জঙ্গি নাশকতার আতঙ্কে ভুগছে উপত্যকা, ঘরে খাবার-জ্বালানি-টাকা মজুত রাখছেন জম্মু ও কাশ্মীরের আম জনতা

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সফরের পরেই গত ২৫ জুলাই জম্মু ও কাশ্মীরে মোতায়েন হয়েছেন ১০০ কোম্পানি অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার অতিরিক্ত আধা সামরিক বাহিনী। এরপর থেকেই জম্মু ও কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ আন্দাজ করেছিলেন বড়সড় কিছু একটা হতে চলেছে। সেই ভাবনাতেই সিলমোহর বসিয়েছে মাঝপথে আচমকা অমরনাথ যাত্রা বন্ধ হয়ে যাওয়া।

জঙ্গি হামলার আতঙ্কে ভুগছেন উপত্যকার আম জনতা। নাশকতা কতটা বড় হবে আন্দাজ নেই। তবে ইতিমধ্যেই নিজেদের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ। মুদিখানার জিনিসপত্র থেকে শুরু করে নানান খাবারদাবার, জ্বালানি সবই ঘরে মজুত রাখছেন তাঁরা। নিত্য প্রয়োজনীয় কোনও জিনিস যেন বাদ না থেকে যায় থেকে সে দিকে কড়া নজর রয়েছে গৃহকর্তা এবং কর্ত্রীদের। লম্বা লাইন লেগেছে এটিএম-এর বাইরেও। যাই হোক না কেন, টাকার বন্দোবস্ত তো রাখতেই হবে।

টুইট করে পিডিপি নেত্রী মেহেবুবা মুফতিও লিখেছেন, “শ্রীনগরের রাস্তায় লোকজন ছুটে বেড়াচ্ছে। পেট্রল পাম্প, এটিএম-এ লাইন দিচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করছে। ভারত সরকার কি কেবল অমরনাথের যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। আর উপত্যকার সাধারণ মানুষকে তাঁদের নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদেরকেই করে নিতে হবে?” টুইট করে কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওমর আব্দুল্লাও। তিনি লিখেছেন, “পহেলগাঁও এবং গুলমার্গের হোটেল থেকে জোর করে পর্যটকদের বের করে দেওয়া হচ্ছে। সরকারি বাসে চাপিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। যদি অমরনাথ যাত্রার ক্ষেত্রেই কেবল নাশকতা আশঙ্কা থাকে তাহলে এই জায়গাগুলো খালি করে দেওয়া হচ্ছে কেন?” পাশাপাশি উপত্যকায় আসলে কী হতে চলেছে তা নিয়ে রাজ্যপালই বা প্রকাশ্যে স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওমর আবদুল্লা।

শুক্রবার জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই সাংবাদিক সম্মেলনেই লেফেটেন্যান্ট জেনারেল ধিলোঁ জানিয়েছেন, অমরনাথের যাত্রা পথে উদ্ধার করা হয়েছে একটি ল্যান্ডমাইন, যেখানে পাকিস্তান অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির ছাপ রয়েছে। এছাড়াও টেলিস্কোপিক ভিউয়ের ব্যবস্থা সম্পন্ন একটি এম-২৪ আমেরিকান স্নাইপার রাইফেলও পাওয়া গিয়েছে। এর থেকে এটা স্পষ্ট যে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন অমরনাথ যাত্রীদের উপর বড়সড় হামলার ছক কষেছিল। সম্ভবত সেই প্ল্যানে মদত ছিল পাক সেনাবাহিনীরও।

এরপরেই অমরনাথ যাত্রীদের উপত্যকা ছেড়ে বেরিয়ে আসার পরামর্শ দিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। যাঁরা অমরনাথ পৌঁছে গিয়েছেন, বা যাঁরা পথে রয়েছেন, সকলের উদ্দেশেই জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের পরামর্শ তাঁরা যেন নিজেদের প্ল্যান যত দ্রুত সম্ভব কাটছাট করে ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে যান। ১৫ অগস্ট পর্যন্ত চলার কথা ছিল যাত্রা। লেফটেন্যান্ট জেনারেল ধিঁলো জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ লোক অমরনাথ গিয়েছেন। কোনও বিপদ-আপদ হয়নি। তবে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটানোর বড়সড় ছক কষেছিল জঙ্গিরা। তাই নিরাপত্তার খাতিরে তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের মাঝপথেই যাত্রা শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন।

শুক্রবারের এইসব ঘটনার পর থেকেই উপত্যকা ছেড়ে যেতে শুরু করেছেন দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা। তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের জন্য শ্রীনগর থেকে অতিরিক্ত উড়ানের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসন। টিকিট বাতিলের জন্য অতিরিক্ত টাকা না কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। গুলমার্জ এবং পহেলগাঁওয়ের বিভিন্ন হোটেল খালি করে দেওয়া হচ্ছে। বাস কিংবা বিমানের মাধ্যমে তাঁদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে সমতলে। এর পাশাপাশি আতঙ্ক ছড়িয়েছে জম্মু ও কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের মধ্যেও। তাঁদের ধারনা উপত্যকা থেকে সংবিধানের ৩৫-এ ধারা এ বার সরিয়ে নেবে কেন্দ্র। সংবিধানের এই ধারায় জম্মু ও কাশ্মীরের স্থায়ী নাগরিক হওয়ার শর্ত লেখা রয়েছে। যদিও এমন হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই এ কথা জানিয়ে সকলকে আশ্বস্ত করেছেন রাজ্যপাল সত্য পাল মালিক।

অমরনাথ যাত্রায় নাশকতার ছক ছিল, এ কথা ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রকাশ্যে আনার পরেই শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে যান পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, শাহ ফয়জল, ইমরান আনসারি, সাজ্জাদ লোনের মতো নেতারা। বৈঠকে রাজ্যপাল সত্য পাল মালিক জানান, নিরাপত্তার বিষয়ের সঙ্গে অন্যান্য প্রসঙ্গ টেনে কেবল আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীরে। পাশাপাশি জম্মু ও কাশ্মীরের সমস্ত রাজনৈতিক নেতাদের কাছে রাজ্যপাল আবেদন জানিয়েছেন, তাঁরা যেন গুজবে কান দিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হন। বরং উপত্যকায় শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.