রাতে দেওয়াল ঘড়ির ঘন্টা বাজতেই তাকিয়ে দেখি ২ টো বাজে। বাইরের ঝমাঝম বৃষ্টির আওয়াজ ছাড়া কিছুই কানে আসছে না। রাতে পালা করে আমরা চার জন গত দুই দিন ধরে এক ঘরেই ঘুমাচ্ছি। এই ঘরটায় দুই জনের বিছানায় চার জনের ঠাঁই করে নিয়েছি। ঘরে দুটো জানলা। একটা দক্ষিণ দিকে, আরেকটা পূর্ব দিকে। দক্ষিণ দিকের জানলাটা সবসময় বন্ধ রাখতে হয়। কারণ জানলা দিয়ে বাইরের দিকের রহমত চাচার চায়ের দোকান। সেখানে প্রায় বিভিন্ন বয়সের পুরুষের জটলা হয়। আমি গায়ত্রী চট্টোপাধ্যায়, মহাশ্বেতা সেনগুপ্ত, জ্ঞানদাসুন্দরী দাশগুপ্ত, মণিমেঘলা গঙ্গোপাধ্যায়। আমি, মহাশ্বেতা বাঙ্গালা সাহিত্যের এল.এ.-এর ছাত্রী। জ্ঞানদাদি, মণিদি আমাদের এক বছরের সিনিয়র, সায়েন্সের ছাত্রী। মেদিনীপুরের জমিদার বাড়ির কনিষ্ঠা কন্যা আমি। ইংরেজ শাসনের পর থেকে জমিদার বাড়ির কায়দা-কানুনে কিছু বদল এসেছে বই কি, নারী শিক্ষার উপর আরো বেশি সতর্ক হয়েছে সকলে। তবু আজও গ্রামবাঙ্গালার সব জায়গায় তার সুর পৌঁছায়নি। শুরু থেকেই আমার চোখের স্বপ্ন ছিল কলিকাতা শহরের ভিক্টোরিয়া কলেজে পড়ার। আমাদের কলেজ ১৪ বছরের পুরোনো হলেও বেশ নাম ডাক আছে বাঙ্গালার বাইরেও। স্নাতক স্তরের ছাত্রীদের জন্য এটি অন্যতম কলেজ। এই স্বপ্ন আমার কাছে কোনোভাবেই হাতছাড়া করার ছিল না। আমার জীবনে বিশেষ পুরুষ শুধুমাত্র একজনই, দীপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। আগামী দুর্গাপূজাতে উনি লন্ডন থেকে ডাক্তারি পাস করে ফিরছেন। অগ্রহায়ণ মাসেই আমাদের আশীর্বাদ। আমার বাবা নিজে একজন চিকিৎসক, তাই তাঁর বড় ইচ্ছা বিলেত ফেরৎ চিকিৎসক পাত্র না হলে কন্যাদান করবেন না। মেদিনীপুরের সম্ভ্রান্ত পরিবারের জ্যেষ্ঠ পুত্রের সাথে আমার বিয়ে স্থির হলো। আমি নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে গেলাম, তৈরী করতে লাগলাম নিজেকে। একজন দীর্ঘ, সুঠাম পুরুষকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা তো আমার অধিকার।
হঠাৎ তলপেটে খুব ব্যাথা শুরু হলো। আজ ঋতুচক্রের দ্বিতীয় দিন আমার। শুধু সিলিং ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকি কখন যে ভোর হবে, গাড়ি আসবে আমাদের। সবাই মিলে আমাদের বাড়িতে উঠবে। আজ তো বাঙ্গালা বনধ। তবু যেতেই হবে। কলেজ আবাসনে কোনো মহিলা নেই। সবাই ফিরে গিয়েছে নিজের বাড়ি। আমরা রেড ক্রসের গাড়িতে যাবো। কোনো চিন্তা নেই।
সকালের প্রাত্যহিক কাজ সেরে এসে দেখি হঠাৎ একটা শালিক পাখি জানলায় এসে জোরে ডাকতে শুরু করেছে, খেয়াল হলো ছ’টা বেজে গিয়েছে। এবার একটু চায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। হিটারের সুইচ অন করে দিলাম। দারোয়ান রঘুবীরদা গতকাল মহিলা আবাসন ছাড়ার আগেই আমাদের জন্য চা, চিনি, গুঁড়ো দুধ, বিস্কুট আর শুকনো চিঁড়ে, গুড় দিয়ে গিয়েছে। কিছু যদিও খেতে মন চায় না। সবার স্নান হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় দিন বলে আমি আর স্নান করলাম না। সব ব্যাগ সবাই ভালো করে দেখে নিলাম। জানিনা কবে কী’ভাবে আবার কলকাতাতে পড়তে আসবো!
