Pegasus – Pathway Of Zero Hour Click

প্রযুক্তিকে যদি ব্যক্তি,  ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মী,ছাত্র , রাষ্ট্র, বিশেষত সমাজের কল্যাণে কাজে লাগানো না যায়, তবে প্রযুক্তি অর্থহীন হয়ে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতিতে  যেকোনও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে যেকোনও ব্যক্তির অস্ত্র ভাণ্ডারের সবচেয়ে বড় সম্পদ হল তথ্য।   তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবস্থা  এখন  শিক্ষা, ব্যবসা, রাজনীতি, বিবিধ সক্রিয়তা, গোয়েন্দাগিরি, গুপ্তচরবৃত্তি, যুদ্ধবিগ্রহ, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অপরাধ সংঘটনে ব্যাপকভাবে  ব্যবহৃত হচ্ছে। আইটি সফটওয়্যার পেগাসাস তথ্য সংগ্রহের জন্য এমনই একটি শক্তিশালী অস্ত্র। বর্তমানে যুদ্ধের সরঞ্জাম এবং শত্রুদের ধ্বংস করতে আইটি সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে। চীন, আমেরিকা, ইজরায়েল, কোরিয়া এবং ইরান ব্যাপকভাবে ব্যাবহার শুরু করেছে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক সফটওয়্যারের। ইজরায়েল এক কোটিরও কম লোকের একটি ক্ষুদ্র দেশ,চারপাশ ঘেরা বহু দেশ একে ধ্বংস করার সংকল্প নিয়েছে। কিন্তু ইজরায়েল শুধুমাত্র আপন একতা এবং উন্নত সামরিক অস্ত্র, উন্নত সফটওয়্যার ব্যবহার করে বেঁচে আছে। উদাহরণস্বরূপ, সে ইরানের পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলির ইউরেনিয়াম প্রসেসিং সেন্ট্রিফিউজ সিস্টেমে ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করে সিস্টেমটাকেই নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

The Big Picture on Pegasus is up today. Here’s the link for the same.

সুত্রপাত- ২০১৬ সাল , “পেগাসাস” ম্যালওয়ারকে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মানবাধিকার কর্মী আহমেদ মনসুর প্রথম বিশ্বের সামনে আনেন, যিনি এর অন্যতম টার্গেট হয়েছিলেন। এটি  একধরণের নিঃশব্দ ম্যালওয়ার আক্রমণ। তিনি বেশ কয়েকটি এসএমএস  পেয়েছিলেন যেগুলি তাঁর মনে সন্দেহ জাগায়, তাই তিনি এ
সেই এসমএসগুলিকে সিটিজেন ল্যাবের সাইবার এক্সপার্টদের কাছে  পাঠিয়েছিলেন। তাঁর সন্দেহ একদম ঠিক ছিল , এই মেসেজগুলির মধ্যে লুকিয়ে ছিল বিপজ্জনক ম্যালওয়ার যা অজান্তেই মোবাইলের মধ্যে থাকা সমস্ত গোপন তথ্যকে ক্লোন করে মূল আততায়ীকে প্রেরণ করতে পারে ও মেসেজ প্রাপক প্রায় নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুর (ভিক্টিম) ওপর নজরদারি করতে পারে।

*পেগাসাস কী?
বলা যায় পেগাসাস হ’ল একধরনের মডিউলার ম্যালওয়্যার। পেগাসাসের মাধ্যমে ভিক্টিমের ডিভাইস স্ক্যান করার পরে অপর প্রান্তে থাকা কেউ  ব্যবহারকারীর মেসেজ এবং মেল পড়তে পারে, কল-এ আড়ি পাততে পারে, অটোমেটিক স্ক্রিনশট ক্যাপচার করতে, লগ প্রেসকরতে পারে, ব্রাউজারের ইতিহাস, কন্ট্যাক্ট লিস্ট এবং আরও অনেক কিছু পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় এক্সটেনশন মডিউলগুলি ইনস্টল করে। পেগাসাস  এনক্রিপ্ট করা অডিও স্ট্রিমগুলি শুনতে এবং এনক্রিপ্ট করা মেসেজ পড়তে পারে। এমনকি যদি ৬০ দিনের মধ্যে টার্গেটেড ভিক্টিমের ডিভাইসের সঙ্গে বা Command and control server এর সঙ্গে পেগাসাস স্পাইওয়্যারটির যোগাযোগ না হয় , তাহলে স্পাইওয়্যারটি আপনাআপনিই নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

