ভারতীয় ডাকবিভাগ ১৭-১২-২০০২ তারিখে ৫০০ পয়সার মূল্যমানে স্বাধীনতা সংগ্রামে অটল এবং নিবেদিত-প্রাণ তেজস্বিনী বৃদ্ধা, তমলুকবাসী মাতঙ্গিনী হাজরার স্মরণে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এবং পরবর্তীকালে দেশভক্তির পবিত্রতায় তিনি এক প্রেরণাদায়ী মাতৃশক্তিতে অধিষ্ঠিত হলেন। ১৯৪২ সালের আগষ্ট মাস। ভারতছাড়ো আন্দোলন শুরু হল। ইংরেজকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার ডাক দিলেন গান্ধীজী। ডাক বাংলাতেও এসে পৌঁছালো। গান্ধীজীর ডাকে বাংলায় যারা সাড়া দিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম মাতঙ্গিনী। বীরাঙ্গনা এই নারী ছিলেন গান্ধীবাদী, স্থানীয় মানুষ তাই তাঁকে ডাকতেন ‘গান্ধীবুড়ি’ নামে। ১৯৩২ সালে সংঘটিত আইন আমান্য আন্দোলনে তাঁর যোগদান ছিল। তিনি লবণ আইন ভেঙ্গেছিলেন, ফল হল কারাবরণ। ১৯৩৩ সালে শ্রীরামপুরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের আঞ্চলিক সম্মেলন চলাকালীন পুলিশের লাঠিচার্জে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন তিনি। বেয়াল্লিশের ভারতছাড়ো আন্দোলনের সময় তাঁর বয়স ছিল ৭২, কিন্তু অনায়াসে ঝাঁপিয়ে পড়লেন সেই আন্দোলনে। প্রায় ছয় হাজার বিপ্লবীর মিছিলে নেতৃত্ব দিলেন। মিছিল তমলুক থানা দখল করতে চললো। চালু ১৪৪ ধারার মধ্যেই বীরাঙ্গনা সদর্পে এগিয়ে চললেন। গুলি চললো, তিরঙ্গা পতাকা ফেললেন না তিনি, সকলকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে গেলেন। ‘বন্দেমাতরম’ ধ্বনি দিয়ে পতাকা উঁচু রেখেই নশ্বরদেহ ত্যাগ করলেন এই মহীয়সী নারী।
ড. কল্যাণ চক্রবর্তী