সোমবার সন্ধ্যায় ম্যাঙ্গালুরুর নেত্রাবতী নদীর ওপরে এক সেতুর ওপর দিয়ে গাড়িতে চড়ে যাচ্ছিলেন শিল্পপতি ভি জি সিদ্ধার্থ। তিনি সেতুর ওপরে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলেন। তারপর গাড়ি থেকে নেমে যান। তিনি কোথায় গিয়েছেন কেউ জানে না। তাঁর সন্ধানে শুরু হয়েছে তল্লাশি। যে সেতুর ওপরে তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল, সেখানে পাঠানো হয়েছে ডগ স্কোয়াড। কুকুরগুলি ব্রিজের মাঝামাঝি একটা জায়গায় এসে থেমে গিয়েছে।
ম্যাঙ্গালুরু সিটি পুলিশ জানতে পেরেছে, সোমবার সেতু থেকে এক ব্যক্তিকে জলে ঝাঁপ দিতে দেখা গিয়েছে। তাই নেত্রাবতী নদীতেও তাঁর দেহের সন্ধান চালাচ্ছে ডুবুরিরা।
যেখান থেকে সিদ্ধার্থ নিখোঁজ হয়েছেন, সেই জায়গার নাম জেপ্পিনা মোগারু। যে সেতুর ওপরে তিনি গাড়ি থামিয়েছিলেন, তার নাম উল্লাল ব্রিজ। সিদ্ধার্থর গাড়ির চালক বাসবরাজ পাতিল পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি একটি টয়োটা ইনোভা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। শিল্পপতি বেঙ্গালুরু থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে সকলেশপুর নামে এক জায়গায় গিয়েছিলেন। ফেরার পথে সিদ্ধার্থ ম্যাঙ্গালুরুর দিকে গাড়ি ঘোরাতে বলেন। সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ গাড়ি যখন ম্যাঙ্গালুরুর কাছাকাছি, তখন তিনি নেত্রাবতী নদীর ওপরে সেতুতে চালককে থামতে বলেন। গাড়ি তখন ছিল সেতুর মাঝামাঝি। বাসবরাজকে তিনি বলেন, সেতুর শেষে গিয়ে অপেক্ষা করতে। তিনি বাকি পথ হেঁটে যাবেন।
পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যা আটটা অবধি অপেক্ষা করার পরে ড্রাইভার যখন দেখলেন সিদ্ধার্থ ফিরছেন না, তিনি ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। সিদ্ধার্থর ফোন সুইচড অফ ছিল। পরে তিনি সিদ্ধার্থর ছেলেকে ফোনে সব জানান। পুলিশকেও খবর দেন। বাসবরাজ গত তিন বছর সিদ্ধার্থর গাড়ি চালাচ্ছেন।
ম্যাঙ্গালুরু পুলিশের কমিশনার সন্দীপ পাতিল জানিয়েছেন, তাঁরা খোঁজ নিচ্ছেন, কার সঙ্গে শেষবার কথা বলেছিলেন সিদ্ধার্থ। ব্রিজের ওপরে একটি ডগ স্কোয়াড পাঠানো হয়েছিল। কুকুরগুলি ব্রিজের মাঝামাঝি একটি জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। নদীতে খোঁজাখুজির জন্য স্থানীয় মৎস্যজীবীদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
ভি জি সিদ্ধার্থ কর্ণাটকের বিজেপি নেতা এস এম কৃষ্ণের জামাই। শিল্পপতি নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে কৃষ্ণর বাড়ির সামনে ভিড় জমতে থাকে। মঙ্গলবার সকালে তাঁর বাড়িতে যান কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা। রাজ্যের কংগ্রেস নেতাদের মধ্যে যান ডি কে শিবকুমার ও বি এল শংকর।
সিদ্ধার্থর বাড়ি চিকমাগালুর জেলায়। তিনি কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কৃষ্ণর এক মেয়েকে বিয়ে করেন। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে তিনি প্রথমে চাকরি করেন মুম্বইয়ের জে এম ফিনান্সিয়াল লিমিটেডে। পরে বেঙ্গালুরুতে নিজের কোম্পানি খোলেন, তার নাম সিভান সিকিউরিটিজ। তার সঙ্গে শুরু করেন ক্যাফে কফি ডে। চিকমাগালুরে যে কফি উৎপন্ন হয়, তাকে তিনি বিশ্ব জুড়ে জনপ্রিয় করে তোলেন।
কর্ণাটক বিজেপির নেতা জ্ঞানেন্দ্র জানিয়েছেন, সিদ্ধার্থর বাবা খুব অসুস্থ। তিনি মাইসুরুর এক হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অপর বিজেপি নেতা শোভা কারানডালজে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে চিঠি লিখে আবেদন জানিয়েছেন, তদন্তে সাহায্য করুন। কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী ইউ টি খাদের বলেন, আমি সিদ্ধার্থর নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে মনে আঘাত পেয়েছি। তিনি মানুষ হিসাবে খুব ভালো ছিলেন। কয়েক হাজার লোককে চাকরি দিয়েছেন। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি হয়তো জলে পড়ে গিয়েছেন।
একটি সূত্রে খবর নিখোঁজ হওয়ার আগে ক্যাফে কফি ডে-র ম্যানেজমেন্ট ও কর্মীদের উদ্দেশে চিঠি লিখে গিয়েছেন শিল্পপতি। তাতে বলেছেন, আমি ‘যথাযথ লাভজনক ব্যবসা’ গড়ে তুলতে পারিনি।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাঁর অফিসে আয়কর দফতরের অফিসাররা হানা দেন।