ওঁ ধ্যায়েন্নিত্যং মহেশং রজতগিরিনিভং চারুচন্দ্রাবতসং ।
রত্নাকল্লোজ্বলাঙ্গং পরশুমৃগবরাভীতিহস্তং প্রসন্নম্ ।।
পদ্মাসীনং সমস্তাৎ স্ততমমরগণৈ – র্ব্যাঘ্রকৃত্তিং বসানং ।
বিশ্বাদ্যং বিশ্ববীজং নিখিলভয়হরং পঞ্চাবক্ত্রং ত্রিনেত্রম্ ।।
( অর্থ- রজত গিরির ন্যায় শুভ্রোজ্জল কান্তি শিবকে ধ্যান করি । মনোহর চন্দ্রকলা তাঁর ললাট ভূষণ , রত্নময় ভূষনে তাঁর দেহ সমুজ্জ্বল । তদীয় বাম হস্ত দ্বয়ে পরশু ও মৃগ মুদ্রা । দক্ষিণ হস্ত দ্বয়ে বর ও অভয়মুদ্রা । তিনি ব্যাঘ্র চর্ম পরিধান করে পদ্মাসনে প্রফুল্ল ভাবে সমাসীন । দেব গন চতুর্দিক হতে তাঁর স্তব স্তুতি করছেন । তিনিই বিশ্বের আদি ও মূল কারন এবং নিখিল ভয়নাশক। তিনি পঞ্চ আনন বিশিষ্ট এবং তাঁর প্রতি আননে তিন তিনটি নয়ন । )
এক শিবই নানারূপে নানা নামে নানা স্থানে বিরাজিত। বারানসীতে মহাদেব, প্রয়োগে মহেশ্বর, নৈমিষক্ষেত্রে দেবদেব , গয়া তীর্থে প্রপিতামহ, কুরুক্ষেত্রে কালেশ, প্রভাসে শশিভূষণ, পুষ্করে অয়োগদ্ধ, বিমলেশ্বরে বিশ্ব, অট্টহাসে মহানাদ, মরুকোটে মহোৎকট, শঙ্কুকর্ণে মহাতেজঃ, গোকর্ণে মহাবল, রুদ্রকোটিতে মহাযোগী, স্থলেশ্বরে মহালিঙ্গ, অবন্তীতে মহাকাল, মধ্যমেশ্বরে শর্ব , কেদারে ঈশান দেব, হিমালয়ে রুদ্র, সুবর্ণাক্ষে সহস্রাক্ষ, বৃষে বৃষভধ্বজ, কনখলে উগ্র, ভদ্রকর্ণ হ্রদে শিব, ভৈরবে ভৈরবাকার, ভদ্রপথে ভদ্র, মঙ্গলভাণ্ডে কপর্দী, কালঞ্জরে নীলকণ্ঠ, কাশ্মীরে বিজয়, দেবিকায় উমাপতি, পুরচন্দ্রে তিনিই শঙ্কর। শুধু কি পৃথিবীতে? সত্যলোকে তিনিই ব্রহ্মেশ্বর, বৈকুন্ঠে তিনি সদাশিব, অমরাবতীতে তিনিই অমরেশ্বর, বরুণালয়ে তিনি বরুণেশ্বর, যমালয়ে তিনি কালেশ্বর, বায়ুলোকে পবনেশ্বর, পাতালে হাটকেশ্বর ।
একদা ভগবান বিষ্ণুর সাথে বিবাদ করে সমুদ্রে চলে যান মাতা শ্রী লক্ষী এবং সমুদ্ররাজ রত্নাকরের পুুত্রী রুপে জন্ম নেন । বৈকুন্ঠথেকে লক্ষীর প্রত্যাবর্তনে দেবতারা তাদের সকল ধনসম্পদ ঐশ্বর্য হারায় । তখনতারা ত্রিদেব ব্রহ্মা বিষ্ণু শিবের শরণাগত হন।
তাদের পরামর্শে দেবতারা সমুদ্র মন্থনের
আয়োজন করেণ । কিন্তু এই কষ্ট সাধ্য কাজ
শুধুমাত্র দেবতাদের করা কষ্ট সাধ্য তাই
ভগবান শিবের পরামর্শে অসুরদেরও সমুদ্র
মন্থনে আহবান করা হয় । অসুরেরা এই
শর্তে রাজী হয় সমুদ্র মন্থনথেকে যা প্রাপ্ত হবে তার অর্ধেক অসুরদের দিতে হবে ।
যথা সময়ে সমুদ্র মন্থন শুরু হল । মন্দার
পর্বত কে বাসুকী নাগ দ্বারা বেষ্টিত
করে যখন মন্থনের প্রথম টান টানা হল তখন
মন্দার পর্বত নিচের দিকে যেতে শুরু করল ।
এমতাবস্থায় ভগবান বিষ্ণু কুর্ম অবতার
গ্রহন করল অর্থাত্ কচ্ছপের রুপ ধারণ
করলেন এবং পর্বত কে নিচের পিঠের
উপর স্থাপন করলেন । এতে পর্বত টি নিচের দিকে যাওয়া থেকে বেঁচে গেল ।
দেবতা ও অসুর রা মিলে ক্ষীর সমুদ্র মন্থন করেছিল। সেই মন্থন চলাকালীন ভয়ানক কালকূট বিষ উথিত হয়ে আসে।
অনেক দেবতা আর অসুর সেই স্থানেই মুর্ছা গেল
। তখন সেই বিষ ব্রহ্মার কাছে গেল,
ব্রহ্মাও এই বিষ কে গতি প্রদান করতে অসমর্থ
হল । তারপর বৈকুন্ঠে বিষ্ণুর কাছে গেল,
বিষ্ণুও অপারগতা প্রকাশ করল ।
সেই বিষের বিষাক্ত প্রভাবে সকলেই বিপদগ্রস্ত হয়ে মহাদেবকেই স্মরণ করলেন । মহাদেব এসে সকলকে অভয় দিয়ে সেই বিষ পান করে ধারন করলেন কন্ঠে।
হলাহল পানের পর মহাকাল পৃথিবীর সর্ব বিষ নিজ কণ্ঠে ধারণ তো করলেন কিন্তু বিষের যন্ত্রনায় কাতর হয়ে উঠলেন। দেবী পার্বতি সেই ক্ষণে দেবী তারার রূপ ধারণ করলেন। ছুটে এসে ভগবান শিবের কন্ঠ চেপে ধরলেন যেন মহাদেবের দেহ পর্যন্ত এই বিষ না যায় । তিনি তারিণী হয় শিবের যন্ত্রণার তারণ ঘটালেন। তাই তিনি দেবী তারা নামে পরিচিত হলেন। বিষ গুলো তখন গলাতেই আটকে থাকল এবং মহাদেবের কন্ঠ নীল হয়ে গেল । দেবতা, মানব, দানব সবাই ভগবান শিবের জয় জয়কার করল এবং ব্রহ্মা বিষ্ণু মহাদেবকে নীলকন্ঠ নামে ভূষিত করলেন। যেদিন মহাকাল হলাহল পানে নীলকন্ঠ হলেন কালিকা পুরান মতে সেই দিনটি ই #শিবরাত্রি নামে পরিচিত।
আমাদের অন্তরে যে বিষবাস্প আছে ? তা হরণ করবে কে ? করবেন তিনিই। যিনি শিব। তিনি নীলকণ্ঠ।