জেনিভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৩ তম অধিবেশন শুরু হয়েছে সম্প্রতি। এর মধ্যে শনিবার মানবাধিকার কাউন্সিলের অফিসের বাইরে বিক্ষোভ দেখালেন পাকিস্তানের সংখ্যালঘুরা। তাঁরা বলেন, আমাদের দেশই আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের উৎস। পাকিস্তান বিশ্বের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশন চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত। তার সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে মানবাধিকার কতদূর রক্ষিত হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখবে কাউন্সিল।
এদিন সংখ্যালঘুরা বিবৃতি দিয়ে বলেন, “৯/১১-র পর থেকে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। ওয়াজিরিস্তানের উত্তরে আফগানিস্তানের সীমানা বরাবর এলাকায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদীরা সক্রিয়। তাদের সঙ্গে আল কায়েদা ও তালিবানের যোগাযোগ আছে।”
সংখ্যালঘুদের সংগঠনের মতে, পাকিস্তানের সরকার দীর্ঘকাল ধরে গোপনে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদকে অর্থসাহায্য করে এসেছে। তার বিরুদ্ধেই এদিন তাঁরা বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের বক্তব্য, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে আশপাশের দেশে সন্ত্রাসবাদে মদত দিয়ে চলেছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসবাদীরা সংগঠিত হতে পারে, হামলার ছক কষতে পারে এবং নিজেদের তহবিল ভরতে পারে। তাদের দমন করার কোনও ইচ্ছাই নেই সরকারের। পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের দাবি, রাষ্ট্রপুঞ্জ তাদের দেশের সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। জঙ্গিদের মদত দেওয়া বন্ধ করুক।
এর মধ্যে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স পাকিস্তানকে চরমপত্র দিয়ে বলেছে, আগামী জুন মাসের মধ্যে জঙ্গিদের অর্থসাহায্য বন্ধ করতেই হবে। নাহলে তাদের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করা হবে। ২০১৮ সালের জুন মাসে পাকিস্তানকে ধূসর তালিকাভুক্ত করে এফএটিএফ। তখনই বলা হয়, পাকিস্তানকে যে ২৭ টি শর্ত দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে মাত্র ১৪ টি পূরণ করা হয়েছে। ওই সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়, “শর্তপূরণের সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে। কয়েকটি ব্যাপারে পাকিস্তান ব্যবস্থা নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু সামগ্রিকভাবে তারা শর্ত পুরণে ব্যর্থ হয়েছে।”
এরপরে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আশা করি আগামী জুন মাসের মধ্যে বাকি শর্তগুলিও পুরণ করবে পাকিস্তান। নাহলে এফএটিএফ তার সদস্য দেশগুলিকে অনুরোধ করবে, তারা যেন পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসা বা আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে সতর্ক থাকে। এফ এ টি এফের সদস্য দেশের সংখ্যা ৩৯। তাদের প্লেনারি বৈঠকে পাকিস্তান ও ইরানকে নিয়ে আলোচনা হয়। সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় এই দুই দেশের ভূমিকার কথা উঠে আসে। তুরস্ক ও মালয়েশিয়া সমর্থন করে পাকিস্তানকে। কিন্তু বাকি দেশগুলি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পাকিস্তানকে ব্যর্থ বলেই দাবি করে। লস্কর ই তৈবা, জইশ ই মহম্মদ ও হিজবুল মুজাহিদ্দিনের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলিকে আর্থিক জোগান বন্ধ করার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য ধূসর তালিকায় রাখা হয় পাকিস্তানকে। কিন্তু সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় পাকিস্তানের আশ্বাসের উপর ভরসা করে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়নি ইমরান খানের দেশকে।