প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘ডিভাইডার ইন চিফ’ বলে কটাক্ষ করেছিল টাইম ম্যাগাজিন। মোদীকে নিয়ে নিবন্ধটি লিখেছিলেন পাক লেখক আতিস তাসির। এই লেখকের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই এ বার প্রশ্ন তুলে দিলেন নরেন্দ্র মোদী। বললেন, তাঁকে ‘ডিভাইডার ইন চিফ’ বলা লেখক নিজেই পাকিস্তানের বাসিন্দা। এটা থেকেই কি তাঁর নিবন্ধের সারবত্তা বোঝা যায় না!
শুক্রবার টাইম ম্যাগাজিনের এই নিবন্ধের জবাব দেন মোদী। তিনি বলেন, “টাইম ম্যাগাজিন বিদেশের পত্রিকা। এই পত্রিকায় যিনি লিখেছেন তিনি পাকিস্তানের বাসিন্দা। এটা থেকেই কি বোঝা যায় না, কোন উদ্দেশ্যে আমাকে নিয়ে এই নিবন্ধ লেখা হয়েছে।” এর আগে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেছিলেন, “পাকিস্তানের কাছে এর থেকে বেশি কী আর আশা করা যেতে পারে।”
গত শুক্রবার বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন পত্রিকা প্রশ্ন তোলে, বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র কি আরও পাঁচ বছর নরেন্দ্র মোদীকে সহ্য করবে? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে খুব বিখ্যাত নেতানেত্রীদের নিয়ে কভার স্টোরি করে ওই পত্রিকা। দেখা যায় পত্রিকার প্রচ্ছদে আছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর মুখ। ফোটোগ্রাফ নয়, আঁকা ছবি। তার পাশে বড় করে হেডিং, ইন্ডিয়াজ ডিভাইডার ইন চিফ। অর্থাৎ যিনি ভারতের মানুষকে বিভাজিত করতে পারেন সবচেয়ে বেশি।
মোদীর বিরুদ্ধে মূল নিবন্ধটির লেখক আতিস তাসির। তাঁর বাবা ছিলেন পাকিস্তানের নাম করা ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক। তাঁর নাম ছিল সলমন তাসির। আতিস যেমন মোদীর সমালোচনা করেছেন, তেমন তাঁর মূল প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকেও ছাড়েননি। তাঁর মন্তব্য, ওই দলটি ভারতের জনতাকে পরিবারতন্ত্র ছাড়া কিছুই দিতে পারে না।
মোদী সম্পর্কে লেখা হয়েছে, ২০১৪ সালেও তিনি মানুষের মধ্যেকার বিভাজনকে ব্যবহার করেছিলেন। সে বার তাঁকে কেন্দ্র করে অনেকের মনে আশা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে তিনি মানুষকে বলছেন, বিভাজনকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দাও। ওই নিয়েই বেঁচে থাক। হতাশাকে দূরে সরিয়ে রাখ।
এরপর আরও আক্রমণাত্মক ভাষায় মন্তব্য করা হয়েছে, ক্ষমতায় আসার পরে মোদী অতি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। একদিকে তিনি বলতেন হিন্দু পুনর্জাগরণের কথা। অন্যদিকে যে অর্থনৈতিক কর্মসূচির কথা বলতেন, তা অনেকটা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো।
আতিসের মতে, গত পাঁচ বছরে চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছেন ভারতের প্রধামমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, মোদী এমন একজন রাজনীতিক যিনি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেননি। তিনি ফের নির্বাচিত হতে চান। ভোটের আগে অনেক কথা বলছেন। কিন্তু মানুষকে আশার আলো দেখাতে পারছেন না।
২০১৪ আর ২০১৯-এর ভোটের তুলনা করে বলা হয়েছে, গতবার মোদী মানুষের ক্রোধকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন। তিনি আর্থিক উন্নতির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এর ফলে একরকম আশার বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছিল। পাঁচ বছর বাদে সে সবই অলীক মনে হয়। প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে আতিসের বক্তব্য, অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিনি অলৌকিক কিছু একটা ঘটাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তিনি দেশে একপ্রকার বিষাক্ত ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ সৃষ্টি করেছেন।
সেই সঙ্গে অবশ্য কংগ্রেস সম্পর্কেও বিশেষ আশা পোষণ করেন না আতিস। তিনি লিখেছেন, ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন দলটি এখন আর নতুন কিছু ভাবতে পারছে না। এবার তারা প্রিয়ঙ্কা গান্ধীকে তাঁর দাদা রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি প্রচারে নামিয়েছে। আমেরিকার ডেমোক্র্যাট পার্টি যদি ২০২০ সালে ফের প্রেসিডেন্ট পদে হিলারি ক্লিনটনকে প্রার্থী করে এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী করে তাঁর মেয়ে চেলসিয়া ক্লিনটনকে, তাহলে ব্যাপারটা যেমন দাঁড়াবে, ভারতের ক্ষেত্রে তাই হয়েছে।
কংগ্রেসের এই ‘দুর্বলতায়’ মোদীর খুবই সুবিধা হবে বলে আতিসের ধারণা। তিনি লিখেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সৌভাগ্য, তাঁর বিপক্ষে আছে একটি দুর্বল জোট। তার নেতৃত্বে আছে কংগ্রেস। মোদীকে হারানো ছাড়া যাদের কোনও কর্মসূচিই নেই। তার পরেও মোদী জয় নিয়ে নিশ্চিত নন। তাঁর মনে অনেক দ্বিধা আছে। তিনি খুঁজছেন, দলের মধ্যে কেউ তাঁর শত্রুতা করছে কিনা।
টাইম ম্যাগাজিনের এই নিবন্ধ নিয়েই বিজেপির তরফ থেকে শুরু হয়েছিল সমালোচনা। কিন্তু যাঁকে নিয়ে এই নিবন্ধ, তাঁর তরফে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এতদিনে মুখ খুললেন মোদী।