ঘটনার সূত্রপাত ছয় বছর আগে থেকেই। ১৯৪০-এর ২৩ শে মার্চ মহম্মদ আলী জিন্নাহ লাহোর প্রস্তাবে মুসলিমদের জন্য আলাদা বাসভূমির পক্ষে প্রশ্ন করেন, গান্ধীজি সমর্থন করেন। বুঝলাম দেশ ভাগ হবে, যা কোনোদিন আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। আগে আমাদের অনেক প্রজা হিন্দু-মুসলিম একসাথেই কাজ করতো। এই দেশভাগের কথা ছড়াতেই অশান্তির আগুন জ্বলে ওঠে। এই বছর মার্চ মাসে যে ক্যাবিনেট মিশন ক্ষমতা হাত বদলের চুক্তি করতে আসে, শর্ত সাপেক্ষে কংগ্রেস সেটা মানলেও মুসলিম লীগ মানে না। বোম্বে থেকে জিন্নাহ বললেন, “১৬ ই আগস্ট মুসলিমরা প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস পালন করবে”। আজ সেই দিন। ২৮ শে এপ্রিল এই প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের ডাক দেবার পর থেকেই দেখছি এদের মিছিল শুরু হয়ে গিয়েছে। ১০-১২ দিন আগে তো খবরের কাগজে দেখলাম মুখ্যমন্ত্রী সোরোয়ার্দি বলেছেন যে মুসলমানদের একমাত্র কাজ হলো পাকিস্তান আদায় করা। কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করা যাবে না। কারণ ২৮ টার মধ্যে ২২ টা পুলিশ হেড কোয়ার্টারেই তো মুসলিম অফিসার, যাতে হিন্দুরা কোনো সাহায্য না পায়। এখন ভরসা শুধু হিন্দু মহাসভা। যে বাঙ্গালার সংস্কৃতি নিয়ে আমরা বেড়ে উঠেছি, সেটাই আজ বড্ড অচেনা লাগছে। আমরা আবার সংখ্যালঘু। একেই রমজান মাস, আর এরা ভোরের দিকেই আক্রমণ করে। আমি লাইব্রেরিয়ানের থেকে একবার “মুসলিম শরীফ” নিয়েছিলাম। তাই একটু আধটু জানি।
এই সব ঝামেলার জন্য পরীক্ষা সময়মতো হলেও মে মাস থেকে কিছু ক্লাস ঠিক মতো হচ্ছে না। দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই কারোর চোখে। পয়লা আগস্ট থেকেই বর্ধমান, মেদিনীপুর, যশোহরের মেয়েরা ধীরে ধীরে বাড়ি চলে গিয়েছে। অশান্তি তারপরই শুরু হয়ে যায়। রোজ সকালের দিকেই মুসলমানদের “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান” মিছিল যাচ্ছে আবাসনের সামনে দিয়ে। দক্ষিণের জানলাটা বন্ধ থাকে তাই রেহাই। এমনিতেই হিন্দু মেয়েদের উপর ওদের বড় লোভ। একদিন পুরো কলেজের মহিলা আবাসন ফাঁকা হয়ে গেলো। আমি শুধু যেতে পারলাম না ওদের দিকে দেখে। বাবাই পরামর্শ দিলেন সবাইকে নিয়ে একসাথে মেদিনীপুর চলে আসতে।
সাড়ে ছ’টা বাজতেই যেই না ব্যাগ নিয়ে নিচে নামবো ভাবছি, এমন সময় একদল হল্লা করতে করতে এগিয়ে এলো কলেজের মহিলা আবাসনের দিকে। আমরা ৪ জন ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি ঘরের দরজা বন্ধ করে জানলার একটা ভাঙ্গা কোণ থেকে দেখি প্রায় ২০-২২ জন ফেজ টুপিধারী, দাঁড়িওয়ালা যুবক, মাঝ বয়সী, ২ টো ১৪-১৫ বছরের ছেলে অপরদিকের করিডোর দিয়ে হেঁটে আসছে, হাতে লোহার শিক, চেন, রড, শাবল। আমার যেন মাথা থেকে সারা শরীর দিয়ে রক্ত পায়ের দিকে হিম হয়ে বয়ে গেলো। ওরা প্রতিটা ঘরের দরজায় পা দিয়ে লাথি মারছে যেগুলোতে তালা নেই। কমন বাথরুমেও গেলো দেখলাম।
হায় ভগবান! ওরা তো এবার আমাদের ঘরের দিকেই আসছে। আমরা পড়ার টেবিল দিয়ে দরজায় ঠেকা দিলাম। কারণ, তালা না দেখলেই ওরা ধাক্কা মারবে । দু’জনের রুম বলে দু’টো টেবিল ছিল। অন্যটাতে আমাদের ব্যাগ আর আমার হারমোনিয়াম তোলা। ঘরে নিজেদের বাঁচার মতো অস্ত্র বলতে আছে শুধু কাঁচি আর মাখন কাটার ছুরি। এই দিয়ে কি প্রাণ বাঁচাবো?