*পরবর্তী ঘটনাক্রম ও বর্তমান পরিস্থিতি:
সাইবার সিকিউরিটি এজেন্সির দ্বারা ফাঁস হওয়া ডেটাবেসে ৫০,০০০-এর বেশি ফোন নং পাওয়া গেছে।প্রথম এই ফোন নম্বরগুলির সন্ধান পায় প্যারিস ভিত্তিক সংস্থা ফরবিডন স্টোরিজ ও আ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাইবার বিশেষজ্ঞরা তাঁদের ল্যাবে মানবাধিকার কর্মী (এইচআরডি) এবং বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অসংখ্য মোবাইল ডিভাইসকে নিবিড়ভাবে ফরেনসিক বিশ্লেষণ করেন। স্পাইওয়্যার- এর আক্রমণকে কেন্দ্র করে আ্যমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন‌ প্রকাশ করে , যেখানে বলা হয়, ২০১৪ থেকে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৪০০টি ফোনে পেগাসাস দ্বারা সংগঠিত ম্যালওয়ার আ্যটাক হয়েছে ,এদের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ” জিরো ক্লিক আ্যটাক” । সর্বশেষ ম্যালওয়ার আ্যটাকটি হয়েছে ১৪/০৬/২০২১ , আইফোন ১২ ( Running Patched OS).। ২০১৬ সালের পেগাসাস-এর প্রথম ভার্সনের প্রকাশ ঘটে।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ওমর রাদি নামক এক ব্যক্তির ফোনের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে দেখে তাঁর ফোনটি gnyjv1xltx.info8fvhgl3.urlpush [.]  net ডোমেনে  প্রবেশ করে যা baramije[.]net  থেকে পুনর্নির্দেশ করা হয়েছিল। baramije[.]net  urlpush [.]net  এর একদিন আগে রেজিস্ট্রার হয়েছিল এবং ওপেন সোর্স টেক্সটপ্যাটার্ন সিএমএস ব্যবহার করে  ডিকয়ে ওয়েবসাইট স্থাপন করা হয়েছিল।এই পদ্ধতিকে বলা হয় স্পিয়ার ফিশিং। “Bridge Head ” প্রক্রিয়া যা পেগাসাস নির্ধারণের অংশবিশেষ, ওমর রাদির ফোনে 11 ফেব্রুয়ারী 2019 এ প্রথম দেখা গেছিল।   লক্ষ করা দরকার প্যেগাসাস ইনস্টলেশন সার্ভার দ্বারা একটি ইনডেক্সড ডিবি ফাইল তৈরি করার 10 সেকেন্ড পরে এবং সাফারি দ্বারা  ফেভিকন এন্ট্রি রেকর্ড করার পর , এক মিনিটেরও কম সময়ে একটি “roleaboutd” প্রক্রিয়া প্রথম দেখা যায়।২০১৯ -এর ১৩ ই সেপ্টেম্বর ওমর রাদির ডিভাইসটি আবার কাজে লাগানো হয়। কিছুক্ষণ পরে  একটি “বিএইচ” প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রায় এই সময়ে com.apple.softwareupdateservicesd.plist ফাইলটি আপডেট করা হয়েছিল। একটি “msgacntd” প্রক্রিয়াও চালু হয়েছিল। ঠিক একইভাবে ২০১৮ তে মতি মনজিব নামক এক ব্যাক্তির ফোনেও স্পাইওয়্যারের সংযুক্তিকরণের পর Bridge Head-এর সঙ্গে আরও ২ টি প্রসেস – পিএসসিডি ও এফএমএলডি যুক্ত হয়।
সাইবার হাইজিন ইএসইএম হ্যাক থেকে রক্ষা করতে পারে। কিন্তু যখন পেগাসাস একজনের ফোনের অপারেটিং সিস্টেমের দুর্বলতাকে কাজে লাগায়, তখন কোনও নেটওয়ার্কের বাইপাসকে বন্ধ করার মতো কিছুই থাকে না।  ডিভাইসটিকে কোনও ডিজিটাল সাইবার ল্যাবে স্ক্যান না করা পর্যন্ত একজন এই ধরণের সাইবার আ্যটাক সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন না।পুরোনো  হ্যান্ডসেট থেকে  ফাইল ম্যানেজারের মাধ্যমে কল এবং ডেটাগুলিকে আ্যলাওয়ের  অনুমতি দেওয়া হলেও অবশ্যই ডেটা এক্সপোজারকে সীমাবদ্ধ করবে হবে। অতএব, সবচেয়ে ভাল হল,  ডিভাইস নির্মাতাদের থেকে পাওয়া প্রতিটি অপারেটিং সিস্টেমকে টাইম টু টাইম আপডেট রাখা, তবে সংক্রমণের ঝুঁকিকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায় না । এছাড়াও, ইমেল এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য ব্যবহৃত অ্যাপ বা  বিকল্প ডিভাইসগুলি ঝুঁকির মধ্যে থেকেই যায়, যদি না কেউ এই সমস্ত প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি সম্পূর্ণরূপে আপডেট করে বা এনক্রিপটেড রাখে। সামগ্রিকভাবে পেগাসাস সিস্টেম স্থাপনে ১৫  সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। প্রথম সপ্তাহে, গ্রহণযোগ্যতা পরীক্ষা পদ্ধতি (এটিপি) এবং যথাযথ পরীক্ষার পর  এনএসও গ্রুপ প্রথমে  ব্যবহারকারীর পরিচয় নিশ্চিত করে এবং ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক (আইএমওডি) থেকে ছাড়পত্র পায়। আইএমওডি থেকে ‘সার্টিফিকেট’ এবং ‘অনুমোদনের’ অভাবে, এনএসও গ্রুপ এবং একজন গ্রাহকের মধ্যে স্বাক্ষরিত যেকোনও চুক্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে কারণ কোম্পানিটিকে তার প্রযুক্তির লাইসেন্স দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না এমন কোনও দেশ বা সংস্থাকে যা ক্ষতির কারণ হতে পারে। পরবর্তী ছয় সপ্তাহের মধ্যে, সরঞ্জাম অধিগ্রহণ, সিস্টেম এককীকরণ এবং স্থানীয় নেটওয়ার্ক এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা হয়। এর জন্য সিস্টেম টেস্টিং এবং হার্ডওয়্যার ইনস্টলেশন করা হয় । তারপরে, ডিভাইস পোর্টিং প্রক্রিয়া শুরু হয়, যা সিস্টেম এর মোডকে  অনুসরণ করে। এনএসও গ্রুপ তার গ্রাহকের প্রযুক্তিগত কর্মীদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেয়, যাতে তারা খুব সহজে এই সফটওয়্যার পরিচালনা এবং সাধারণ রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এবং সম্পূর্ণ লাইসেন্স ফি প্রদান করা হয়ে গেলে, প্যেগাসাস সিস্টেম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।

