পুরোনো ইতিহাস আবার ফিরে এসেছে ! এবার লজ্জায় মুখ ঢাকার পালা

১৯২৭ সালে সৈয়দ মুজতবা আলী যখন শিক্ষকতা করতে আফগানিস্তান যান তখন আফগানিস্তানের রাজা ছিলেন আমানুল্লা খান। প্রগ্রেসিভ থিংকার এই রাজা সাহেব মেয়েদের পর্দা প্রথা তুলে দিয়েছিলেন, মেয়েদের জন্য স্কুল কলেজে বানিয়ে দিয়েছিলেন। দেশ বিদেশ থেকে ডেকে এনেছিলেন জ্ঞানী-গুণী, পন্ডিতদের। আলী সাহেব তার আমন্ত্রণেই আফগানিস্তানে পড়াতে যান। প্রিয় ছাত্র মুজতবা আলীর নাম রেকমেন্ড করেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। রাজা আমানুল্লার স্বপ্ন ছিল আফগানিস্তান জ্ঞানে বিদ্যায় পশ্চিমের দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দেবে।

কিন্তু সে সুখের দিন বেশিদিন টিকলো না। প্রগ্রেসিভ রাজাটি খুব দ্রুত “কাফের” উপাধি পেয়ে গেলেন। উত্তর আফগানিস্তান থেকে এই সময় আবির্ভাব হলো এক ধর্মান্ধ উগ্রপন্থীর দস্যুর যার নাম ছিল বাচ্চায়ে সকাও। বাচ্চায়ে সকাও দ্রুত ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে লাগলো এবং এক এক করে আফগানিস্তানের শহর দখল করতে করতে ক্রমশ কাবুলের দিকে এগোতে থাকলো। নৃশংস ও চরমপন্থী এই যুদ্ধবাজটিকে ঠেকাতে আমানুল্লা খান বাচ্চায়ের মাথার দাম ঘোষণা করলেন ৫০০ টাকা। বাচ্চায়ে সকাও সে ঘোষণা শুনে ঘোষণা করে দিলো রাজা আমানুল্লা খানের মাথার দাম সে দেবে ১০০০ টাকা !

ক্রমশ অমানুল্লার সৈন্য বাহিনী রাজার জন্য লড়াই করতে অস্বীকার করলো এবং তারা দলে দলে বাচ্চায়ের দলে যোগ দিতে লাগলো। আমানুল্লা বাচ্চায়ে কে ঠেকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হলেন এবং সে রাজধানী কাবুলে ঢুকে পড়লো। আমানুল্লা খানের হয়ে লড়াই করার আর কেউ রইলো না। আমানুল্লা তখন আর উপায় না দেখে অস্ত্রাগার থেকে ঝকঝকে নতুন রাইফেলগুলো বের করে কাবুলবাসীর মধ্যে বিলি করতে লাগলেন। তার শেষ আশা যদি কাবুলবাসী কোনোভাবে সে দস্যুকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে। তারপর যা হলো তার বর্ণনা দিতে গিয়ে আলী সাহেব লিখছেন :

“সবচেয়ে অবাক হলুম খাস কাবুল বাসিন্দাদের ব্যবহার দেখে। রাইফেল ঝুলিয়েছে কাঁধে, বুলেটের বেল্ট বেঁধেছে কোমরে, কেউ পরেছে আড়াআড়ি করে পৈতের মতো বুকের উপরে, কেউ বা বাজুবন্ধ বানিয়ে বানিয়ে বাহুতে, কেউ কাঁকন করে কব্জিতে, দু একজন মল করে পায়ে !
যে অস্ত্র বিদ্রোহী, নরঘাতক দস্যুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য দীন আফগানিস্তান নিরন্ন থেকে ক্রয় করেছিল, তা আজ অলংকার রূপে ব্যবহৃত হলো !”

না, একজন কাবুলের বাসিন্দাও সে রাইফেল থেকে একটি গুলিও দস্যু বাচ্চায়ের দিকে ছোঁড়েনি। রাজা আমানুল্লা খান প্রাণ বাঁচাতে আফগানিস্তান ছেড়ে পালান এবং ইটালিতে আশ্রয় পান। বাচ্চায়ে সকাও বিনা বাধায় কাবুল দখল করে ফেলে এবং যথেচ্ছ লুঠপাট চালায়। লাখ লাখ মানুষ প্রাণের ভয়ে কাবুল ছেড়ে পালতে থাকেন। হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। মহিলাদের জন্য আবার চালু হয় কড়া পর্দাপ্রথা। মেয়েদের স্কুল কলেজ তুলে দেয়া হয়।

গত দু’দিনে তালিবানের কাবুল দখলের ভিডিও দেখতে দেখতে এবং কাবুল ছেড়ে পালানোর জন্য এয়ারপোর্টে মানুষের ঢল দেখে মনে হলো ১৯২৯ আর ২০২১, কি নিদারুন মিল ! হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ !

পুরোনো ইতিহাস আবার ফিরে এসেছে ! এবার লজ্জায় মুখ ঢাকার পালা।

—- © আশাভরী সেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.