প্র: কেন শ্রী রামকে হিন্দুরা সম্মানীয় ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করে?

উঃ- হিন্দু রীতি অনুসারে, শ্রী রাম হলেন চারটি যুগের মধ্যে ত্রেতাযুগে ভগবান বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান বিষ্ণু অধর্ম বা অন্যায়কে ধ্বংস জন্য রামচন্দ্র রুপে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হিন্দু সভ্যতার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ৩০০০ বছর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। শুধু ভারতেই নয়, দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার বহু দেশেও নাগরিকরা কিংবদন্তির শ্রী রামকে ভগবান বিষ্ণুর অবতার হিসাবে বিশ্বাস করেন। প্রত্নতাত্ত্বিক নথিও শ্রী রামের জীবনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করেছে। পবিত্র গ্রন্থ রামায়ণ সহ বহু হিন্দু সাহিত্যই বহু আগে থেকে শ্রী রামের জীবনের সত্যতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ সরবরাহ করেছে। এমনকি সম্প্রতি আবিষ্কৃত নিমজ্জিত শহর দ্বারকাও শ্রী রামের অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে সাহায্য করে।

প্র: শ্রী রাম জন্মভূমির অস্তিত্বের ইঙ্গিত দেয় এমন কোন প্রমাণ কি আছে??

উঃ ১৯৭৫-৮০ সালে, অধ্যাপক বি বি লালের নেতৃত্বে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার একটি দল রামায়ণে উল্লিখিত বিভিন্ন স্থানের সত্যতা যাচাই করার জন্যে অযোধ্যাতে ব্যাপক খননকার্য চালায়। দলটি এটি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় যে রাম জন্মভূমি অঞ্চলটি খ্রিস্টপূর্ব ৭ ম শতাব্দীর পূর্বে দখল করা হয়েছিল। বাবরি কাঠামোর কাছে খনন করা দুটি গর্ত থেকে ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরটির কয়েকটি স্তম্ভের ভিত আবিষ্কৃত হয়। এগুলি চৌদ্দটি কসৌটি-পাথরের স্তম্ভের সাথে সারিবদ্ধ ছিল‚ যা বাবরী কাঠামোয় ব্যবহৃত হয়েছিল। এই স্তম্ভগুলিতে দ্বাদশ শতাব্দীর কিছু খোদাইকার্য করা ছিল যা কেবলমাত্র হিন্দু স্থাপত্যতেই ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, ১৫২৮ সালে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ থেকে কিছু হস্তনির্মিত বস্তুও উদ্ধার করা হয়। আর যেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তা হ’ল যে দেবনাগরী লিপিতে খোদাই করা ২০ টি লাইন যুক্ত একটি ১.১০ × ০.৫৬ মিটার স্ল্যাব আবিষ্কৃত হয় । এই লাইনে গুলিতে সেই স্থানে একটি বিষ্ণু-হরির মন্দির থাকার কথা লেখা আছে।

প্রশ্ন: ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে অযোধ্যায় রাম মন্দিরের ধ্বংসের কোনও প্রমাণ আছে কি ?

উঃ প্রামাণিক মুসলিম রেকর্ডগুলি অবশ্যই এখানে একটি একটি মন্দির ধ্বংস করার প্রমাণ দেয়। ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে আসা ইউরোপীয় পর্যটকরা এই ধ্বংসকার্যের কথা বলে গেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণাগুলিও বাবরি কাঠামো নির্মাণের পূর্বে একটি মন্দিরের অস্তিত্বর কথা প্রমাণ করে। ব্রিটিশদের দ্বারা রক্ষিত ভূমি রাজস্ব রেকর্ডগুলি সেই স্থানটিকে জন্মস্থান হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এমনকি ১৮৮৬ সালের আইনী রায়ও এই ইঙ্গিত করে যে হিন্দুদের কাছে পবিত্র এই স্থানটিতে বাবরী কাঠামো নির্মিত হয়েছিল।

প্রশ্ন: কীভাবে কেউ বলতে পারেন যে বাবর অযোধ্যাতে রাম মন্দির ধ্বংস করেছিলেন?

উঃ – ‘বাবর নামা’ নামে বাবরের ফার্সি ডায়েরির ইংরেজী অনুবাদে অ্যান্নেট সুসান্না বেভারিজ বিশেষভাবে শ্রী রাম মন্দিরের ধ্বংসের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে বাবর শ্রী রাম জন্মভূমিতে প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের মর্যাদা ও পবিত্রতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি আরও বলেছেন যে মোহাম্মদের অত্যন্ত অনুগত অনুসারী হিসাবে বাবর একটি মসজিদ দ্বারা মন্দিরের প্রতিস্থাপনকে কর্তব্যপূর্ণ এবং তাঁর যোগ্য কাজ বলে মনে করতেন। মন্দির ধ্বংসের সময় অযোধ্যা ও তার আশেপাশে বাবরের উপস্থিতির কথা তাঁর ডায়েরিতে বেশ কয়েক জায়গায় লেখা আছে। এমনকি মন্দির ধ্বংসের ৫০-বছর পরে হিন্দুদের সাথে শান্তি স্থাপনের জন্য, আকবর আসল মন্দিরের গর্ভগৃহের আশেপাশে সীতা কি রসুই এবং রাম চবুতর নির্মাণের তদারকি করেন। ১৭০০ সাল থেকই স্থানটিতে রাম নবমী উদযাপিত হওয়ার প্রচুর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রশ্ন: এই রাম জন্মভূমিটি আগে কেন পুনরুদ্ধার করা হয়নি?