২০১৯-এর অক্টোবরে ফেসবুকের মালিকানাধীন সংস্থা হোয়াটসঅ্যাপ জানায়, চারটি মহাদেশের প্রায় ১৪০০ জনের মোবাইল পেগাসাসের মাধ্যমে হ্যাক করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কা গাঁন্ধী ভদোরা, এনসিপি-র প্রফুল প্যাটেল, ভীমা কোরেগাঁও মামলার সঙ্গে যুক্ত একাধিক সমাজকর্মী, আইনজীবী ও সাংবাদিক। নিরাপত্তার স্বার্থে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে পুলিশ, গোয়েন্দা বা তদন্তকারী সংস্থাকে ফোনে বা  কম্পিউটারে আড়ি পাতার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ দাবি করে, মে ও সেপ্টেম্বর মাসে তারা ভারত সরকারকে জানিয়েছিল, ভারতে ২০ জনের বেশি মানুষের মোবাইল হ্যাক হয়েছে। এ ছাড়া, ১২১ জনের মোবাইলে স্পাইওয়্যার হামলা হয়েছে।কেন্দ্রের ১০টি সংস্থার হাতে এই ক্ষমতা রয়েছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রের বা রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে এর জন্য অনুমতি নিতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রে ক্যাবিনেট সচিব ও রাজ্যে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি অনুমতির বিষয়টি পর্যালোচনা করে। তবেই তা ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। মোদী সরকার জানিয়েছে, ব্যক্তি পরিসরের মৌলিক অধিকারের প্রতি সরকার দায়বদ্ধ। নির্দিষ্ট কারও উপরে সরকারি নজরদারির অভিযোগ ভিত্তিহীন। ফোনে আড়ি পাতা, হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে নজরদারিতে সরকারি অনুমতি লাগে। আইন মেনেই ফোনে আড়ি পাতা হয়।২০১৯-এ লোকসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে প্রশ্ন করা হয়েছিল, মোদী সরকার কি পেগাসাস ব্যবহার করে? তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছিলেন, ফোনে আড়ি পাতার জন্য ‘বেআইনি কোনও নির্দেশ’ দেওয়া হয়নি। তবে মন্ত্রী জানান, সরকার নাগরিকদের ব্যক্তিগত পরিসর ও গোপনীয়তার প্রতি দায়বদ্ধ। নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারি সংস্থাগুলিকে কারও ফোনে আড়ি পাততে হলে নির্দিষ্ট প্রোটোকল মেনে শীর্ষস্তরের অফিসারদের অনুমতি নিতে হয়।

