গাড়ি শিল্পে মন্দার ধাক্কা কাটাতে সরকারি দফতর গুলোকে গাড়ি কেনার ছাড়পত্র দিল মোদী সরকার।
গোটা দেশের অর্থনীতিতে যে মন্দার মেঘ ঘনাচ্ছে তাতে প্রথমে গাড়ি শিল্পের গতি প্রকৃতিতেই ধরা পড়ে। একে তো জুন ও জুলাই মাসে গাড়ি বিক্রি ৩০ শতাংশের কাছাকাছি কমে গিয়েছে। তার জেরে উৎপাদন কমাতে শুরু করেছে গাড়ি শিল্পসংস্থাগুলি। সেই প্রায় ১০ লক্ষ কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে গাড়ি শিল্পকে অক্সিজেন যোগাতে শুক্রবার এক গুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি জানান, গাড়ি শিল্পকে বৃদ্ধির পথে টেনে তুলতে সরকার নিজেই প্রচুর গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুরনো গাড়ি বাতিল করে নতুন গাড়ি কেনার ব্যাপারে সরকারি দফতরগুলির উপর এতদিন নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ সরকারি দফতরগুলি চাইলে এখন নতুন গাড়ি কিনতে পারবে।
এরই পাশাপাশি নির্মলা জানান, ভারত স্টেজ ৪ গাড়ি কেনার ব্যাপারে একটা বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, এই গাড়ি খুব তাড়াতাড়ি বাতিল হয়ে যাবে। এই আশঙ্কা থেকেই গাড়ি সংস্থাগুলির কাছে প্রচুর বিএস-৪ গাড়ির স্টক তৈরি হয়েছে। এর পরই স্পষ্ট শব্দে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী জানিয়ে দেন, ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বিএস-৪ গাড়ি কেনা যাবে। ওই গাড়ির যতদিন রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ থাকবে ততদিন তা বহালতবিয়তে চালানো যাবে। তা বাতিল হবে না।
এরই পাশাপাশি গাড়ি শিল্পকে সুরাহা দিতে ডেপ্রিশিয়েশন রেট বর্তমানের ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে এক লাফে ৩০ শতাংশ করে দেওয়ার ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। তিনি আরও জানান, গাড়ি কেনার সময় আরও বেশি হারে রেজিস্ট্রেশন ফি আদায়ের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা আগামী জুন পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সন্দেহ নেই এতে গাড়ি শিল্প সংস্থা থেকে শুরু করে ক্রেতাদেরও আর্থিক সুরাহা হবে। এবং গাড়ি বিক্রি বাড়বে বলেই আশা করছেন সরকারি কর্তারা।
প্রশ্ন হল, গাড়ি শিল্পের সংকট কাটাতে সরকার এতো দ্রুত ব্যবস্থা নিল কেন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের গড় জাতীয় উৎপাদনের ৭ শতাংশ আসে গাড়ি শিল্প থেকে। প্রতিটি গাড়িতে তিরিশ হাজার যন্ত্রাংশ থাকে। ফলে এই শিল্পের সঙ্গে প্রচুর অনুসারি শিল্প জড়িয়ে রয়েছে এবং বহু লক্ষ মানুষের জীবিকা এর উপর নির্ভরশীল। ফলে গাড়ি শিল্পে ধাক্কা লাগার অর্থ হল গোটা অর্থনীতিতেই ধাক্কা লাগা। সেই কারণেই দ্রুত পদক্ষেপ করল সরকার।
তবে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ গাড়ি শিল্পের গতি ফেরাতে পর্যাপ্ত কিনা সেই প্রশ্নও রয়েছে। সম্প্রতি শিল্পপতি আনন্দ মাহিন্দ্রা বলেছিলেন, গাড়ি শিল্পকে বৃদ্ধির পথে ফেরাতে গেলে দুটি রাস্তা রয়েছে। এক, জিএসটি-র হার কমানো, দুই রোড ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই দুই দাবির কোনওটিই এখনও মেনে নেয়নি সরকার।