পরপর চারবার। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে যাতে সন্ত্রাসবাদী জইশ ই মহম্মদের প্রধান মৌলানা মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করা হয়, সেজন চারবার প্রস্তাব এনেছিল ভারত। প্রত্যেকবারই চিন ভেটো দিয়ে প্রস্তাব পাশ হতে দেয়নি। এই অবস্থায় পাকিস্তান তার দীর্ঘদিনের মিত্র চিনকে বলেছে, ভারত দু’টি শর্ত পালন করুক। তারপর মাসুদকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করলে তারা আপত্তি জানাবে না।
কী সেই দু’টি শর্ত?
প্রথমত, ভারত সীমান্ত থেকে সেনার সংখ্যা কমিয়ে আনুক। দ্বিতীয়ত, ইসলামাবাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শুরু করুক।
এমনিতে চিনের পক্ষেও আর বেশিদিন মাসুদকে বাঁচানো সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ আছে অনেকের। কারণ নিরাপত্তা পরিষদে মাসুদকে নিয়ে প্রস্তাব পাশ না করাতে পেরে আমেরিকা এবার রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে বিষয়টি তুলতে পারে। সত্যিই যদি তা ঘটে, ব্যাপারটা চিনের পক্ষে রীতিমতো অস্বস্তিকর হবে।
১৪ ফেব্রুয়ারি জইশ জঙ্গিরা গাড়িবোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৪০ জনের বেশি সিআরপিএফ জওয়ানকে হত্যা করে। তারপরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ভারতের যুদ্ধবিমান পাকিস্তানে ঢুকে বালাকোটে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবিরে বোমা ফেলে আসে। ভারতের আকাশেও হানা দেয় পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান। সেই যুদ্ধবিমানকে তাড়া করে পাকিস্তানে ঢুকে পড়েন মিরাজ বিমানের চালক অভিনন্দন বর্তমান। পাকিস্তানের গোলায় তাঁর বিমান ধ্বংস হয়। তিনি বন্দি হন। চাপের মুখে তাঁকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান।
নিউ ইয়র্ক থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, চিন আমেরিকাকে জানিয়ে দিয়েছে, দু’টি শর্তে পাকিস্তান মাসুদকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করতে দিতে রাজি। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের শর্তগুলি পছন্দ হয়নি। তারা জানিয়েছে, মাসুদকে সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করা ও ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই।
গত ১৩ মার্চ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চিন বলেছিল, কয়েকটি ‘টেকনিক্যাল’ কারণে তারা মাসুদকে সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণায় সায় দিতে পারছে না। আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের মতো নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্য চিনকে বলেছিল, ঠিক কী কারণে তাদের আপত্তি, দু’সপ্তাহের মধ্যে স্পষ্ট জানাতে হবে।
সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে শীঘ্র। আমেরিকা থেকে স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তারা মাসুদকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করতে চায়। মাসুদকে নিয়ে পাকিস্তানের কী অবস্থান, এখনও স্পষ্ট জানা যাচ্ছে না। ২৭ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সদর দফতর থেকে গোপনে ভারতকে জানানো হয়েছিল, মাসুদকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী বলে ঘোষণা করলে তাদের আপত্তি নেই। কিছুদিন বাদেই আবার পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র দাবি করেন, মাসুদ তাঁদের দেশে নেই।