নিউজল্যান্ড্রির দ্বারা সত্যবিকৃতি

সাধারণত আমি তথাকথিত লন্ডারার্সদের নিয়ে মাথা ঘামাই না। তবে গতকাল গভীর রাতে প্রতীক গোয়েলের করা একটি ‘এক্সপোজ’-এর দিকে আমার নজর পড়ে। আজ সকালে আমি সেই “গবেষণামূলক” লেখাটি পড়ছিলাম। যেহেতু লেখক তাঁর নড়বড়ে গল্প দাঁড় করাতে আমাকেই ব্যবহার করেছেন‚ তাই আমারও উচিত সংক্ষেপে কিন্তু যথাযথভাবে তার উত্তর দেওয়া।

আমি তাঁর এই মিথ্যাচারের উত্তর দেওয়ার আগে উল্লেখ করতে চাই যে তিনি গোটা বিতর্ককে উপজাতি এলাকার বাম-গীর্জা জোটের থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এই জোটের প্রধান কাজ হলো উপজাতিদের হিংসার দিকে উদ্বুদ্ধ করে, হিন্দু শিকড়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ তৈরি করে, তাদের বিশৃঙ্খল করতে চেষ্টা করে এবং সরকারি ব্যবস্থার মূলে কুঠারাঘাত করে উপজাতিদের নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখা ও তাদের সাহায্যে সেই এলাকায় উন্নয়নমূলক কার্যক্রমকে বাধা দেওয়া। আমি প্রথমেই এই মিথ্যাচারগুলোকে তুলে ধরবো ও তারপর এই হিন্দুবিরোধী দেশবিরোধী শক্তির বিষয়ে ফিরে আসবো।

প্রতীকের গল্পটি টাইমস নাউয়ের করা মোটামুটি ৮ মিনিটের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের সঙ্গে সম্পর্কিত। তিনি দাবি করেছিলেন যেহেতু টাইমস নাউয়ের মাধ্যমে আমাকে একটি ফোনের সাহায্যে সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকে আনা হয়েছিল, তাই আমি এই ঘটনার সাথে জড়িত। সে নিউজ ভারতীর লোগো যুক্ত একটি ভিডিও ক্লিপ‚ সুস্পষ্টভাবেই যা নিউজ ভারতীর থেকেই নেওয়া‚ তা চালানো নিয়ে টাইমস নাউয়ের উপর প্রশ্ন তোলে। চ্যানেলটি কিন্তু কখনোই এই দাবি করেনি যে এগুলো তাদের নিজস্ব ভিডিও ক্লিপ্স। তার সমস্যা এটাই ছিল যে ভিডিওগুলি তৈরী করেছিলো মুম্বইয়ের তরুণ ভারত। যদি তরুণ ভারতের কোনো সমস্যা না থাকে এবং সে মহারাষ্ট্রের বাইরে অমারাঠী অঞ্চলে নিউজ ভারতীর জনপ্রিয়তাকে ব্যবহার করে ব্রডকাস্টটি ছড়িয়ে দিতে চায় তো অন্যদের এই নিয়ে সমস্যা কীসের?

তারপরে তিনি দাবি করেন যে নিউজভারতী ডট কমের ক্লিপগুলো টাইমস নাউ চালাচ্ছে‚ আমি তার একজন নিয়মিত লেখক। তাই আমি নাকি নিউজভারতীকে নিয়ন্ত্রণ করি। আর যেহেতু আমি আরএসএসের সদস্য তাই তাঁর অনুমান যে আরএসএস এই ওয়েব পোর্টালটি চালাচ্ছে। প্রথমত, আরএসএস কোনও আদর্শবাদ নামক ধারণায় বিশ্বাস করে না। এটা একটা কমিউনিস্ট ধারণা। আমি কি তবে ধরে নেবো যে প্রতীক একটা কমিউনিস্ট? সে আমায় নিয়ে এত গবেষণা করে ফেলল আর এইটুকু জানে না যে আমি নিয়মিত সমস্ত বড় টিভি চ্যানেলগুলিতে আমন্ত্রিত হই, বিশেষত ইংরেজি নিউজ চ্যানেলগুলিতে? যেহেতু বিষয়টি পালঘরের নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে‚ তাই আমার এই বিষয়ে কথা বলার কোনো অধিকার নেই? নাকি টাইমস নাউয়ের এই নিয়ে কাউকে বিতর্কে আমন্ত্রণ জানানোর অধিকার নেই? এখন কি তবে এর জন্যে প্রতীকের মতো লিবারেলদের থেকে অনুমতি নিতে হবে? আমি তো প্রিন্ট, দ্য কুইন্ট ইত্যাদির জন্যও লিখেছি, এর অর্থ কি এই যে এগুলো সব আরএসএসের মালিকানাধীন বা আমার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত? শেখর গুপ্ত এবং রাঘব বেহল এসব দেখলে হেসে গড়াগড়ি খাবে।