এবার অনেকগুলো পায়ের শব্দ শুনে টেবিলের নিচে পিছন দিকে লুকিয়ে পড়লাম। জ্ঞানাদি আর মণিদি খাটের তলায় চলে গেলো। সারা শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো, গুরুদেবের নাম করতে লাগলাম। এরপর সে কি আওয়াজ দরজায় লাথি মারার! ৫ মিনিটের মধ্যে ওরা দরজা ভেঙ্গে টেবিল সরিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়লো। ঢোকার সাথে-সাথেই আওয়াজ পেলাম জ্ঞানাদি, মণিদির আর্তনাদ আর চিৎকারের। টেবিলের পাশ থেকে মাথা বাড়িয়ে দেখি, খাটের তলা থেকে দু’জনকেই চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে ওরা বার করলো। এর মধ্যে আমিও ওদের নজরে পড়ে গেলাম। আমার দিকে দু’জন এগিয়ে এলো। ভয়ে নিজেই উঠে দাঁড়ালাম। মহাশ্বেতাও আমার পিছু নিলো। আমার সামনে মেহেন্দি লাগানো দাঁড়িওয়ালা, সাদার উপর রক্তাক্ত পাঞ্জাবী পরা লোকটাকে দেখে আমার গা ঘিনঘিন করে উঠলো। লোকটা হলুদ দাঁত বার করে বললো, “দ্যাখসস! আরও ২ খান মাল! ভাবসে আমাগো ফাঁকি দিয়া দিব।“
— “না, না। আমাদের ছেড়ে দিন। আমাদের কাছে যা টাকা আছে, নিয়ে যান” বলে আমি কাকুতি মিনতি করতে লাগলাম।
বিকট হাসতে হাসতে লোকটা এক হ্যাঁচকা টান দিয়ে আমার শাড়ীর সেফটি পিন ছিঁড়ে নিলো আঁচল থেকে। আঃ আঃ চিৎকার করতে গিয়ে দেখি ওরা মণিদির ব্লাউজ ছিঁড়ছে। এরপর সাহস করে আমি পাশের হিটারের তারটা নিয়ে ওই লোকটার গলায় জড়াতে গেলাম। লোকটা আরও যেন ক্ষেপে উঠলো। দুই হাত দিয়ে আমার হাত দুটো পিছন দিকে নিয়ে ঘুরিয়ে দিলো। ওই শক্ত হাতের চাপে আমার হাত ভেঙ্গে গেলো মনে হলো।
“এই মাইয়াটা বেশি ছটপট করতাসে। ডাগর চেহারা আসে বইল্লা বেশি তেজ ইডার। ইডার লগে বেশি মজা আইবো।” বলে আবার হাসতে লাগলো। আমি হাত সোজা করতে পারছিলাম না যন্ত্রণায়।
আমার শাড়ীটা এক টানে খুলে দিলো। আমি এতগুলো বাইরের লোকের সামনে সায়া ব্লাউজ পরে দাঁড়িয়ে রইলাম। ও শুধু আমার নয়, যেন এই কলেজের আব্রুতে হাত দিলো, যখন দেখলাম আমার গেরুয়া পাড় সাদা শাড়ীর ইউনিফর্মটা ঘর মোছার ন্যাতার মতো করে মাটিতে পড়ে আছে। আমি ওই অবস্থায় শাড়ীটা তোলার জন্য মাথা নিচু করতেই পিঠে হাত দিয়ে আমার সাদা রঙের ব্লাউজটা ছিঁড়ে দিলো পিছন থেকে। সঙ্গে নখের আঁচড়ও লাগলো। কোনোরকমে শাড়ীটা তুলে বুকে ঢাকা দিলাম। ঘরের ভিতর এখন প্রায় ৮-১০ জন লোক। আমাদের ৪ জনকে অর্ধ নগ্ন করে ফেলেছে ৬ জন মিলে। বাকি দুটো কিশোর ফ্যাল ফ্যাল করে আমার বক্ষবন্ধনীর দিকে তাকিয়ে আছে। আরেকটা লোক মণিদির সায়া ছিঁড়ছে। অন্য ঘর থেকে জানালা ভাঙ্গার আওয়াজ আমাদের চিৎকারে চাপা পড়ে যাচ্ছে।