প্রমাণহীন , কিন্তু শুধুমাত্র গেল গেল রব আর সাজানো গল্প দিয়ে বিরোধিতায় নেমেছে কংগ্রেস। তাদের ইউপিএ সরকারের সময়ে  কিছু ঘটনা স্মরণ করালে আশা করি মিনি পেগাসাস-এর নিদর্শন পাওয়া যাবে। দেশ কি নীরা রাদিয়া টেপ মামলার কথা ভুলে গেছে? রিপোর্ট অনুসারে, সিবিআই সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল যে  কর্পোরেট লবিস্ট নীরা রাদিয়া, যিনি  মোবাইল ব্যান্ডউইথ লাইসেন্স ফিক্সিং এর অভিযোগে অভিযুক্ত’ ছিলেন, তাঁর কাছে  ৫৮৫১  কল রেকর্ডিং রয়েছে । ট্যাপিংয়ের জন্য সেই অনুমোদনগুলি কি উচ্চ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এসেছিল, তার কি গোপনীয়তা লঙ্ঘন করেছিল বা ভারত সরকারের নির্ধারিত সীমার মধ্যে ছিল? ২০১০-১১ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কার্যালয়ে শ্রবণশক্তির জন্য লাগানো বাগগুলির কথা কি কেউ ভুলে গেছেন? সরকারের উচ্চ
আধিকারিকদের কাছ থেকে অনুমোদন ছাড়াই, সরকারী বা আনুষ্ঠানিকভাবে এ জাতীয় বাগ লাগানো  সম্ভব ছিল কি? এই প্রশ্নগুলির  উত্তর প্রাপ্য আমাদের সকলের। পুরো কাহিনীর আরও মর্মান্তিক দিক হ’ল যেভাবে বর্তমান জাতীয়তাবাদী ভারত সরকারকে বিপদগ্ৰস্ত করে তোলার জন্য কিছু বিদেশী নিউজ চ্যানেল গল্পটিকে ঘৃণ্যভাবে সাজিয়েছে, যদিও গল্পটির সত্যতা শুরু থেকেই সন্দেহের মধ্যে রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, আল জাজিরা ২০ শে জুলাই একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল যেখানে, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীকে পেগাসাস স্পাইওয়্যার কেলেঙ্কারির ‘ জন্য ‘দেশদ্রোহের’ অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। দেশদ্রোহ? গত সাত বছরে ভারতের জাতীয় সুরক্ষার জন্য এত বেশি কাজ করেছেন যিনি, সেরকম একজন প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে এটা বলা কি সঠিক ? আদর্শগতভাবে, আল জাজিরার বিরুদ্ধে ভারত সরকারের এক মিলিয়ন  ডলারের মামলা দায়ের করা উচিত এবং ভারতে তাদের প্রচার  নিষিদ্ধ করা উচিত। আল জাজিরার ভাষা, ইসলামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রতি তাদের সহানুভূতি সর্বজনবিদিত। মিশরে চরমপন্থী সংগঠন মুসলিম জনগোষ্ঠীর পক্ষে আল জাজিরার  সমর্থন এবং তার জেরে আল জাজিরার বিরুদ্ধে মিশর সরকার যে অবস্থান নিয়েছিল তাও সুপরিচিত। আল জাজিরার মালিক, অর্থাৎ কাতার সরকারের বিরুদ্ধে প্রায়শই তালেবান, হামাস বা উগ্ৰ মুসলিম  জনগোষ্ঠীর মতো উগ্রবাদী সংগঠনগুলিকে না নানারকম সহায়তা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। মিশর সরকার এবং সৌদি সরকার উভয়ই অতীতে আল জাজিরার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলিতে তার প্রচার বন্ধ করতে বাধ্য করেছিল। পশ্চিম এবং মধ্য প্রাচ্য ভিত্তিক এই নিউজ চ্যানেলগুলির একাংশ বারবার ভারতের প্রযুক্তিগত সাফল্যকে ঠাট্টা করে, যদিও ভারত সরকারের এতে কিছু যায় আসে না।
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেকের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার, গঠনমূলক সমালোচনায় অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে, তবে কেন্দ্রের উচিত কিছু স্ট্যান্ডেলোন নিউজ-পোর্টাল এবং তাদের  তহবিলের উৎস নিয়ে তদন্ত করা ,  সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ঠিক কোথা থেকে তাদের অর্থ আসছে তার জানা। বিদেশের এনজিওরা কি চুপচাপ দেশের অভ্যন্তরে পরিবেশ বিঘ্নিত করতে চায় এবং পরিবেশ বিঘ্নিত করার জন্যই কি এই পোর্টালগুলির কয়েকটি গড়ে উঠেছে?নিউজক্লিকের  তহবিলে বিদেশী নেভিল রায় সিংহমের কাছ থেকে অর্থ জোগানের অভিযোগ উঠেছে, যাঁর কাছ থেকে এই পোর্টালটি  ২০১৮-২১ অর্থবছরে ৩৮ কোটি ফান্ডিং পেয়েছিল, এবং চীনের কমিউনিস্ট পার্টির  সঙ্গে তাঁর সংযোগ রয়েছে। এসবই এই ধরনের  পোর্টালগুলির স্বতন্ত্র উদ্দেশ্য সম্পর্কে গুরুতর সন্দেহ জাগিয়ে তোলে।জানা গিয়েছে, বুধবারই এনএসও গ্রুপের একাধিক অফিসে হানা দিয়েছেন ইজরায়েল সরকারের আধিকারিকরা। ফরাসী রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাঁক্রন পেগাসাস মামলার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ফরাসি সংবাদপত্র লা মঁদের মতে, রাষ্ট্রপতির ফোনটিও পেগাসাস ভাইরাসের সম্ভাব্য শিকার হয়েছে। বুধবার ফরাসী প্রধানমন্ত্রী জিন কাস্টেক্স বলেছেন, রাষ্ট্রপতি এই বিষয়ে সবিস্তার তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।ফরাসী রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নামও ১৪ জন বর্তমান বা প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যারা কুখ্যাত ইসরায়েলি স্পাইওয়্যার সংস্থা ‘এনএসও গ্রুপ’-এর গ্রাহকদের দ্বারা হ্যাকিংয়ের জন্য টার্গেটড। এনএসও গ্রুপের এক মুখপাত্র ইজরায়েলি একটি নিউজ ওয়েবসাইটকে জানিয়েছেন, ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিকরা তাঁদের অফিসে এসে কর্মীদের জেরা করেন। তিনি বলেছেন, সংস্থা ইজরায়েল সরকারের কাছে কোনও কিছু গোপন করেনি। অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে আমরা কাজ করছি। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, তদন্তে উঠে আসবে সংস্থার বিরুদ্ধে মিডিয়াগুলিতে যা যা অভিযোগ উঠেছে সব মিথ্যা।ভারত একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র। যা গোপনীয়তার অধিকারকে তার সমস্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসাবে নিশ্চিত করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রেখে, এটি ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষা করতে এবং সামাজিক মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি থেকে তাদের সুরক্ষার জন্য ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল, 2019 এবং তথ্য প্রযুক্তি (ইন্টারমিডিয়েট গাইডলাইনস এবং ডিজিটাল মিডিয়া কোড অফ কন্ডাক্ট) বিধি, 2021 প্রবর্তন করেছে “

