একদিকে GST র ৫০% আয়, অন্যদিকে গরিবদের ভুল বোঝানোর ডিভিডেন্ড

ধরা যাক, আমার একটা কারখানা আছে, যেখানে চকলেট তৈরি হয় l সরকার কিভাবে জানবে যে কটা চকলেট তৈরি হয়? 10 না 10000? আমি যদি কর বিভাগকে বলি, আমার বিক্রি দশ, তাঁরা কিভাবে বুঝবেন? রাস্তা একটাই l অপ্রত্যক্ষ কর, যা আজকের GST l GST যখন প্রথম আসে, তখন সরকার ঠিক করে কোন খাদ্য দ্রব্যের উপর কর বসাবে না l আগে প্যাকেট খাদ্যে ৪ % থেকে ৫% ভ্যাট ছিল l পাঞ্জাব বছরে দুই হাজার কোটি এবং উত্তরপ্রদেশ সাতশো কোটি উপার্জন করতো l কিন্তু GST ছাড় দিতে ফল হয় উল্টো l বড় বড় বাসমতি চাল কোম্পানি থেকে চাউমিনসহ বিভিন্ন ফাস্ট ফুড কোম্পানি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে গেছে কোন কর না দিয়ে l বড় বড় হাসপাতাল ৫00 থেকে ৮00% লাভ করে গেছে, কোন কর না দিয়ে l আজ সেই সব হাসপাতালের সিইও টা মিডিয়ার সামনে এসে গরিব মানুষের জন্য কুমিরের কান্না কাঁদছে l কিন্তু তাঁদের কান্নার মূল কারণ, জিএসটি সিস্টেম তাদের বাধ্য করবে সঠিক আয় ঘোষণা করতে l এতদিন কর্পোরেট ট্যাক্স খাতে বহু টাকা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছিল সরকারের l কিভাবে এর থেকে পারিত্রান পাওয়া যায়? অর্থমন্ত্রক মতামত চায় সব রাজ্য সরকার এবং বিভিন্ন বণিক সভার থেকে l যথারীতি উত্তর একটাই আসে, কিছু GST বসাতেই হবে l নইলে একদল অসৎ ব্যবসায়ী দেশকে ঠকানোর সুযোগ ছাড়বে না l GST কাউন্সিল মিটিং এও সব দল একমত হয় l
কিন্তু সরকারের ঘোষণার পরই এই ঘোষণাকে গরিব ভোট টানার অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার শুরু করে বিরোধী দলগুলি l তাঁদের দুটি লাভ l একদিকে GST র ৫০% আয়, অন্যদিকে গরিবদের ভুল বোঝানোর ডিভিডেন্ড l একদিকে তারা মানুষকে বোঝাতে শুরু করে যে সব খাদ্যেই সরকার নাকি কর বসাচ্ছে l দুই হাসপাতালে GST বসানোতে নাকি সাধারণ মানুষ সেখানে আর যেতে পারবে না l কিন্তু ঘটনা হল, প্রতিদিন সাধারণ মানুষ না ১৬০ টাকার বাসমতি খায়, না খায় হলদিরামের মুগ ডালভাজা l আর বেসরকারি হাসপাতাল? সে কবে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে ছিল l ৮০০% লাভে ব্যাবসা করে তারা l তাঁদের ৫% GST ছাড় দিলে তারা সঙ্গে বাঁচিয়ে নেবে কর্পোরেট ট্যাক্স এবং ইনকাম ট্যাক্স l ক্ষতি সরকারের l ক্ষতি সাধারণ মানুষের l

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে l একসময় স্কুল থেকে ইংরেজি তুলে দিয়ে বলা হয়েছিল, এতে বড়লোক গরিব দুরত্ব কমবে l কিন্তু এর ফলে দুরত্ব বেড়েছে, কারণ বড়লোকরা তাঁদের ছেলেমেয়েদের বেসরকারি স্কুলে পাঠিয়েছে l এবারও যখন প্যাকেজ ফুড বা বেসরকারি হাসপাতালে কর বসিয়ে তাঁদের কর ব্যাবস্থায় এনে সেই কর সাধারণ মানুষের জন্যই ব্যাবহার করার কথা ভাবা হচ্ছে, তখন আবার সেই গরিবের ঢাল l পশ্চিমবঙ্গে নাকি ৮০% মানুষ দুটাকা কেজি চাল খায়? তাহলে বাসমতির উপর কর বসলে সমস্যা কোথায়? এখানে নাকি সব গরিবের চিকিৎসা হয় স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে l তাহলে ৫% জিএসটি দিতে গরিবের সমস্যা কোথায়? সেটা তো স্বাস্থ্যসাথীই দিয়ে দেবে? নাকি দুটোই মিথ্যে? পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্ব দূরীকরণে এক নাম্বারে থাকার মতই?

সুদীপ্ত গুহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.