এবার মণিদির সামনের লোকটা আমার সামনের লোকটাকে বললো, “শুনতেছো আব্দুল দেরি করো কেন্? শুরু কইরা দাও। হিন্দুস্তানকে ন্যাংটা করাইয়া ফেলো।” আব্দুল লোকটা এবার আমার সায়ার দড়িতে এক হ্যাঁচকা টান দিলো। আমি হাত দিয়ে কোথায় আড়াল করবো বুঝলাম না। বুকে না পেটের নিচে? সায়াটা ধরার চেষ্টাও বিফল হলো। নিম্নাঙ্গ পুরো অনাবৃত হয়ে গেলো। আমার গোপন অঙ্গে আবরণ দেখে লোকটা উল্লাস করে হাসতে লাগলো।
আমি ওই অবস্থাতেই বসে লোকটির পা ধরে বললাম ,”আমাদের ছেড়ে দিন, দয়া করুন। আমরা তো আপনার কোনো ক্ষতি করিনি। আমরা তো ছাত্রী।”
হাসতে হাসতে বললো, “না না, তোদের কি কইরা ছাইরা দিমু? তোরা তো হচ্ছিস গিয়া ভোগের জিনিস, আমাগো গণিমতের মাল। তার উপর তোরা হচ্ছস গিয়া কাফের। তোদের ন্যাংটা করা মানে হিন্দু ধর্মরে ন্যাংটা করা। কেন্ রে তোরা তো ন্যাংটা পুতুল খড়গ হাতে লইয়া দাঁড়ায়া থাকা মূর্তিরে পূজাও করস। তখন শরম লাগে না? আজ তোদের চাইর জনরে আমরা সবাই খাইয়া ছিবড়া বানাইমু। একটা কথা কইয়া দে, তবে দ্যাখি তোরে ছাইরা দিমু। এই বাসার বাকি মাইয়াগুলা কই?”
আমি বললাম, “আর কেউ নেই সত্যি বলছি। বিশ্বাস করুন, সবাই ফিরে গিয়েছে। শুধু আমরা চার জনই আছি। এবার ছেড়ে দিন আমাদের। আমরা কাউকে কিছু বলবো না।”
লোকটা আমার দুই গালে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় মারলো। আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লাম। জীবনে কেউ আমার গায়ে হাত তোলা তো দূর, অভিযোগ করেনি পর্যন্ত। এতটাই আদুরে ছিলাম আমি ।
হঠাৎ যন্ত্রণায় চোখ খুলে দেখি আমার উপর ওই লোকটা শুয়ে আছে। বক্ষবন্ধনীটাও নেই। পেটের নিচের ঋতুচক্রের আবরণটাও টেবিলের নিচে পড়ে আছে। সেটার আঁশটে গন্ধ সারা ঘর ছেয়ে গিয়েছে। এই জানোয়ারটার সামনে আমি আজ সম্পূর্ণ নগ্ন। হে ঈশ্বর! নিজেকে আমি দীপেন্দ্রর জন্য সাজিয়ে রেখেছিলাম, যত্ন করে রেখেছিলাম। চোখে ওকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল আমার!
