রবীন্দ্রনাথ “কাবুলিওয়ালা”র যতই পিতৃহৃদয় দেখান-না কেন, ওখানকার পিতৃহৃদয় এখন তালিবানহৃদয় হয়ে গেছে

‘গান্ধার’ আর ‘কান্দাহার’ একই শব্দ। আরবি ভাষায় ‘গ’ অক্ষর নেই বলে আরব ভৌগোলিকেরা ‘ক’ ব্যবহার করেছেন।
~লিখেছেন সৈয়দ মুজতবা আলী। কান্দাহার আসলে মহাভারতের গান্ধারীর পিতা সুবলের রাজধানী। পুরো আফগানিস্তানই আর্য ভারতীয় সভ্যতার অঙ্গ ছিল। মুজতবা লিখছেন : “পাঠান মেয়ের দৈর্ঘ্যপ্রস্থ দেখেই বোধ করি মহাভারতকার তাকে শতপুত্রবতী কল্পনা করেছিলেন।”
তিনি আরও লিখেছেন : “অশোক বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য মাধ্যন্তিক নামক শ্রমণকে আফগানিস্থানে পাঠান।…কণিষ্ক বৌদ্ধ হওয়ার বহু পূর্বেই আফগানিস্থান তথাগতের শরণ নিয়েছিল।…আফগানিস্থান ভ্রমণে যাবার সময় একখানা বই সঙ্গে নিয়ে গেলেই যথেষ্ট~সে-বই বাবুরের আত্মজীবনী। …তার সঙ্গে আজকের আফগানিস্থানের বিশেষ তফাৎ নেই।”
আলীসাহেবের কথায় সব ঠিক আছে, কেবল একটা বিসমিল্লায় গলদ রয়েছে। যে-সময়ের কথা তিনি বলেছেন, তখন ওই অঞ্চলকে আফগানিস্থান বলার অবকাশই নেই। কেননা, ইসলাম তো এই সেদিনের~মাত্র চোদ্দশ বছর আগের। আর প্রাচীন গান্ধার রাজ্য সেই মহাভারতের যুগের।
রবীন্দ্রনাথ “কাবুলিওয়ালা”র যতই পিতৃহৃদয় দেখান-না কেন, ওখানকার পিতৃহৃদয় এখন তালিবানহৃদয় হয়ে গেছে। সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক মহিলা জনৈক আফগানকে বিয়ে করে “কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ” নামে একখানা বই ঝেড়ে বেশ ঝড় তুলেছিলেন। ওই সুস্মিতাকে তালিবানেরা গুলি করে মারে। “কাবলিওয়ালা” শব্দটি ভুল। হবে “কাবুলওয়ালা” বা “কাবুলি”। লিখেছেন মুজতবা। তবে জিভ কেটে বলেছেন~ভুল বলা যাবে না, গুরুশাপ ব্রহ্মশাপ। মুজতবার গুরু স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ।
তালিবানেরা এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বৌদ্ধমূর্তি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল। কেননা, শরিয়তে মূর্তি নিষেধ। কাবাঘরের ৩৬০টি মূর্তি ভেঙে মূর্তিভাঙার ধারা শুরু। কিন্তু মূর্তি যে শুধু ধর্মীয় কোনো প্রতিমা নয়~ভাস্কর্যও হতে পারে, এ-কথা এদের কে বোঝাবে!
সারা পৃথিবীর শুভবুদ্ধিসম্পন্ন ভাস্কর্যপ্রিয় ইতিহাস ঐতিহ্যপ্রিয় মানুষের চোখে জল ছিল সেদিন।
এই তো কিছুদিন আগে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্যকে নিয়ে কী কাণ্ডই-না করল মৌলবাদীরা।।বাংলাদেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ কিন্তু এদের বিরুদ্ধে লড়াই করেই চলেছেন।
আমার ধারণা, ভারত বাংলাদেশ সহ গোটা উপমহাদেশে তালিবানের এই উত্থানে উল্লসিত হবে মৌলবাদীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এর প্রকাশ ঘটবে। গাজাওতুল(সঠিক হলো তো?) হিন্দ অচিরেই আসবে~এবং তালিবানরা খুব শিগগিরি পাকিস্তান ক্রস করে গোটা হিন্দুস্থান দখল করবে~এইরকম বার্তাও ইতস্তত দেখতে পাচ্ছি। তবে সে যা-ই হোক~আরও কিছু লাদেন ও মোল্লা ওমর যে জন্ম নেবে~তা কিন্তু ঠিক।
ভারতের দিকে দখলদারির কুনজর না-দেওয়াই তালিবানদের পক্ষে মঙ্গল। কেননা~এখন ভারতে মিনমিনে প্রধানমন্ত্রী নেই। আছেন এমন এক অসমসাহসী যোগীপুরুষ~যিনি তালিবানদের বাড়ি ঢুকে তছনছ করে দিয়ে আসবেন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ভয়াবহ আক্রমণের কথা ভেবে এখনও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাপড়চোপড় নষ্ট হয়~রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেন…! (ইউটিউবে পাক মন্ত্রীর ভয়ার্ত ভাষণ তার প্রমাণ)।
•••
প্রশান্ত চক্রবর্তী
১৬-৮-২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.