বাংলাতে স্টেশনের নাম গুলো শুধু মাত্র বাংলাতেই থাকে তা নয়, সেখানে হিন্দি এবং ইংরেজিতেও লেখা থাকে। তিনটে ভাষাতে লেখা থাকার কারণ কি আমরা সবাই জানি। প্রথমত পশ্চিম বঙ্গের ভাষা হল বাংলা। বাকি দুটি ভাষাতে স্টেশনের নাম থাকার কারণ হল, হিন্দি হল আমাদের দেশের সরকারি ভাষা এবং ইংরেজি একটি প্রচলিত বিদেশি ভাষা হিসেবেই থাকে। এই ফরম্যাট যে শুধু বাংলাতেই মেনে চলা হয় তা নয়। সমগ্র ভারতেই এটা একটা সরকারি বা রেল দপ্তরের রুল। কারণ মাতৃভাষা(যেমন আমাদের বাংলা) প্রতিটি রাজ্যের বাসিন্দাদের সুবিধার জন্য এবং হিন্দি সরকারি ভাষা তাই সেটার ব্যবহার আছে। অপরদিকে বিদেশ থেকে আসা বহু পর্যটক বা অন্য কারণে আসা মানুষদের সুবিদার্থে এই ইংরেজি ভাষার ব্যবহার।
এখন কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বিভিন্ন রাজ্যে বেশ কিছু রেল স্টেশনে বাংলা ভাষায় রেল স্টেশনের নাম লেখা থাকে। সেটার কারণ খুব সহজেই বোঝা যায়,সেটা হল সেই সমস্ত রাজ্যের কিছু এলাকা থেকে যেখানে বাঙালি মানুষের বসবাস অনেকাংশেই উল্লেখযোগ্য ভাবে আছে। এইভাবেই আমাদের রাজ্যেও বেশ কিছু এলাকা আছে বা রেল স্টেশন আছে যেখানে উর্দু ভাষার মানুষ খুব সহজেই লক্ষণীয়। সেখানে বাংলা হিন্দু এবং ইংরেজি ছাড়াও উর্দু ভাষাতেও রেল স্টেশনের নাম লেখা থাকে।
এই নিয়ম যে শুধু বিগত ৬ বছরের মধ্যে আনা হয়েছে বা চালু করা হয়েছে টা নয়, এটা বহু পুরনো একটা নিয়ম যেটা সরকারি ভাবেই বা রেল দপ্তরের অপরিবর্তিত নিয়ম হিসেবেই চলছে।।
অথচ ইদানিং একটা বড় ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে যেখানে বেশ কিছু অতি উৎসাহী মানুষ(যদিও মানুষ কিনা সেটার ওপরে একটা বড় প্রশ্ন চিন্হ থাকে) দাবি করছে যে বাংলাতে , হিন্দি ভাষাতে কোনো লেখা থাকবে না। খুব সহজেই সেই মানুষ গুলোকে নিয়ে একটা সংগঠন বা দল তৈরি করে স্বঘোষিত কিছু নেতা রাস্তাতে নেমে একটা চরম নোংরা কাজ করা শুরু করেছে। সেটার প্রথম ধাপ হল হিন্দি লেখা দেখলেই সেটা ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে ফেসবুক বা টুইটারের মত সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করছে তার ছবি বা ভিডিও। আবার রেলের যেসব বোর্ডে স্টেশনের নাম হিন্দিতে লেখা আছে সেখানে কালি দিয়ে হিন্দি লেখা গুলো ঢেকে দিচ্ছে বা নোংরা করে দিচ্ছে। এটা করে নিজেদের বড় বাঙালি বা বাঙালি হিতৈষী বলে প্রমাণের চেষ্টা করছে তারা।
ঠিক এই জায়গাতেই প্রশ্ন উঠছে যে এরা যে কাজটি করছে সেটা বাঙালির জন্য কতটা ভালো? ভেবে দেখতে হবে নিজের জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য কিছু করতে গিয়ে অপর কোনো জাতিকে অপমান করা কতটা যুক্তিযুক্ত! যেখানে ভারতের মতো একটা বড় দেশে বিভিন্ন ভাষার মানুষ থাকে সেখানে বাঙালির ভালো করতে গিয়ে কি আদতে বাঙালির অপমান করা হচ্ছেনা? পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অঙ্গ রাজ্য, তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই বাংলার বহু যুবক কাজের খোঁজে ভীন রাজ্যে যাচ্ছে, এখন এই ভাবে হিন্দি ভাষা নিয়ে নোংরামো করার কারণে যদি ভিন রাজ্যের বাসিন্দা বাঙালি যুবক যুবতীদের প্রশ্ন করে তাহলে তারা ঠিক কিভাবে সেটার মুখোমুখি হবে? কি যুক্তি বা উত্তর দেবে?
স্বাবলম্বী না হয়ে ওপরের দিকে আঙুল তুলে এইভাবে নোংরামো করার ফলে ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া মানুষ গুলো যদি প্রশ্নের মুখে পরে তাহলে কি সেটার দ্বায়িত্ব এই ভাষা নিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজ করা মানুষ বা সংগঠন দিতে পারবে?
বাংলা যদি শুধু বাঙালির হয় ,এই দাবিতে হিন্দি মুছে দেওয়া হয় থেকে তাহলে উর্দু ভাষা ঠিক কি কারণে ছাড় পাচ্ছে বা পাবে সেটার উত্তর এরা এখনো দিতে পারেনি। খুব সহজেই এখানে বোঝা যায় যে, এই কাজ শুধু যে বাঙালির ভালোর জন্য ভেবে করা হচ্ছে টা নয়। এটার পিছনে আছে একটা বড় ষড়যন্ত্র , যেটা হল এইভাবে যেমন ছোটো ছোটো করে বিচ্ছিন্নতাবাদী কাজের দিকে এরা এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি বাংলাকে বাকি রাজ্যের থেকে আস্তে আস্তে বিচ্ছিন্ন করে একটা বড় অশান্তির সৃষ্টি করার বড় প্রচেষ্টা। এখন ভেবে দেখার বিষয় যে বাংলার জন্য এসব করেই এরা বাংলা রক্ষার যে কথা বলছে বা দাবি করছে সেটার পিছনে শুধু জাত্যাভিমান আছে নাকি বাইরের কোনো বড় সংগঠন আছে এদের পিছনে। হ্যা অবশ্য বহির্শক্তির একটা বড় সমর্থন ছাড়া এটা সম্ভব না। কারন, ভারতে বসে ভারতের ভেতরে আঞ্চলিক বা রাজ্য ভিত্তিক ভাগ তৈরির চেষ্টা কেউ করবেনা যদি না সে বা সেই দল বাইরে থেকে অর্থনৈতিক সমর্থন পেয়ে থাকে।
আদতে এরা যে বাঙালির ভালো নয়, বাংলাকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে সেটা স্পষ্ট তাদের কাজে। কারণ এই রাজ্যে শুধু রেল স্টেশন নয়, বহু পুরসভা এলাকা আছে যেখানে বাংলা নয় উর্দু এবং ইংরেজি ভাষাতে সরকারি বোর্ড আছে। যদিও হিন্দি ছাড়া সেই সব এলাকা বা বোর্ডে কোনো রকম ভাবেই উর্দু বিরোধী কাজ তারা করছে না।
✍️ পিউ