স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন –

“কোনো ব্যক্তি অসত্যের দিকে আকৃষ্ট হয় তার প্রধান কারণ হলো, সে সত্যকে ধরতে পারছেনা | অতএব যা মিথ্যে তা দূর করার একমাত্র উপায় হলো, যা সত্য তা মানুষকে দিতে হবে | সত্যটা কি? তাকে সেটা জানিয়ে দেও | সত্যের সাথে সে নিজের ভাবের তুলনা করুক | তুমি তাকে সত্য জানিয়ে দিলেই ওখানেই তোমার কাজ শেষ হয়ে গেল”

স্বামী বিবেকানন্দ একজন এমন মহাপুরুষ যিনি ১৮৯৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরে শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো ভারতীয় সনাতনী সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন। বিশ্বধর্ম সম্মেলনে সনাতনী ভারতীয় সংস্কৃতিকে আলোকিত করেন। এই মহাপুরুষের পন্থা, মানব চেতনা ও আধ্যাত্মিকতা গোটা বিশ্বের কাছে মানবতার প্রেরণা।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে বেতন বৃদ্ধি এবং হোস্টেলের বিধিনিষেধের উপর আন্দোলনের উত্তাপ স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির উপর পরে। পন্থা যাই হোক না কেন আন্দোলনের প্রভাব কেন স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি ও গৈরিক নিশান ত্যাগের উপর পড়বে? কারণ বিবেকানন্দের গৈরিক পোশাক সন্ন্যাসী ও সনাতনী যোগধর্ম ? স্বামীজী পাচঁ হাজার বছরের পুরনো সাধুসন্ত যোগী ঋষির প্রতিনিধি স্বরূপ বলে এই আক্রমণ ? উত্তর চাই। এ ঘটনা চরম নিন্দনীয়।

১৪ই নভেম্বর ‘জাতীয় শিশু দিবস’ এর দিন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির নিচে লাল রঙ দিয়ে অশ্রাব্য- অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা হয়। সেই সঙ্গে বিবেকানন্দের ভাবমূর্তি ও চরিত্রের অবয়ব সূচক বিশেষ মূর্তি, যা কিছু দিনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে উন্মোচন করা হবে ঠিক এমন সময় কিছু দেশদ্রোহী বামপন্থী ছাত্র সংগঠন স্বামী বিবেকানন্দের ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করেছে । এই অধ্যায় অত্যন্ত নিন্দনীয়।

“চোখ আমাদের পিছনের দিকে নয় সামনের দিকে, অতএব সামনের দিকে অগ্রসর হও | আর যেই ধর্মকে নিজের ধর্ম বলে গৌরববোধ করো, তার উপদেশ গুলিকে কাজে পরিণত করো | ঈশ্বর তোমাদের সাহায্য করুন” – Swami Vivekananda

কিন্তু হায়, সেই বাণী আজ ধুলায় লুন্ঠিত।সাংস্কৃতিক অবক্ষয় বামপন্থী নকশাল মাওবাদী বিচ্ছিন্নতাবাদী ছাত্রদের কর্মীপন্থার বিশেষ যজ্ঞ। আজকের শিশুরা আগামী ভারতের যুবসম্প্রদায় এবং ভবিষ্যতে দায়িত্বশীল ভারতীয় নাগরিক। আমরা নিশ্চিত এই বামপন্থীরা ভারতীয় নবচেতনার পুরোধা পন্ডিত – ঋষিদের ইতিহাস- সাহিত্য-সংস্কৃতি- ধর্মতত্ত্ব – দর্শনকে মুছে দিতে চাইছেন। আমরা নিশ্চিত এই জঘন্য ঘটনার পেছনে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্র সংগঠন হিসেবে SFI, AISA, ADSO, AISF র সরাসরি যোগ আছে। বরাবর এই বামপন্থীরা অখন্ড ভারতবর্ষ ও ভারতীয় সভ্যতা সংস্কৃতির পরম্পরাকে অস্বীকার করে । স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারী হয়ে “ভারত তেরি টুকরে হোঙ্গে ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ ” কলরব তোলে। ভারতীয় সাংবিধানিক বিচার ব্যবস্থা ও শাসন কাঠামোকে অশ্রদ্ধা করে।