সরকার বলে,  “মৌলিক অধিকার হিসাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি হ’ল ভারতের গণতান্ত্রিক স্থাপনার মূল ভিত্তি। আমরা সর্বদা উন্মুক্ত কথোপকথনের সংস্কৃতির উপর জোর দিয়ে সচেতন নাগরিক হওয়ার চেষ্টা করেছি।”
তাই সরকারের উচিত খুব শীঘ্রই রেগুলেশন এনে পোর্টালগুলিকে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করা।
আর অন্যদিকে পেগাসাস-এর ঘটনার সত্যতা যাচাই। এর জন্য আপাতত সুপ্রিম কোর্টই পথ দেখাতে পারে , যেখানে কিছু বিশেষজ্ঞ সাইবার বিশেষজ্ঞ তাঁদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রমাণের মাধ্যমে সত্যিটা তুলে ধরুন । অবশ্য ২ জন বরিষ্ঠ সাংবাদিক সুপ্রিম কোর্টে  পেগাসাস সম্পর্কে মামলা করেছেন , যদিও তাঁদের উদ্দ্যেশ্য সরকারকে যে কোনও উপায়ে বিশ্বের সামনে অপদস্ত করা।

গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারকে দায়ী না করে প্রযুক্তিকে ব্যক্তি স্বার্থের উর্ধ্বে রেখে সমাজজীবনের কল্যাণকর কাজে লাগান , অসুস্থ পরিবেশ তৈরির জন্য নয়।

সপ্তর্ষি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.