শিক্ষক নিয়োগে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগের মামলায় শুক্রবার কলকাতায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর বিশেষ আদালতে হাজির করানো হয় ধৃত পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অর্পিতা মুখোপাধ্যায়কে। শুনানি চলাকালীন অর্পিতার আইনজীবী তাঁর মক্কেলের জন্য জামিনের আবেদন করেননি। তবে পার্থের জামিনের আবেদন জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস। অন্য দিকে, ইডির তরফে সওয়াল করেন আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি এবং ভাস্করপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়। পার্থের আইনজীবী ও ইডির আইনজীবীদের মধ্যে সওয়াল-জবাব দেখে নেওয়া যাক এক নজরে:
• পার্থের আইনজীবী— পার্থের বাড়ি থেকে এমন কিছু উদ্ধার হয়নি যা দিয়ে প্রমাণ হয়, তিনি অপরাধী। তাঁর বাড়ি থেকে কোনও টাকাও উদ্ধার হয়নি। তিনি কোনও অপরাধের সঙ্গেও যুক্ত নন। তা হলে তাঁকে হেফাজতে রাখার অর্থ কী? ওরা (ইডি) বলছে, পার্থ তদন্তে সহযোগিতা করছেন না। তিনি হয়তো তদন্তে সহযোগিতা করছেন না, তার কারণ তিনি সহযোগিতা করতে অপারগ। ৩১টি জীবনবিমার তত্ত্বও ‘হাফ বেকড’ (অর্ধপাচ্য)। বিমার নথি সঠিক নয়। কারণ, বিমায় সাধারণত মা, বাবা, স্বামী, স্ত্রী, ছেলে বা মেয়েকেই নমিনি করা হয়। সেই অর্থে কোনও সম্পত্তি পার্থের নামে নেই। অর্পিতার বাড়ি থেকে কিছু উদ্ধার হলে তার সঙ্গে পার্থের কী সম্পর্ক?
• ইডির আইনজীবী— অর্পিতার জীবনবিমায় কেন পার্থের নাম রয়েছে, তা বিমা সংস্থা বলতে পারবে। উদ্ধার হওয়া নথিতে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, শুধু তা নিয়েই কথা বলছি।
• পার্থের আইনজীবী— যৌথ অংশীদারিত্বে কেনা সংস্থার নথি উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু ওই সম্পত্তি যে পার্থের, তা প্রমাণিত নয়। সম্পত্তি কার, তা শুধু দলিল দিয়ে প্রমাণিত হয় না। দলিলের সত্যতাও প্রমাণ করা জরুরি।
• ইডির আইনজীবী— ‘এমএস অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থার খোঁজ মিলেছে। ওই সংস্থার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে পার্থ ও অর্পিতার আত্মীয়দের মধ্যে। এই সংস্থাটি অর্পিতার বেলঘরিয়ার ফ্ল্যাটের ঠিকানা রয়েছে। যে ফ্ল্যাট থেকে টাকার পাহাড় উদ্ধার হয়েছে। এ ছাড়াও ৫০টি সন্দেহজনক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
• পার্থের আইনজীবী— পার্থকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি বিধায়ক পদ থেকেও ইস্তফা দিতে রাজি। উনি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছেন না। পার্থ অসুস্থ। তাঁর বয়স হয়েছে। এমসের রিপোর্টেও রোগের কথা রয়েছে। শর্তসাপেক্ষে তাঁকে জামিন দেওয়া হোক।
• ইডির আইনজীবী— যে ব্যক্তি অ্যারেস্ট মেমোয় মুখ্যমন্ত্রীর নাম লেখেন, তিনি প্রভাবশালী নন, এ কথা মানা যায় না। যা সব নথি উদ্ধার হয়েছে, সে ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। পার্থকে ১৪ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার আবেদন জানাচ্ছি আমরা।