স্বামী জী বলেছিলেন “তোমাদের সবার ভিতর মহাশক্তি আছে, নাস্তিকের ভিতর তা নেই | যারা আস্তিক তারা বীর, তাদের মহাশক্তির বিকাশ হবেই”

এই বছরেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে বীর সাভারকারের মূর্তিকে কালিমালিপ্ত করে বামপন্থী দেশদ্রোহী SFI। পশ্চিমবঙ্গে ১৯৭০ সালে কলেজ স্কোয়ারে নারী শিক্ষার কাণ্ডারী পন্ডিত বিদ্যাসাগরের মূর্তির মাথা ভেঙে দেয় নকশাল মাওবাদী বামপন্থীরা।২০১৮ সালে জেহাদী সংগঠন বীরভূমের চরিচায় রাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তিকে ভেঙে দেয় । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নকশাল মাওবাদী বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের কিছু বাঙালী কুলাঙ্গার সন্তান ক্যাওরাতলা মহাশ্মশানে ভারত কেশরী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মূর্তি ভাঙে এবং কালিমালিপ্ত করে। যাদবপুরের বামপন্থীদের কন্ঠে শোনা যায় ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী’, ‘মণিপুর মাঙ্গে আজাদী’, ‘যাদবপুর মাঙ্গে আজাদী’, ‘ঘর ঘর সে নিকলেগা আফজাল’। আবার এই পশ্চিমবঙ্গেই ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনী প্রচার শোভাযাত্রায় হামলা করে জেহাদী ও বামপন্থীরা। বিদ্যাসাগর কলেজের ভেতরে ঢুকে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনা ঘটায়। আমরা ভুলে যায় নি এই দেশদ্রোহী বিচ্ছিন্নতাবাদী বামপন্থী নকশাল মাওবাদীরা স্বদেশী সংগ্রামী নেতাজীকে তোজোর কুকুর, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া কবি এবং যুগ অবতার শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবকে মৃগীরোগী বলেছেন। এই যুগ-অবতারের শিষ্য বিবেকানন্দ। সঠিক সময় এসে গেছে এই বামপন্থীদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন সকল বাঙালি সমাজ।

“কেবল আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করতে পারলেই সবধরনের দুঃখ-কষ্ট ঘুচবে | যতই শক্তি প্রয়োগ, শাসন প্রণালীর পরিবর্তন ও আইনের কড়াকড়ি করোনা কেন, তারফলে জাতির অবস্থার পরিবর্তন হয়না | আধ্যাত্মিক ও নৈতিক শিক্ষাই, প্রবৃত্তি পরিবর্তন করে জাতিকে সৎ পথে চালিত করে” – Swami Vivekananda

ভারতীয় সনাতনী সংস্কৃতিকে এক দল দুষ্কৃতী দেশদ্রোহীরা নিশানা করছে। তাই গর্জে উঠুন।

ভারতবর্ষের কেন্দ্রীয় সরকারের ভর্তুকি নিয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি যে থালায় খায় আবার সেই থালায় ফুটো করে। ভারতবর্ষে থাকে-খায়, আর দালালি করে চীন-পাকিস্তানের। ক্ষমতায় আসার আগে বামপন্থীরা “গণতন্ত্র- সমাজতন্ত্র- সাধারণতন্ত্র – স্বাধীনতা” শব্দের গুরুগম্ভীর আলোচনা করলেও ক্ষমতায় আসার পরে অগণতান্ত্রিক অসাংবিধানিক ও সাম্প্রদায়িক হয়ে ওঠে। বামপন্থীদের দৃষ্টান্ত ৩৪ বছর হার্মাদ শাসন, বর্তমান চীন সরকার, কিউবা সরকার, বলেভিয়া সরকার। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে বেতন বৃদ্ধি এবং হোস্টেলের বিধিনিষেধের উপর আন্দোলনের উত্তাপ স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির উপর পরে। পন্থা যাই হোক না কেন আন্দোলনের প্রভাব কেন স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি ও গৈরিক নিশান ত্যাগের উপর পড়বে ? কারণ বিবেকানন্দের গৈরিক পোশাক সন্ন্যাসী ও সনাতনী যোগধর্ম ? স্বামীজী পাচঁ হাজার বছরের পুরনো সাধুসন্ত যোগী ঋষির প্রতিনিধি স্বরূপ বলে এই আক্রমণ ? উত্তর চাই।

