মহারানার নত মস্তক দেখবার সৌভাগ্যও কখনও কারো হয়নি

প্রতাপ সিংহ যখন মেবারের রানা, ভারতবর্ষের সম্রাট তখন বিদেশী আকবর। মারওয়ার, যোধপুর, জয়পুর ইত্যাদি রাজপুতানার যাবতীয় রাজ্য জালালউদ্দিন আকবরের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে, মোগলসম্রাটকেই তাদের সম্রাট বলে মেনে নিয়েছে। বাকি শুধু একটি ক্ষুদ্র রাজ্য। সে হল ওই মেবার।কিছুতেই তাকে বাগে আনতে না পেরে আকবরের ভয়ানক জেদ চেপে গেছে-ছলে-বলে-কৌশলে যেভাবেই হোক মেবারকে পদানত করতেই হবে।
মেবার গ্রাস করবার সেই অন্যায় বাসনা নিয়ে প্রবল পরাক্রান্ত মোগল বাদশাহ প্রায় লক্ষাধিক সেনা ও গোলন্দাজ বাহিনী সমেত সসৈন্যে উপস্থিত হলেন ঐতিহাসিক হলদিঘাটির প্রাঙ্গনে। যুদ্ধ শুরু হবার পূর্বের রাতে মেবারের মহারানার নিকটে এসে উপস্থিত হলেন এক মোগল পত্রবাহক। পত্রটির লেখক মোগল বাদশাহ স্বয়ং। রানা পত্রটি খুলে দেখলেন নিরক্ষর আকবরের হয়ে তার মুখপত্র লিখেছেন, “মাননীয় মহারানা এখনও সময় আছে নিজেকে শুধরে নিন আর মোগল বাদশাহের চরণে আপনার মস্তক ঠেকিয়ে মোগল সাম্রাজ্যের বশ্যতা স্বীকার করে আপনার ক্ষুদ্র মেবারকে সুরক্ষিত রাখুন, অন্যথায় মোগল সাম্রাজ্যের ১ লাখ সেনা আর ৫০ টি তোপের আগুনের লেলিহান গ্রাসে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হতে দেখুন আপনার প্রানাধিক প্রিয় মেবারকে। আপনার জবাবের অপেক্ষায় রইলাম”

ক্ষুব্ধ মহারানা প্রতাপ সিংহ তাঁর জবাবি পত্রে লিখলেন, “ওহে তুর্কি আমাকে তুমি ১ লাখ সেনা আর ৫০ টা তোপের ভয় কি দেখাচ্ছ হে ? তুমি কি জান না আমরা রাজপুত ক্ষত্রিয়। সদা মাতৃভূমিকে সুরক্ষিত রাখবার জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের নিকট হাসিমুখে প্রান বিসর্জন দিতে প্রস্তুত, কিন্তু কখনই ভিনদেশি শত্রুর নিকট মাথানত করে বশ্যতা স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়। তুর্কি তুমি বিস্মৃত হচ্ছ যে আমরা মেবারের সন্তানরা যুদ্ধক্ষেত্রে যুদ্ধ করি মেবারের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য আর তোমার ভাড়াটে মোগল সেনারা যুদ্ধ করে অর্থের লালসায়। অতএব আসন্ন হলদিঘাটির যুদ্ধে মেবারের পরিনাম নিয়ে অত চিন্তিত হয়ো না। মেবারের ২০ হাজার রাজপুত সেনা তোমার ১ লাখ ভাড়াটে সেনাকে কেটে ফেলবে”
এর পরবর্তী ইতিহাস সকলেরই জানা। সারা জীবন মরণপণ প্রয়াস করেও কখনও মেবার অধিকার করতে পারেননি আকবর। নিজের চরণ তলে মহারানার নত মস্তক দেখবার সৌভাগ্যও কখনও হয়নি তাঁর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.