স্বাধীনতা দিবসের রেশ তখনও কাটেনি। খবর আসতে শুরু করলো অটল বিহারি বাজপেয়ি গুরুতর অসুস্থ। ভর্তি দিল্লির এইমসে।
বাকিটা ভারতীয় রাজনীতির প্রচলিত প্রথা। নিজের দলের লোক থেকে রাজনৈতিক বিরোধী অব্দি সব্বাই (আর অবশ্যই মিডিয়া) ভিড় জমাতে শুরু করলেন হাসপাতালে। দিকে দিকে শুরু হলো প্রার্থনা-যজ্ঞ। ডাক্তারদের টিম চেষ্টার ত্রুটি রাখলেন না অটলজীকে সুস্থ করে তুলতে।
এরপরেও বাঁচানো গেল না তাঁকে। ষোলো তারিখ বিকেলে থেমে গেল জীবনের গান।
কেউ কাঁদলেন, কেউ দুঃখপ্রকাশ করলেন, আবার কেউ বা বললেন বিজেপি নেতার মৃত্যুতে হাহাকার করা অর্থহীন। কেউ বা আরো দু কদম এগিয়ে বললেন, মরেছে বেশ হয়েছে – দুদিন বাদে পাবলিক এমনিতেই ভুলে যাবে!
সতেরো তারিখ শেষযাত্রায় বেরোলো অটলজীর পার্থিব শরীর। শববাহী গাড়ির পিছনে পিছনে টানা পাঁচ কিলোমিটার হাঁটলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, পনেরোটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আর হাজার হাজার মানুষ। লাইভ দেখালো দেশের প্রায় সব চ্যানেল। টানা দু ঘন্টা চললো নিরবিচ্ছিন্ন ধারাবিবরণী। তারপর মেয়ের হাতের আগুনে পার্থিব শরীর পুড়ে যাওয়ার সাথে সাথে মানুষ সত্যিই ভুলতে আরম্ভ করলো লোকটাকে।
কিন্তু সবাই বোধহয় এক রাস্তায় চলেন না। যারা চলেন না, তারাই ব্যতিক্রমী আর অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাই চ্যাম্পিয়ন। যেমন ওরা দু’জন।
ষোলোর সেই বিকালে ওরা টিভিতে কি দেখছিল, বা আদৌ টিভি দেখছিল কিনা বলা মুশকিল। কিন্তু (দু হাজার)চার সালের ভোটে হেরে যখন অটল বিহারি বাজপেয়ি রাজনৈতিক প্রস্থানের পথ তৈরি করছেন তখন একজনের বয়স দশ আর একজনের মোটে ছয়।
সতেরোর ওই দুপুরে যখন দিল্লির রাজপথ লোকে লোকারণ্য, তখন হয়তো ওরা নিভৃতে পরিশ্রম করে যাচ্ছে ওদের পরবর্তী লক্ষ্যে বা বিশ্রাম নিয়ে তৈরি হচ্ছে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য।
তারপর যখন ওরা নামলো, শুরু থেকে শেষ অব্দি একেবারে একতরফা ভাবে উড়িয়ে দিলো সব প্রতিপক্ষকে। গলায় ঝুললো সোনার মেডেল, বাজলো জনগণমন।
মানুষ সত্যি ভুলতে শুরু করেছিল অটলজীকে। ছেলে দুটো আবার মনে করিয়ে দিলো। এশিয়া লেভেলের প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রথম সোনা ওরা উৎসর্গ করলো প্রয়াত অটল বিহারি বাজপেয়িকে – মা-বাবা ছেড়ে এমন এক রাজনীতিবিদকে যার কার্যকাল ওরা জ্ঞানত দেখেই নি।
বিস্মৃতির পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন বাজপেয়ি, এখন তিনি অমরত্বের দোরগোড়ায়। সত্যিই তো, ‘মানুষই দেবতা গড়ে’।
ঠিক বলেছেন বজরং – বাজপেয়ি আজ কোনো দলের নন, তিনি গোটা ভারতের।
নেতা-মন্ত্রীরা ‘হেডলাইন’ দিয়েছিলেন। বজরং-নীরজ দিলেন সিংহাসন – যে সিংহাসন দেবতার আর যার সামনে প্রতিনিয়ত উচ্চারিত নয় সেই অমোঘ কবিতা-
“হার নাহি মানুঙ্গা
রারহ নাহি ঠানুঙ্গা
কাল কি কপাল পার
লিখতা মিটাতা হুঁ….
গীত ন্যায়া গাতা হুঁ
মে গীত ন্যায়া গাতা হুঁ”
বি:দ্র:- বাংলার বুদ্ধিজীবিদের সাথে বজরং-নীরজের তুলনার চেষ্টা করবেন না প্লিজ।
এক, অলিম্পিকের কোয়ালিফিকেশন এবার হবে র্যাঙ্কিং আর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফলের ভিত্তিতে। কেন্দ্র বা ফেডারেশনের সেখানে কোনো হাত নেই।
দুই, বজরং-নীরজ টোকিওর সেরা বাজি। আর দুজনেই অলরেডি এমপ্লয়েড।