রক্তিম দাশ কলকাতা, ২৫ জানুয়ারি: এনআরসি। আর এনপিআরের জুজুতেই মৌলবাদীদের হাতে উঠেছে জাতীয় পতাকা! একদা জাতীয় সংগীত বিরােধিতাকারীরা এখন মিছিল-সভায়। গাইছেন “জনগণমন’। এর পিছনে আছে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত। এমনটাই
দাবি বাংলার হিন্দুত্ববাদীদের।
হিন্দুত্ববাদীদের অভিযােগ, গত ২৩ জানুয়ারি কলকাতার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এবার নেতাজির জন্মদিবস পালনের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল, যা অতীত তেমন দেখা যায়নি। বরং রাষ্ট্রীয় মনীষীদের জন্মদিবস পালন আর মাদ্রাসায় তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করে জাতীয় সংগীত গাওয়া নিয়ে মৌলবাদীদের রােষে পড়ে গার্ডেনরিচে মার খেতে হয়েছিল প্রধানশিক্ষক কাজি মাসুম আখতারকে। ধর্মীয় ফতােয়ার স্বীকার হয়ে মাদ্রাসায় আর ফিরতে পারেননি তিনি।
বিয়য়টি নিয়ে কাজি মাসুম আখতার বলেন, ‘এনআরসি-র ভয় এমন জায়গায় পৌছেছে যে, বীরভূমের মল্লারপুর ও মাড়গ্রামে ইন্টারনেটের কাজ করতে যাওয়া কয়েকজনকে এনআরসি কর্মী বলে মাটিতে ফেলে পেটানাে হয়েছে। রাজ্যে এখন সব বাগ হয়েছে পার্কসার্কাসে শাহিনবাগ, আসানসােলে নজরুলবাগ। মহিলাদের ভুল বুঝিয়ে বাগে নিয়ে আসা হচ্ছে। তারা জাতীয় পতাকা হাতে রাষ্ট্রীয় আইনের বিরােধিতা করছে। আমি যখন মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত চাল করলাম, তেরঙ্গা তুললাম তখন আমায় মারা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, ইসলাম বিরােধী। এখন সেই মৌলবাদীরা রাস্তায় নেমে জাতীয় পতাকা নিয়ে অভিনয় করে দেশপ্রেমী সাজার চেষ্টা করছেন। এর পিছনে তান্য উদ্দেশ্য আছে।
মৌলবাদীরা নিজের আত্মপরিচয় আপাতত গােপন করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও স্বস্তিকা পত্রিকার সম্পাদক রন্তিদেব সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, এতদিন এদের হাতে জাতীয় পতাকা দেখা যায়নি। বরং কলকাতার কোথাও কোথাও এরা পাকিস্তানের পতাকা তুলতেন। এঁরা এখন আত্মপরিচয় গােপন করার জন্য এটা করছেন। অবস্থা সামলে গেলে এরা আবার হাতে পাক পতাকা তুলে নেবেন। এরা ভারতবর্ষকে ভালােবাসে না। এসব দেখে বিভ্রান্ত হওয়া যাবে না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, এটা ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণের। মরিয়া প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এটা এক ধরনের শাে-অফ করা হচ্ছে। তেরঙ্গা হাতে নিয়ে আবার লা ইলাহা, আজাদির স্লোগান কেন? এর মানে কী? আবার বামেরা কোনওদিন জাতীয় সংগীত গায়নি, রবীন্দ্রনাথকে বুর্জোয়া বলেছে। হঠাৎ করে তারা আজ এসব করছে কেন? এর কী উদ্দেশ্য?
হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু সংহতির সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য বলেন, “আসলে বিরােধীদের প্রবল বাধা সত্ত্বেও পরপর কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারার অবলুপ্তি, তিন তালাকে নিষেধাজ্ঞা, রাম মন্দির— এসব নিয়ে এরা কিছুটা ব্যাকফুটে। তারা বুঝতে পেরেছে যে, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনের বিষয়ে আনমনীয়। মনােভাব নিয়ে চলছে। এখন তারা তেরঙ্গা পতাকা হাতে তুলে নিয়েছে কৌশলগত কারণে। তেরঙ্গা পতাকা হাতে নিয়ে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করাই এর প্রমাণ। যতক্ষণ পর্যন্ত মােল্লা-মৌলবি এবং মাদ্রাসার মাধ্যমে প্রচারিত তালিবানিকরণের শিক্ষা থেকে মুসলমানরা নিজেদের পৃথক না করবে, ততদিন তাদের চোখ-কান বন্ধ করে বিশ্বাস করার কোনও প্রশ্ন নেই। একই সঙ্গে দারুল ইসলামের স্বপ্ন দেখা এবং ভারতপ্রেমী হওয়া সম্পূর্ণ পরস্পর বিরােধী আচরণ।
শিক্ষবিদ অচিন্ত্য বিশ্বাস বলেন, “ভারতমাতার জয় ঘুরিয়ে বলছে জয়হিন্দ। যারা। প্রজাতন্ত্র-বিরােধী তারা এসব করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। এই প্রথম দেখছি মুসলিম সমাজে একটা প্রতিযােগিতা শুরু হয়েছে ভারতীয়ত্ব প্রমাণ করার। এনআরসির বিরুদ্ধে ধর্মীয় নির্দেশ উপেক্ষা করে তারা গান গাইছে, ছবি আঁকছে!’
বিজেপির রাজ্য নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, যারা এতদিন চাঁদ-তারা, কাস্তেহাতুড়ি পতাকা নিয়ে ঘুরত, তারা এখন তেরঙ্গা নিয়ে ঘুরছে। তার মানে এটা প্রমাণ। হয় এআরসি আরও আগে করলে ভালাে হত। স্বাধীনতার পর বেশ কয়েক দশক ভারতীয় মুসলমানরা সুন্নি কমিউনিস্টদের পাল্লায় পড়ে মৌলবাদীর হাতে তামাক। খাচ্ছিলেন এখন তারা তার থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তাই এসব।
2020-01-27