“যেই রকম আপনি ভাববেন ঠিক সেইরকমই আপনি হয়ে যাবেন | যদি আপনি নিজেকে দুর্বল হিসাবে বিবেচনা করেন তাহলে আপনি দুর্বল হয়ে যাবেন আর আপনি যদি নিজেকে শক্তিশালী মনে করেন, তাহলে আপনি শক্তিশালী হয়ে উঠবেন” – Swami Vivekananda

JNU তে স্বামী বিবেকানন্দ- এর মূর্তি ভেঙে বামপন্থীরা প্রমাণ করল তারা ভারত বিরোধী হওয়ার পাশাপাশি বাঙালি বিরোধীও। তাই বামপন্থীদের বিরুদ্ধে ABVP -র পক্ষ থেকে 16 ই নভেম্বর, 2019, শনিবার – শ্যামবাজার মেট্রো থেকে একটি মিছিলের আয়োজন করা হয়। মিছিলে বিদ্যার্থী পরিষদ সহ সমাজের সর্বস্তরের জাতীয়তাবাদী শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের উপস্থিতি ছিল নজর কাড়া।

জেএনইউ-তে বিবেকানন্দের মূর্তির অবমাননা, প্রতিবাদে কলকাতায় মশাল মিছিল বিজেপি নেতাদের

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে (জেএনইউ) স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তির অবমাননা নিয়ে এ বার প্রতিবাদে পথে নামলেন এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা। শনিবার বিকালে শহর কলকাতায় মশাল মিছিল বার করেন তাঁরা। তবে দলের ব্যানারে এই প্রতিবাদ মিছিল বার করা হয়নি। বরং বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে তৈরি অরাজনৈতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী নাগরিক মঞ্চের ব্যানারেই মিছিলটি বেরোয়।

এ দিন বিকাল ৫টা নাগাদ রাসবিহারী মোড় থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত মশাল হাতে মিছিল করেন বিজেপি নেতারা। তাতে শামিল হন রাজারহাট-নিউটাউনের বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত, আরএসএস-এর বাংলা মুখপত্রের সম্পাদক তথা গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হওয়া রন্তিদেব সেনগুপ্ত, বিজেপির যুবনেতা শঙ্কুদেব পন্ডা, জাতীয় নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক অরিন্দম চক্রবর্তী-সহ অন্য বিজেপি নেতারা।

ছিলেন টলিউডের বেশ কিছু পরিচিত মুখও, যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন অঞ্জনা বসু, অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, রূপা ভট্টাচার্য এবং অগ্নিমিত্রা পাল।

গোলপার্কে পৌঁছে একটি সভাও করেন বিজেপি নেতারা। সেখানে বক্তৃতা করেন সব্যসাচী, রন্তিদেব, শঙ্কুদেব এবং অগ্নিমিত্রারা। অপরাধীদের কড়া শাস্তির দাবি করেন তাঁরা। ওই সভা থেকে বাংলাপক্ষকেও একহাত নেন বিজেপি নেতারা। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, বাঙালিয়ানা নিয়ে যাঁরা সবসময় বড়াই করেন, সেই বাংলাপক্ষ এখন কোথায় গেল? মূর্তির অবমাননা দেখেও তাঁদের কাউকে পথে নামতে দেখা যাচ্ছে না কেন?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.