প্যাংগং লেকের দক্ষিণ এলাকার পর উত্তরাংশ দখল করে নিল ভারতীয় সেনা। ফিঙ্গার পয়েন্ট-৪ থেকে পিছু হটেছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (People Liberation Army)। ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, ১৫ জুন গালওয়ানের ১৪ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্টে দুই দেশের বাহিনীর সংঘর্ষের ঘটনার পরে ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ থেকে ৮ পর্যন্ত এলাকায় ঢুকে এসেছিল চিনা সেনাবাহিনী। ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ ও ফিঙ্গার পয়েন্ট ৫ এর মধ্যবর্তী খাঁজে তাঁবু খাটিয়ে আস্তানা গেড়েছিল তাঁরা। প্যাংগং লেকের দক্ষিণ তীরে নতুন করে অশান্তি তৈরির পরেই ভারতীয় বাহিনী আরও সতর্ক হয়ে যায়। উত্তর সীমান্তে যে চিন তাদের সেনা বাড়ানোর চেষ্টা করবে সেই আশঙ্কা আগেই ছিল। তাই ধীরে ধীরে ফিঙ্গার এলাকাগুলোতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এগোতে শুরু করে ভারতীয় সেনাবাহিনী।
অন্যদিকে, গত ৩০ জুন দুই দেশের সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পরে ঠিক হয়েছিল প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার চারটি এলাকা থেকেই নিজেদের বাহিনী সরাবে দুই দেশ। মাঝে তৈরি হবে একটা নিরপেক্ষ এলাকা বা বাফার জোন। এই চার বাফার জোন হল, গোগরা হট স্প্রিং, দেপসাং সমতলভূমি, গালওয়ান উপত্যকা ও প্যাঙ্গং সো লেক। এই চার এলাকার মধ্যে পিপি ১০ থেকে পিপি ১৩ রয়েছে দেপসাং সেক্টরে, পিপি ১৪ রয়েছে গালওয়ানে, পিপি ১৫ রয়েছে হট স্প্রিং এলাকায়, পিপি ১৭ ও পিপি ১৭এ রয়েছে গোগরায়। ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, গালওয়ান থেকে সামান্য সেনা সরালেও প্যাংগং লেকের দখল ছাড়েনি চিন। কারণ প্যাঙ্গং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগই তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড়ি এলাকায় দখল নিতে পারলে সেখান থেকে দৌলত বেগ ওল্ডি ও আকসাই চিন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকবে, প্যাংগং হ্রদের কাছ ঘেঁষেই অবস্থিত ফিঙ্গার পয়েন্ট ৪ তাই পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিয়েছিল চিনা সেনা। এবার ওই এলাকাতেই ফের আধিপত্য কায়েম করল ভারত।
চিনের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ভারতের সেনাই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেছে। আমার তাদের ফিরে যেতে বলছি। ভারতের সেনা সূত্রে খবর, লাদাখ সীমান্তে ভারতের প্রস্তুতি বুঝতে জল মাপার কৌশল নিয়েছে চিন সরকার। বিশেষ করে শনিবার রাতে ভারতীয় সেনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হারানোয় পাল্টা জবাব দিতে এখন মরিয়া চিনের সেনা। বুধবার চুমুর এলাকায় চিনের ৭-৮টি সামরিক বাহিনীর গাড়ি ঘোরাফেরা করতে দেখেই পাল্টা পদক্ষেপ করে ভারতীয় সেনা (Indian Army)। আর তাতেই পিছিয়ে যায় পিপলস লিবারেশন আর্মি। রাতেই ফের তারা ডেপস্যাং-সহ নিয়ন্ত্রণ রেখার সমান্তরালে থাকা দৌলত বেগ ওল্ডি রোডের বিভিন্ন অংশে আকাশ লক্ষ্য করে আলোর বাজি ছোড়ে। ওই এলাকায় ভারতীয় সেনার অবস্থান জানতেই এই কৌশল নিয়েছিল চিন সেনা।
চিনের এমন সীমান্তে আগ্রাসন নীতির তীব্র সমালোচনা করেছে আমেরিকা (USA)। গত শনিবার থেকে লাদাখে নতুন করে যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তার পিছনে চিনের প্ররোচনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আমেরিকা। পেন্টাগন চিনের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট মার্কিন কংগ্রেসে জমা দেয়। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতকে সামরিক ভাবে ঘিরে ঘিরতে ইতিমধ্যেই পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মায়ানমারে সেনা ঘাঁটি বানিয়েছিল বেজিং। পরের ধাপে তাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলার মতো দেশগুলিতেও সেনা ঘাঁটি ও সামরিক পরিকাঠামো গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বেজিং। পেন্টাগনের মতে সামরিক দিক থেকে ভারতকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরতেই এই পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে শিং জিনপিংয়ের সরকার।