গুটিকয় লোক হিংসায় মত্ত কিন্তু মানুষই শেষ কথা বলবে দাবি উপরাষ্ট্রপতির

নয়াদিল্লি— “গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা বলবে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রথমে আনতে হবে শৃঙ্খলাবোধ।“ গতকাল নয়াদিল্লিতে ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় অন্ত্যোদ্বয় যোজনা’-র এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন উপরাষ্ট্রপতি তথা রাজ্যসভার চেয়ারম্যান মুপ্পাভারাপু ভেঙ্কাইয়া নাইডু।

উপরাষ্ট্রপতি বলেন, দলত্যাগ বিরোধী আইনের ব্যাপারে আমাদের সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। যখন-তখন দলবদল চলতে পারে না। বিভিন্ন আদর্শগত বা কর্মসূচির পার্থক্য থাকতেই পারে। প্রতিটা দলের উচিত অন্য দলের ইতিবাচক কাজগুলো লক্ষ্য করা। অধৈর্য হলে চলবে না। গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা বলবে।

উপরাষ্ট্রপতি বলেন, “মাথায় রাখতে হবে তিনটি ‘ডি‘— ডিসকাস, ডিবেট এবং ডিসিশন। ‘কন্সট্রাকশন’-এর পথে না হেঁটে ‘অবসট্রাকশন‘ এবং ‘ডেসট্রাকশন’-এর পথে হাঁটলেই মু্স্কিল।“ সিএএ-র প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “অধিকাংশ লোক আইন মেনে চলেন। গুটিকয় লোক হিংসার আশ্রয় নেয়। দূর্ভাগ্যবশত কিছু দল গায়ের জোরে কিছু করার চেষ্টা করছে। প্রচারমাধ্যমের একাংশ তাদের সাহায্য করছে। কিন্তু যেটা প্রয়োজন, তা হল সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে বিতর্ক। সংসদেও সে কথা বলেছি। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রথমে আনতে হবে শৃঙ্খলাবোধ।“

উপরাষ্ট্রপতি বলেন, “সিএএ নিয়ে হইচইয়ে তিনটি ‘সি’ ‘ক্যারেকটার‘, ‘কন্ডাক্ট‘, ‘ক্যাপাসিটি‘, ‘ক্যালিবার’ যেন হারিয়ে গিয়েছে। এসবের বদলে দেখা দিচ্ছে আর এক ‘সি’— ক্রিমিনোলজি। ভারত বিশ্বাস করে সর্বজন সুখায়— হ্যাপিনেস ফর অল, বসুধৈব কুটুম্বকম, শেয়ার অ্যান্ড কেয়ার। দীনদয়াল উপাধ্যায় তাই কৃষক থেকে দলিত— ওঁদের মানোন্নয়নের ওপর বেশিকরে জোর দিতে বলেছিলেন। তাঁর নিরন্তর উন্নয়নের বাণীর কথা এখন বাস্তব ক্ষেত্রে রূপায়ণের কথা বলছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। ব্যবস্থাপনায় শ্রমিকদের অংশগ্রহণের উপযোগিতার ওপর জোর দিতে হবে।“

দেশের নানা স্থানের অপরিচিত নায়কদের (আনসাং হিরো) খুঁজে বার করে স্বীকৃতি জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর জন্য তৈরি হয়েছে ইন্ডিয়ান সোস্যাল রেসপনসিবিলিটি নেটওয়ার্ক (আইএসআরএন)।
যাঁরা কোনওক্রমে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে, তাদের পাশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ প্রভৃতি হরেক উপায়ে নিষ্ঠাভরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন যাঁরা, তাঁদের অনেকে আজ নয়াদিল্লিতে উপরাষ্ট্রপতির এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। লক্ষ্য সমাজের অন্ত্যবাসীদের যাঁরা উদয়ের পথ দেখাচ্ছেন, তাঁদের অনুপ্রেরণাদান।

আজকের সমাবেশে আইআরএসএন-এর চার খন্ডের সঙ্কলনের প্রথম প্রকাশ করেন উপরাষ্ট্রপতি।
উদ্বোধনী ভাষণ দেন আইআরএসএন-এর উপাধ্যক্ষ তথা রাজ্যসভার সাংসদ এবং আইসিসিআর-এর সভাপতি বিনয় সহস্রবুদ্ধে। তিনি বলেন, ভারতীয়দের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন ধরে ঔপনিবেশিক এবং ইওরোপীয় চিন্তায় ডুবে থাকতেন। স্বাধীনতার পর দীনদয়াল উপাধ্যায় একটা অন্য পথ, অন্য জীবন-চিন্তন উপহার দিলেন। গান্ধীজী, রামমোহন লোহিয়ার মত সমাজের অন্ত্যের মানুষকে (লাস্ট পার্সন অফ দি সোসাইটি) দিশা দেখানোর কথা বললেন। দীনদয়ালজীর জন্মশতবর্ষ ২০১৭-তে তাই শুরু হয়েছিল আইএসআরএন-এর কর্মকান্ড।

আইএসআরএন-এর সিইও সন্তোষ গুপ্তা বলেন, “২ বছর তিন মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ চলেছে। আমি অন্তত আটটি রাজ্যে নিজে এর জন্য শিবিরে গিয়েছি। ১৩টি বিষয়ভিত্তিক তালিকা করা হয়েছে সঙ্কলনে। ১৭টি কাজের ওপর হয়েছে ভিডিও ডকুমেন্টেশন। সব মিলিয়ে দুই শতাধিক ব্যক্তি জড়িত ছিলেন এর সঙ্গে। তথ্য যাচাইকরণের জন্য আমরা চালু করেছি অন্ত্যোদ্বয় ফেলোশিপ।“

আজ বক্তাদের মধ্যে ছিলেন মহেশচাঁদ শর্মা। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জানান আইএসআরএন-এর
অধ্যক্ষ ওমপ্রকাশ সকলেচা। গতকাল ছিল দীনদয়াল উপাধ্যায়ের প্রয়াণ দিবস। যেটা জাতীয়তাবাদীদের কাছে ‘সমর্পন দিবস’ হিসাবে পরিগণিত হয়। কেন্দ্রীয় সরকার চায়, প্রচারবিমুখ কর্মযোগীরা নতুন ভারতগঠনে এগিয়ে আসুন। হাত বাড়িয়ে দিন ভবিষ্যতের সোনার ভারত তৈরির কর্মযজ্ঞে।

—অশোক সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.