একজন প্রকৃত বামপন্থীর মতো প্রতীক “ভিডিও ক্লিপ্স গুলোর অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহার করার ও ত্রুটিপূর্ণ ওয়েবসাইটের উপর নির্ভর করার অভিযোগ এনেছে। একজন মিথ্যাচারীর মতোই তার কাজ হলো সবকিছুকে কলুষিত করা। কিন্তু সে অভিযোগ করেই সেখান থেকে পালিয়ে যায়। যেহেতু প্রতীক কিছু হোমওয়ার্ক করেছিলো‚ তাই আমাকে বিশেষজ্ঞ না হয়েও এই বিষয়ে কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয়েছে। আমি এই বিষয়ে তার একটি ফেসবুক পোস্ট দেখলাম (https://m.facebook.com/newslaundry/posts/prateek-goyal-discusses-the-excesses-by-security-forces-in-chhattisgarhs-korsegu/2044878708935408)

এখানে তিনি ঝাড়খণ্ড অঞ্চলে নকশালদের উপর অতিরিক্ত অত্যাচার করার অভিযোগ আনছেন পুলিশের বিরুদ্ধে। তিনি কি তবে নকশালদের প্রতি সহানুভূতিশীল? তিনি কিসের ভিত্তিতে নকশালদের ক্লিনচিট দিচ্ছেন? যার তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার আগে তাঁর অনেক সতর্ক হওয়া উচিত।

যে মূল বিষয়ের উপর সম্পূর্ণ গল্পটি দাঁড় করানো হয়েছে তা হলো নিউজ ভারতী নাকি সোন থানাতে থেকে আনা একটি এফআইআরের কথা বলেছিলো এবং নিশ্চিতভাবে পালঘরে সোন বলে কোনো জায়গাই নেই। তিনি কি কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন যাতে নিউজ ভারতীর প্রকাশ করা প্রতিবেদন বা ভিডিওতে বলা হয়েছে যে সোন থানা থেকে এফআইআর আনা হয়েছিল? না। আমি অনেকবার দেখেছি। কিন্তু সম্পূর্ণ গল্পটাই একটা মাত্র শব্দের উপর নির্ভরশীল। সবাই ভিডিওটা আর নিউজ ভারতীর লেখাটা পড়ুন। তারপর ভেবে দেখুন।

তাঁর দ্বিতীয় অভিযোগটি হ’ল পুলিশ এফআইআর কোনও “ষড়যন্ত্র” এর ইঙ্গিত দেয় না। বেচারা প্রতীক নিশ্চয়ই মারাঠী জানে না। তাই, আমি তাকে এফআইআরের তিন নং পৃষ্ঠার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে যেতে অনুরোধ করছি। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে‚ কাট রচলা – যার ইংলিশ অর্থ হয় ষড়যন্ত্র করা হয়েছিলো। আমি আরও একটু তথ্য সংগ্রহ করি। এমনকি প্রথম শ্রেণীর বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (জেএমএফসি) অভিযুক্তদের পিসিআর দেওয়ার আদেশে উল্লেখ করেছে যে এখানে ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। নিউজভারতীর কাছে এই সম্পর্কে বিশদ তথ্য রয়েছে। প্রয়োজন হলে তিনি নিয়ে নিতে পারেন।

