নন কনভিনিয়েন্ট ট্যাক্স ব্যবস্থায় আসলে জনগণকে বাধ্য করা হয় চুরি করতে

২০০৫ সালে ভারতের বাজারে টাটা মোটরস তাদের ACE নামক লাইট ট্রাক নিয়ে আসে। ধীরে ধীরে বাজারে আসে আরও নানান কোম্পানির লাইট ট্রাক মডেল৷ ফ্যুয়েল এফিশিয়েন্সি এবং লোডিং ক্যাপাসিটির বিভাজনে লাইট ট্রাকের মধ্যেও দুটি ক্যাটাগোরি রয়েছে। একটি স্মল লাইট, আরেকটি মিডিয়াম লাইট । স্মল লাইট ক্যাটাগোরিতে গাড়ীর পরিবহণ ক্ষমতা সরকারি হিসেবে ৫০০ কেজি বা হাফ টন। মিডিয়াম লাইটে পরিবহণ ক্ষমতা ৭০০-৮০০ কেজি।

গাড়ীর কাগজপত্র অর্থাৎ রোড ট্যাক্স, লায়াবিলিটি ইনশিওরেন্স, ইত্যাদির জন্য ভারত সরকার প্রদত্ত তালিকা রয়েছে তাতে কিন্তু এই লাইট ট্রাক বস্তুটির অস্তিত্ব নেই। তালিকার প্রথম বিভাগটিই সাড়ে সাত টন লোডিং ক্যাপাসিটির, অর্থাৎ হাফটন গাড়ীর ক্ষেত্রেও যা খরচ সাড়ে সাত টন গাড়ীর ও তাই।

লায়াবিলিটি ইনশিওরেন্সের একবছরের প্রিমিয়াম ১৮০০০ টাকা। এতে গাড়ীর ক্ষতির জন্য কিছু ইনশিওরড ভ্যালু থাকেনা। রোড ট্যাক্স প্রায় ৬০০০ টাকা। এই ২৪০০০ টাকা কিন্তু ৫০০- ৭৫০০ সব গাড়ীর ওপরেই সমান। হাইওয়েতে টোলের হারও সমান। যদি ধরুন বছরে গড়ে ২০০ দিন গাড়ী চলে তাহলে রোজ ১২০ টাকা সরকার নিয়ে নেয় শুধু গাড়ীটা রাস্তায় নামানোর জন্য। ৫০০ কেজি পরিবহণ ক্ষমতায় যেটা কিলো প্রতি ২৫ পয়সা প্রায়। বড় ট্রাকে সেটাই ২ পয়সার ও কম প্রতি কিলোতে। এর পরে আসে টোল। ১০০ কিমি যেতে আসতে টোল লাগে ৩০০ টাকার মতো। এটিও ৫০০ কেজির ট্রাকে ৬০ পয়সা প্রতি কেজি। ৭৫০০ কেজির ট্রাকে ৪(চার) পয়সার মত। আপনারা জানলে অবাক হবেন হাইওয়েতে একটি অডি গাড়ীর টোল ট্যাক্স একটি লাইট ট্রাকের চেয়ে কম। একটি অডি গাড়ীর লায়াবেলিটি ইনশিওরেন্স প্রিমিয়ামও একটি লাইট ট্রাকের চেয়ে কম।

এই অস্বাভাবিকভাবে ট্যাক্স আদায়ের জন্য ছোট গাড়ীর মালিকেরা (প্রতি ৩টের মধ্যে ২টি গাড়ী) কাগজপত্র ছাড়াই রাস্তায় নামাতে বাধ্য হন। ওভার লোডিং করান। গাড়ীর ফিটনেস এবং চালক সুরক্ষায় আপোষ করতে থাকেন। আপনারা জানলে অবাক হবেন, একটি হাফ টনের ট্রাক তিন টন অব্দি মাল লোড নেয়। এবং এক ভয়াবহ অসুরক্ষার দিকে সরকার তাকে ঠেলে দেয় রোজ৷ আর ছোট গাড়ীর আঞ্চলিক সংগঠন থাকলেও জাতীয় স্তরে তাদের কোন সংগঠন নেই বা তাদের নিজেদের স্বল্পজ্ঞানে তারা জেনে উঠতে পারেনা এই প্রবঞ্চনার ঘটনা গুলি।

আমি বহুবার বহুজায়গায় বলেছি এইরকম নন কনভিনিয়েন্ট ট্যাক্স ব্যবস্থায় আসলে জনগণকে বাধ্য করা হয় চুরি করতে। এবং সেই চুরি ধরা পড়লে আবারও মোটা জরিমানা করা হয়, যার মাধ্যমে আরও ড্রেনেজ অব প্রফিট বাড়ে। এবং দেশের সাধারণ মানুষের সবথেকে কর্মঠ অংশ তাদের শ্রমের যথাযথ মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। এর রিভার্স এফেক্টে ক্রমে ক্রমে আসে দারিদ্র‍্য, অপুষ্টি, অপরাধপ্রবণতা ইত্যাদি।

কৌশিক পাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.