রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা রীতিমত ষড়যন্ত্র করে করা হয়েছে – রিপোর্ট কেন্দ্রে পাঠানোর পর ,বুধবার সিলবন্ধ খামে কলকাতা হাইকোর্টের ৫ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চে রিপোর্ট পেশ করেন মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা

রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা রীতিমত ষড়যন্ত্র করে করা হয়েছে। ছক কষে সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। এই মর্মেই রিপোর্ট জমা পড়ল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শ্রী জি কিষণ রেড্ডির কাছে।  তবে এটি অন্তবর্তী রিপোর্ট বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে দেওয়া তথ্যের আরও পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 
এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট জমা দেন বিচারপতি প্রমোদ কোহলি, কেরালার প্রাক্তন মুখ্য সচিব আনন্দ বোস, ঝাড়খন্ডের প্রাক্তন ডিজিপি নির্মল কৌর, আইসিএসআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি নিসার আহমেদ, কর্ণাটকের প্রাক্তন অতিরিক্ত মুখ্যসচিব এম মদন গোপাল । 
কী কী খুঁজে পেল ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি
১। পূর্ব পরিকল্পনা মতো ভোটের ফল ঘোষণা হওয়ার দিন অর্থাৎ ২ মে, ২০২১ রাত থেকে হিংসা হয়েছে। অধিকাংশ স্থানেই হিংসার জন্য আগে থেকেই চক্রান্ত করা হয়েছিল।
২। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর বিষয় হল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিংসার নেতৃত্ব ছিলেন এক্কেবারে পেশাদার গুণ্ডাবাহিনী, মাফিয়া ডনস এবং অপরাধীদের দল। পুলিশের খাতায় এদের নামও রয়েছে। অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে যে নির্বাচনের আগে থেকেই এদের দিয়ে সন্ত্রাস ছড়াতে রাজনৈতিক মদত দেওয়া হয়েছিল
৩. এই ধরণের ঘটনাতে গ্রামের পর গ্রাম জুড়ে ধ্বংস চালানো হয়েছে। যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মানুষের ক্ষতিসাধন করা। হিংসার জেরে ক্ষতি হয়েছে মানুষের সম্পত্তির, বাড়িঘর ও ব্যবসার। অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন মানুষ। 
৪. বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, ক্ষতিগ্রস্থরা প্রতিশোধের ভয়ে বা পুলিশের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের কারণে পুলিশে অভিযোগ জানাতে ভয় পান। যেসব ভুক্তভোগীরা পুলিশকে জানাতে সাহস করেছেন, তাদের হয় দোষীদের সাথে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে বাধ্য করা হয়েছে, নয়তো মামলা দায়ের করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। 
৫. জোর করে আধার কার্ড, রেশন কার্ড ছিনিয়ে নেওয়া, কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন না করার জন্য জোর করা, তোলাবাজি বা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আদায় করার ঘটনা ঘটেছে।  
৬. তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি, মহিলা, শিশু এবং সমাজের অন্যান্য দুর্বল অংশের লোকদের টার্গেট করা হয়েছে একাধিকবার।
৭. যদিও হতাহতের সঠিক সংখ্যা, মারাত্মক জখম, সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে একশ্রেণীর মানুষ, বিশেষত যারা এই ধরণের হিংসা তৈরি করছে, তারা রাজনৈতিক ক্ষমতা ও সুবিধা ভোগ করছে। 

ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগে দায়ের জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিল জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিশেষ দল। প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলে এই রিপোর্ট পেশ করেছে তারা। বুধবার সিলবন্ধ খামে কলকাতা হাইকোর্টের ৫ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চে রিপোর্ট পেশ করেন মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা।

পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল। সেই মামলার শুনানিতে রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে নির্দেশ দেয় আদালত। নির্দেশ পেয়ে রাজ্যে আসেন মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে কাকদ্বীপ থেকে কোচবিহার পর্যন্ত আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। তার পর আদালতের নির্দেশ মেনে বুধবার রিপোর্ট পেশ করল তারা।

মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি দল গত কয়েকদিন ধরে ভোট পরবর্তী হিংসা হয়েছে এমন বহু জায়গাতে ঘিরে দেখেছে। আর এরপরেই এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বুধবার শুনানিতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বৃহত্তর বেঞ্চে জানান, ‘‘গত ২৪ জুন কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল কলকাতায় আসে। তার পর সেখান থেকেই ৫-৬টি দলে ভাগ হয়ে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।” এরপরেই এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

তবে বুধবার আদালতে যে খামে রিপোর্ট জমা পড়েছে তা অসম্পূর্ণ বলে দাবি কমিশনের। শুনানিতে মানবাধিকার কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে যে, একাধিক এমন এলাকা রয়েছে যেখানে ভোট পরবর্তী হিংসার কথা বলা হয়েছে। সেখানে যাওয়ার সময় প্রতিনিধি দল পায়নি। আর সেই কারণে অসম্পূর্ণ রিপোর্ট এটি। পূর্ণ রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্যে আদালতের কাছে আরও একটু সময় চেয়ে নেন কমিশন। যদিও এদিন যে রিপোর্ট জমা পড়েছে তা পড়তে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানায় কলকাতা হাইকোর্ট।

প্রশাসনের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ মামলকারী আইনজীবী প্রিয়াঙ্কা টিবড়েওয়ালের। যাদবপুরে ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা পরিদর্শন করতে গিয়ে মানবাধিকার কমিশনের আধিকারিকদের বিক্ষোভের মধ্যে পড়তে হয় বলে এদিন আদালতে অভিযোগ করেন মামলাকারী আইনজীবী। এমনকি প্রশাসনের তরফে কোনও ব্যবস্থা এই বিষয়ে নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ তাঁর। যদিও এই বিষয়ে মামলাকারী আইনজীবীর সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সরকারি আইনজীবী। ২রা জুলাই ফের এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.