ওই লোকটা নিজের পাজামা খুলে দিলো। কী কুৎসিত! ছিঃ ছিঃ! এটা দেখার আগে আমি মরে কেন গেলাম না? লোকটা এবার আমার স্তনে নোংরা দুর্গন্ধযুক্ত দাঁত দিয়ে কামড়ে দিলো। আমি যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম। এবার জোর করে আমার দু’পা ফাঁক করে ওর পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করালো আমার যোনিপথে। “আঃ আঃ মরে যাবো। ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও লাগছে” বলে চিৎকার করে উঠলাম। কিন্তু কে ছাড়ে আমায়? আরও হিংস্রতার সঙ্গে প্রবেশ করতে লাগালো আর বলতে লাগলো, “পুরো হিন্দুস্তানকে মাড়ালাম“। রাগে আমি আমার দু’হাত দিয়ে লোকটির মুখে আঁচড়ে দিলাম। একটুর জন্য আঙ্গুল ফস্কে গেলো, তাই চোখ দুটো গেলে দিতে পারলাম না। এবার আমার হেরে যাওয়া দেখে আরো বাকিরা হাসতে লাগলো। “যাই বল, হিন্দুর মাইয়াগুলান খুব মজাদার হয়। একটু পানি ছিটাইয়া দিলে আরও মজা পাওন যাইবো।” বলেই ডাকলো, “ইয়াকুব পানি লইয়া আয়।” একটি ছেলে এসে আমার টেবিলের উপর রাখা জলের জগ থেকে জল আমার উপর ঢালতেই আমি ওর গায়ে থুতু ছেটালাম। লোকটি আবার নিজের পুরুষত্ব দেখালো। নিজের বীর্যক্ষলণেরর পর চেঁচিয়ে ডাকলো, “এই রফিক মিঞা, আইয়া পড়ো একে একে সব। তোমাদের লগে ছাইরা দিলাম। কচি নতুল মাল ইডা, ইডারে খাও। আমি অন্য মাল দেইখ্যা আসি।” লোকটা মহাশ্বেতার দিকে এগিয়ে গেলো। ও নগ্ন হয়ে কাতরাচ্ছে। কে যেন ওর হাত-পা বেঁধে দিয়েছে। দড়িটা ওর সায়ারই, আরেকটা মনে হচ্ছে আমাদেরই জামাকাপড় মেলার দড়ি।
রফিক মিঞা এলো, তারপর কত জন এলো, মনে পড়ে না আর। এই ঘরেই তো ৮-১০ জন ছিল। এরপর অন্যান্য ঘর থেকে আসতে শুরু করলো। আমাদের চারটে দেহ ক্রমাগত ধর্ষণ করলো আর বলতে লাগলো, “তোদের হিন্দুদের ন্যাংটা পুতুল চোদাইলাম। তোদের দ্যাশরে চোদাইলাম।” হঠাৎ দেখি পোড়া গন্ধ আসছে। আমরা যেখানে পড়ে আছি, সেখানে শুধু রক্ত। পোড়া গন্ধ আর রক্তের গন্ধ মিলিয়ে ওরা পাকিস্তান বানালো যেন।
এরপর মণিদির দিকে একজন এগিয়ে এলো শাবল নিয়ে। মণিদির পা ফাঁক করে যোনিপথে শাবল ঢোকাতেই আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম। মণিদির চিৎকারে সারা আবাসন কেঁপে উঠলো যেন। একজন তরোয়াল নিয়ে মণিদির স্তনটা কেটে দিলো। তারপর তলপেট থেকে কুঁচকি অবধি শাবল দিয়ে কোপাতে লাগলো। আর মণিদির চিৎকার শুনলাম না। সারা ঘর রক্তে লাল হয়ে উঠেছে। না, তাতেও থামলো না ওরা। মণিদির ঘন লম্বা বেণী ধরে জানলার রডের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে দিলো। আমরা তিনজন কেউ কিছুই করতে পারলাম না। যে কিনা আমাদের খুব ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিল, যার কিনা ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষার পর বিদেশে পড়ার জন্য যাওয়ার কথা, সেই মণিদির নিথর নগ্নদেহখানি কলেজের জানালার রডে ঝুলছে?
তারপর আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি যন্ত্রণায় ছটফট করছি। বাধা দেবার ক্ষমতা নেই আমার আর। একজনের হাতে দেখি লোহার শিক, যা দিয়ে গরু কেটে ঝোলানো হয়। শিক নিয়ে আমার পা ফাঁক করে ঢুকিয়ে দিলো।
আঃ আঃ আঃ মরে গেলাম।
বৃষ্টি পড়ছে অঝোরে।
চারদিকে রক্তের গন্ধ আর মণিদির গীতবিতান বইটার ছেড়া পাতাগুলো মেঝের রক্তে পড়ে কলঙ্কিত হচ্ছে।
হিন্দু মেয়ের রক্তে পাকিস্তান তৈরী করতে হবে যে!!!
মৈত্রেয়ী বক্সী (Maitreyi Bokshi)