকেল বিলি হয় কিন্তু সাইকেল বানিয়ে সারা দেশে বা বিদেশে বিক্রির কারখানা নেই। এককালে ছিল – Sen-Raleigh Bicycle – বাংলার নিজস্ব সাইকেল কোম্পানি … সারা দেশে এমনকি বিদেশে সুনাম ছিল, আজ সেই কারখানা বন্ধ, ভগ্নস্তুপ। গত তিরিশ বছরে এরকম হাজার লাখ বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানা বাংলার প্রতিটা জেলায় শহর ও গ্রামের অর্থনীতি কে ভঙ্গুর করে দিয়েছে। একসময়ের শিল্পে পথ দেখানো বাংলা আজ শিল্পে শেষের দিক থেকে প্রথম আর তাই কর্মসংস্থান ও নেই, লাখ লাখ বেকার। ‘
ভর্তুকি ঋণ প্যাকেজ এখানে দরকার ছিল – শিল্পোন্নয়নে।
শুধু সরকার কে দোষ দিয়ে কি লাভ! আম বাঙালি ও এখন ভাতা ভর্তুকি দানখয়রাতি তে সন্তুষ্ট। সরকার ট্যাব কেনার টাকা দিচ্ছে, ছাত্র রা ওই টাকায় মদ খাচ্ছে ডিজে বাজিয়ে ফুর্তি করছে। সরকার সাইকেল দিচ্ছে টাকা দিচ্ছে ছাত্রী রা বিক্রি করে দিচ্ছে মোবাইল কিনছে পার্লারে যাচ্ছে, গরীব দের দু টাকার চাল দিচ্ছে লোকে খোলা বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে, রূপশ্রীর টাকা দিচ্ছে তো বিবাহিতা মেয়ে আবার বিয়ে করছে! সরকারের টাকা … তার মানে হরির লুঠ … যে পারে লুটে নে। এই মানসিকতা যদি দেশের সাধারণ মানুষের হয়, তাদের মধ্যে যদি ন্যায় অন্যায় বোধ না থাকে তবে রাজ্যের অর্থনীতির বৃদ্ধি কোনোদিন ই ঈর্ষণীয় হবে না, বেকারত্ব ও কমবে না।
যতদিন না বাঙালি ভাতা নির্ভরতা সরকারি চাকরি নির্ভরতা ছেড়ে সাইকেল বানিয়ে পেপার প্লেট বানিয়ে ফ্যান টিভি কম্পিউটার ব্যাগ ছাতা কসমেটিক্স ওষুধ থেকে এরোপ্লেন জাহাজ বানিয়ে দেশে বিদেশে বেচতে শিখবে … ততদিন আপনাকে আপনাদের কে লক্ষ্মীর ভান্ডারের লাইনে দাঁড়াতেই হবে!
তবে … রবীন্দ্রনাথ ও আমার মধ্যে একটা অদ্ভুত মিল … উনিও কখনো সরকারি চাকরির পরীক্ষা দেন নি, লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্ম তোলার লাইনে দাঁড়ান নি, আমিও না ☺️”
বন্ধুবর Arnab গাঙ্গুলীর লেখা। পড়ে দেখতে পারেন বন্ধুগণ।