লোকসভার পর রাজ্যসভায় পেশ করা হল নাগরিকত্ব বিল। সোমবার লোকসভায় পাশ হয় এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। এরপর বুজধবার রাজ্যসভায় সেই বিল পেশ করা হল। সেখানেও বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। মুসলিমদের কেন এই বিলে রাখা হয়নি, সেই প্রশ্ন ফিরে ফিরে এসেছে। দিনের শেষে তার জবাব দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
এদিন অমিত শাহ জানিয়েছেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান- তিনটিই মুসলিম দেশ। ফলে, সেখানে মুসলিমদের সঙ্গে অবিচার হওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে, এই বিলে তাঁদের কথা বলা হয়নি। বদলে ওইসব দেশে যাঁরা সংখ্যালঘু, সেই হিন্দু, ক্রিশ্চান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈনদের নাম লেখা হয়েছে। তবে কোনও মুসলিমের সঙ্গে অবিচার হলে, তাঁদেরও নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পরিসংখ্যান দিয়ে অমিত শাহ উল্লেখ করেছেন যে, মোদী সরকারের আমলে ৫৬৬ জন মুসলিম শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে।
কংগ্রেস নেতাদের জবাব দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘হিন্দু বাদে শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, ক্রিশ্চান – এতগুলি ধর্ম রাখা হয়েছে, তা সত্বেও কেন নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। শুধু মুসলিমদের নাম নেই মানেই এটা নিরপেক্ষতা নয়?’
অমিত শাহ এদিন উল্লেখ করেনন, একসময় মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন যে পাকিস্তানে বসবাসরত হিন্দু এবং শিখরা যদি সেদেশে থাকতে না চান, তাহলে তাঁরা নিশ্চিন্তে ভারতে আসতে পারেন, তাঁদের প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দেওয়া হবে। অমিত শাহ এই উক্তির কথা বলে বলেন, মহাত্মা গান্ধীও কেবল হিন্দু আর শিখদের কথা বলেছিলেন, বিজেপি সরকার শিখ, জৈন, ক্রিশ্চান- সব দেশের কথা বলছে।
এদিন তিনি ফের একবার মনে করিয়ে দেন যে ভারতে বসবাসকারী কোনও সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিমদের উপর এই বিলের কোনও প্রভাব পড়বে না।
লোকসভাতেই বিরোধীদের জবাব দিয়ে অমিত শাহ জানিয়ে ছিলেন, ভারতীয় মুসলিমদের উপর কোনও প্রভাব পড়বে না। ভারতে বসবাসকারী মুসলিমরা সম্মানের সঙ্গেই বাঁচতে পারবেন। বিভেদ তৈরি করার জন্য এই বিল আনা হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে মুসলিমদের নাম নেই। উল্লেখ্য, এই বিলে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান কিংবা আফগানিস্তান থেকে আসা বৌদ্ধ, জৈন, হিন্দু, শিখ, ক্রিশ্চানদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। মুসলিমদের কথা বলা হয়নি। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অমিত শাহ লোকসভাতেও বলেন, ‘ওইসব দেশে মুসলিমরা সংখ্যালঘু নয়। তাই মুসলিমদের কথা বলা হয়নি। সংখ্যালঘুদের কথাই কেবলমাত্র বলা হয়েছে।’
সিটিজেনসিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিলের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ চলছে দেশের বিভিন্ন অংশ সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতেও। ছয় দশক পুরনো নাগরিকত্ব বিল সংশোধন করে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তানের অ-মুসলিমদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে সাহায্য করবে। এই বিলের বিরোধিতায় আগুন জ্বলছে ত্রিপুরা, অসমের মত রাজ্যে। ইতিমধ্যেই সেনা নামাতে হয়েছে।