উঃ -হাজার হাজার মানুষ শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরকে রক্ষার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। এই অঞ্চলে ইসলামী শাসন তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও, হিন্দু রাজারা স্থানটিকে স্বাধীন করার জন্য প্রতিটি সামান্যতম সুযোগকেই যথাসম্ভব ব্যবহার করতে ছাড়েননি। ১৯৪৭ সালের আগে, মুসলমানদের কাছ থেকে রাম জন্মভূমিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য ৭৭ টি প্রচেষ্টা রেকর্ড করা আছে।

প্রশ্ন: ব্রিটিশ শাসনামলে, হিন্দুরা কি রাম জন্মভূমিকে পুনরুদ্ধার করার জন্য কোন চেষ্টা করেছিল?

১৮৮৫ সালে একটি মামলার মাধ্যমে হিন্দুরা স্থানটি ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেন। ১৮৮৬ সালে যে রায় প্রদান করা হয়েছিল তাতে বলা হয়েছিল “অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে হিন্দুদের জন্য বিশেষভাবে পবিত্র স্থানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু এই ঘটনাটি ৩৫৬ বছর আগে ঘটেছে বলে এর প্রতিকার করার জন্যে এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন যা করা যায় তা হ’ল স্থিতিশীলতা বজায় রাখা। বর্তমানে নতুন কোনো চেষ্টাই উপকারের বদলে আরও ক্ষতি এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।

প্রশ্ন: স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কোনও চেষ্টা হয়েছিল কি?

উঃ- ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে, যখন শ্রী রামের মূর্তিগুলি বাবরী কাঠামোতে হাজির হয়েছিল, তখন আদালত হিন্দুদের সেখানে পুজা করার অনুমতি দেয়। আদালত প্রতিমাগুলিকে সরাতে বাধা দেয় এবং মূর্তিগুলির ২০০ ফুটের মধ্যে কোনো মুসলিমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে, আদালতের এক নির্দেশের দ্বারা শ্রী রাম জন্মভূমির তালা খুলে দেওয়া হয়, এবং হিন্দুরা রামলালার পুজোর জন্যে সম্পূর্ণ প্রবেশাধিকার পায় । তিন জন প্রধানমন্ত্রীর শাসনকালে ‚ যথা ভি ভি পি সিং, শ্রী চন্দ্রশেখর এবং শ্রী নরসিংহ রাও এই সমস্যা সমাধানের জন্য বেশ কিছু চেষ্টা করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে চন্দ্রশেখরের সময়কালেই সবথেকে সুসংহত ও তথ্যভিত্তিক চেষ্টা হয়েছিল।

প্রশ্ন: শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দিরটি যদি পুনর্নির্মাণ করা হয়, তবে এটি কি আরও সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কারণ হয়ে উঠবে না?

উঃ- রাম জন্মভূমি আন্দোলনের বহু আগে থেকেই পাকিস্তান, বাংলাদেশ এমনকি ভারতেরও বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করা হয়ে আছে। লজ্জা উপন্যাসটিতে স্বাধীনতার সময় থেকেই বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর সাম্প্রদায়িক অত্যাচারের সুস্পষ্ট বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৬ সালে কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের প্রথম দিনগুলিতে বহু হিন্দু মন্দিরে আক্রমণ করা হয় এবং তার বেশ কিছু ধ্বংসও হয়ে যায়। রাম জন্মভূমিতে, মন্দিরের স্থানে হিন্দুদের বৈধ দাবি রয়েছে। বৈধতা যেহেতু প্রতিষ্ঠিত হয়েছে , তাই হিন্দুরাই কেবল তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করুক তাই না, অন্যরাও এটিকে একই দৃষ্টিকোণে দেখার জন্য দায়বদ্ধ হয়ে উঠুক। সাথে এও বলা উচিত যে হিন্দুরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা করেছে কিন্তু তদের এই প্রচেষ্টাগুলি বারবার ব্যর্থ হয়েছিল।

প্রশ্ন: শ্রী রাম জন্মভূমি এবং সোমনাথ মন্দিরের মধ্যে কি কোনও তুলনা রয়েছে?

উঃ উভয় ক্ষেত্রেই, মন্দিরগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল। শুধু মন্দিরগুলিই নয় বরং স্থান গুলিকেও শান্তিপূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।

আপনি কেবলমাত্র এই তফাতটিই খুঁজে পেতে পারেন যে সোমনাথে ভাঙচুর করা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের উপরে অন্য কোনও ধর্মীয় স্থান নির্মিত হয়নি। তবে প্রাচীন হিন্দু উপাসনার ধ্বংসাবশেষের পাশে মন্দিরের সীমানায় একটি ছোট মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।

প্রশ্ন: বাবরি কাঠামোটি কি মুসলিম উপাসনালয় হিসাবে ব্যবহৃত হত?

উঃ রেকর্ড থেকে দেখা যায় যে ১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝি থেকে, মুসলমানরা শ্রী রাম জন্মভূমি স্থানে নামাজ পড়া বন্ধ করে দিয়েছিল। একই সময়ে, বাবরি কাঠামো প্রাঙ্গনে থাকা হিন্দুরা রাম চবুতর এবং সীতা-কি-রসুই তে উপাসনা করত ‚যা ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিক থেকে অব্যাহতভাবে চলে আসছে। ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বর থেকে হিন্দুরা কাঠামোর মধ্যেই রাম লালা কে (শিশু শ্রী রাম) পূজা দেওয়া শুরু করে। এই পুজোর পেছনে বিচার বিভাগের সম্পূর্ণ অনুমোদন ছিল। বাস্তবে, এটি একটি মন্দিরে পরিণত হয়েই গিয়েছিল। শুধু এখন যা প্রয়োজন তা হ’ল শ্রী রামের গৌরব প্রতিফলিত করার জন্য একটি সংস্কার কর্মসূচি (জীর্ণোদ্ধার ) গ্রহণ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.