“সরকার কেন পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্যের দাম কমাচ্ছে না? প্রথম কারণ, সরকার চাইছে জনগণ তেলের ব্যাবহার কমান l পেট্রোলিয়াম দ্রব্য মূলতঃ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় ডলার খরচ করে l আর প্রতি ব্যারেল তেল কেনার সঙ্গেই আমাদের মুদ্রার মূল্য ডলারের তুলনায় কমতে থাকে l আর ভারত সরকার আগামী দিনে টাকার দাম আর কমতে দিতে রাজি নয় l ভারতের কাছাকাছি যাদের জিডিপি ( ফ্রান্স, ব্রিটেন, জার্মানি, জাপান ) তাদের সবারই তেলের দাম ভারতের চেয়ে বেশী l ব্যাতিক্রম, আমেরিকা ও চীন l আমেরিকার সুবিধা হল সারা পৃথিবীর তেল মার্কিন ডলারেই বিক্রি হয়, ফলে মুদ্রার অবমূল্যায়নের ভয় তাদের নেই l আর একনায়কতান্ত্রিক চীন তাদের দেশের একটা বড় সংখ্যক মানুষের উপর পেট্রল ব্যাবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বসে আছে শুধুমাত্র বিদেশী মুদ্রার ভান্ডার ঠিক রাখতে l
দ্বিতীয় কারণ, ভারত সরকারের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, গবেষণায় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বহুগুনে বৃদ্ধি l খরচ বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প তথা জীবনবীমা, দুর্ঘটনাজনিতবীমা, স্বাস্থ্য বীমা, কৃষি বীমা ইত্যাদি l
কিন্তু কোথা থেকে আসবে এই টাকা? সরকার কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর মানুষের উপর এই মুহূর্তে বসানো ঠিক বলে মনে করছে না। কর্পোরেট কর বাড়ালে বিদেশী বিনিয়োগ সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, মেক্সিকো, ফিলিপিন্স কিংবা দক্ষিণ কোরিয়ায় চলে যাবে l মার খাবে শিল্প ও বাণিজ্য l বাড়বে বেকারত্ব l জিএসটি বাড়ালে প্রভাব পড়বে দ্রব্যমূল্যে l সেক্ষেত্রে সরকারকে তার সীমিত বিকল্পগুলির মধ্যে অর্থের সংস্থান করতে হয়েছে l রাস্তা গুলি মোটামুটি, এক, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আংশিক বা সম্পূর্ণ বিলগ্নিকরণ l আর দ্বিতীয়টি হল পেট্রোলজাত দ্রব্যের থেকে শুল্ক বসানো l আর আছে, টাকা ছাপানোর রাস্তা l সরকার তৃতীয় রাস্তা সযত্নে পরিত্যাগ করেছে l
পেট্রোলের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে একবার মনে করে নি , আমাদের দেশে 2013 তে মুদ্রাস্ফীতি ছিল প্রায় 11%, আর এখন 5% l 2004 থেকে 2014, পেট্রোলের দাম 105% বেড়েছে, আর গত সাত বছরে 42% l গত সাত বছরে ফ্ল্যাট বাড়ির দাম বেড়েছে সামান্য l গাড়ির দাম ২০১৪ আর ২০২১ এ প্রায় একই l খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের মুদ্রাস্ফীতি ন্যূনতম রেখে পেট্রোলের দাম বাড়িয়ে যদি দেশের ভালো করা যায় ক্ষতি কি?
মোদীজি শিক্ষা, গবেষণা ও স্বাস্থ্যে উত্তরোত্তর খরচ বাড়াচ্ছেন l মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু গবেষণার পেটেন্ট থেকে যে টাকা আয় করে রা ভারতের জিডিপির চেয়ে বেশী l এই প্রবণতার পরিবর্তন করতে গেলে কিছু খরচা জনগণকে করতে হবে l মোদীজি জানেন সাময়িক জনসমর্থনে ভাটা পড়বে l কিন্তু ভোটের কথা ভেবে কবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উনি? সারা বছর কোন না কোন ভোট চলবেই l তাই বলে যে মানুষ দেশের বৃহত্তম রাজ্যের ভোটের আগে নোটবন্দি করতে পারেন, তাঁর কাছে এই সিদ্ধান্ত আর কি?
যারা কান্নাকাটি করছেন, রাজ্য সরকারকে ভ্যাট কমিয়ে ত্রাতা হতে বলুন না? যে রাজ্য লকডাউন এর সময়ে মদের দোকান খোলা রাখে সরকারের আয় সমহারে বজায় রাখার জন্য, সেই রাজ্যের মানুষ দুই টাকা বাসের টিকিটের ভাড়া বাড়লে গরিব হয়ে যাবে না l পানীয় একটু কম খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে l”
লেখাটি মাননীয় সুদীপ্ত গুহর