৭১ , হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট, রাসমণির স্নানবাড়ি।
দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের প্রতিষ্ঠাত্রী রানি রাসমণির জীবনের শেষ ক’টা দিন কেটেছিল কলকাতার কালীঘাটের এই স্নানবাড়িতে এবং এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রানি।
কালীঘাটের হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট-এর ওপারে একসময় ছিল আদিগঙ্গা। নাম বদলে এখন টালিনালা। খানিকটা এগোলেই সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভার বাঁধানো ঘাট। এখানেই কলকাতার বারোয়ারি দুর্গাপুজোর জন্ম। ওই ঘাটের অদূরে, মজে যাওয়া টালি নালার কাছেই ৭১ , হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট। বহুলতের ভিড়ে এই বাড়ির ইতিহাস আজ লোকে প্রায় ভুলতে বসেছে। জীবনের শেষ কটাদিন এখানেই কাটিয়েছিলেন রানিমা।
অনেকে আবার এ’বাড়িকে চেনে ‘স্কুলবাড়ি’ নামে। কারণ, ১৯৪২ সালে ওই বাড়িতে একটি স্কুল তৈরি হয়। তবে, ১৯৫০ সালে হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়।
দক্ষিণেশ্বর মন্দির প্রতিষ্ঠার অনেক আগে, ১৮৪৮ সালে, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে ১৮ থেকে ২০ কাঠা জমি কিনেছিলেন রাসমণি। জমিটি অবশ্য তখন পুরসভায় নথিভুক্ত হয়নি। কারণ, তখনও পুরসভা তৈরি হয়নি। পরের বছর প্রতিষ্ঠিত হয় কলকাতা পুরসভা। এই জমির প্রায় শেষ প্রান্তে ছিল রানির সাধের স্নানবাড়ি। তার উলটোদিকে বিশাল রান্নাঘর, পিছনে গোশালা।
দক্ষিণেশ্বরে জগদম্বা ভবতারিণী প্রতিষ্ঠার পর আর মাত্র পাঁচ বছর বেঁচেছিলেন রাসমণি। ৬৫ বছর ঊর্দ্ধা রানি তখন আর দক্ষিণেশ্বরে প্রায় যেতেনই না। কাজের সম্পূর্ণ দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন বিশ্বস্ত ছোটজামাই মথুরবাবুর উপর। জানবাজার থেকে মাঝেমধ্যেই চলে আসতেন আদিগঙ্গার পাড়ে তাঁর স্বামীর তৈরি দো-মহলা এই বাড়িতে। এখানেই ধুমধাম করে কালীপুজো করতেন। গঙ্গার দু’ধারে তৈরি হয়েছিল অনেকগুলি ঘাট। টলটলে আদিগঙ্গার দু’ধারে ছিল ইট, সুরকির গোলা। কারবারি মানুষের ভিড়ে গমগম করত গোটা অঞ্চল।
এই বাড়ির উত্তর প্রান্তের একটি ঘরেই মৃত্যু হয়েছিল রানির। মৃত্যুর পর এখান থেকেই তাঁর শবদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কেওড়াতলা মহাশ্মশানে।
ঐতিহ্য ভুলে, আজ রীতিমতো পাড়া হয়ে উঠেছে রাসমণির সেদিনের সাম্রায্য। স্মৃতিবিজরিত এই বাড়িতে স্মৃতি এখন মলিন। উঠোনের চারদিকে ঘর-গেরস্থালি। গোটা স্নানবাড়িতে ৩০টি পরিবার ভাড়া থাকেন। উঠোনের মাঝখানে মাথা তুলে বিশাল এক নিমগাছ। বাড়ির ছাদে ডিশ টিভির ছাতা, উঠোনের একধারে, বারান্দায় ঝুলছে জামা কাপড়।
স্মৃতির শহরে পোনে দু’শো বছর পর রানির সাম্রাজ্য এখন শুধুই নস্টালজিয়া।
তথ্য ও ছবি নেট থেকে সংগৃহীত।
2022-02-20