কিছুদিন আগে এই অঞ্চলের চিসদা গ্রামে মহারাষ্ট্র পুলিশের আক্রমণ নিয়ে নিউজভারতীর করা প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি প্রশ্ন তোলেন। আচ্ছা আমাদের কি চেনাজানা পুলিশকর্মীদের থেকে পাওয়া খবর নাকি সরকারি প্রতিবেদন–কোনটাকে বিশ্বাস করা উচিত? নিউজভারতীর আর্টিকেলটি বলছে, “দাদরা ও নগর হাভেলি এবং দমন ও দিউ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের এসডিএম / আরডিসি ডা. অপূর্ব শর্মা কর্তৃক জারি করা সরকারী বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে (নং এডিএম/ সিওএল/ সিসি/২০১০/পিএএসএ/৭২ সিলভাসা, তারিখ ৩০/০৪/২০১০) সুরজ লাহানু জিম্মে (২২) এবং জগদীশ চান্দু রাঠোর নামে দুই ব্যক্তি‚ দুজনেই পাতিলপাড়া‚ চিসদা‚ খানভেলে থাকে‚ ১৬/০৪/২০১৮-তে মহারাষ্ট্রের একটি পুলিশ বাসে হামলা চালানোর জন্য ২০০-৩০০ জন লোককে নেতৃত্ব দিয়েছিলো। “তিনি দাবি করেছেন যে কোনও পুলিশ কর্মকর্তার সাথে তিনি কথা বলেছেন‚ যে নাকি তাকে বলেছে সেখানে নক্সালদের কোনো ভূমিকা নেই। কোনও পুলিশ অফিসারকে কি সাংবাদিককে তদন্তের বিবরণী দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়? কীভাবে সে এই তথ্য পেল? মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে, কোনও অফিসার কারও কাছে কিছু প্রকাশ করতে পারেন না‚ তাও আবার একজন ফোনে সাক্ষাৎকার নেওয়া সাংবাদিককে! যদি তা হয়ও তবে প্রতীক পালঘরে এমন বন্ধু বানালো কীভাবে?

স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা দখলে রাখা এই গীর্জা এবং বাম সংগঠনের সাথে তার কী সম্পর্ক রয়েছে? হরিশ রাঠোর কি আসলেই বলেছিলেন যে “ঘটনাটি নকশালদের সাথে কোনোভাবেই সংযুক্ত নয়?” অতুল কুলকার্ণি কি আসলেই নিউজল্যান্ড্রির সাথে কথা বলেছে? মজার বিষয় এই যে তিনি ওয়্যার-এর রিপোর্টটির দিকে ফিরেও তাকাননি‚ যাতে বলা হয়েছিল যে নিহত সাধুরা আদিবাসী ছিলেন, কোনো বাইরের লোক নয়। স্পষ্টতই এটা ছিলো স্থানীয় বাম ও গীর্জার জোটকে বাঁচানোর জন্যে ওয়্যারের একটি ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচার! ধরা পড়ে যাওয়ার পর চুপচাপ তারা খবরটি সরিয়ে নেয়। স্বাভাবিকভাবেই বামপন্থীরা ওয়্যারকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দেবে না। কিন্তু এই প্রতীকই আবার একটা মাত্র শব্দ “সোন থানা” থেকে বিস্তৃত রিপোর্ট তৈরী করে ও ষড়যন্ত্র হওয়ার কথাকে বেমালুম অস্বীকার করে বসে।

তারা হিন্দু নয়‚ হিন্দু দেবতারা কেন তাদের দেবতা নয়‚ তাদের রাবণ দহন করা উচিত না কারণ রাবণ নাকি একজন উপজাতি ও তাদের দেবতা ছিলো এসব বলে বাম-গীর্জা জোট কিভাবে আদিবাসীদের ভেতর ঘৃণার বাতাবরণ ছড়াচ্ছে সেসব নিয়ে নিউজভারতী কথা বলতে পারে কিনা প্রতীক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অথচ সত্যি এটাই উপজাতিরা রামচন্দ্রের পক্ষেই ছিলেন। আবার রাবণ ছিলেন একজন বড় ব্রাহ্মণ। হ্যাঁ সেই ব্রাহ্মণ‚ যাকে সমস্ত বামপন্থীরা ঘৃণা করে।

ভিডিওটিতে উপজাতির শিক্ষক স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যে কীভাবে তাদের সম্পূর্ণ সামাজিক জীবন তাদের হিন্দু পরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

নিউজভারতী রিপোর্টে অন্য কোনো জায়গার নকশালদের মোডাস অপারেন্ডি এবং পালঘর অঞ্চলের আন্দোলনগুলির মধ্যে সমান্তরালতা দেখানো হয় তবে কি তা মিথ্যে সংবাদ পরিবেশন হবে? তিনি কি সত্যিই অস্বীকার করবেন যে, নকশালদের মতোই ফ্রিঞ্জ বাম পাথলগাদি রীতিতে দুটি গ্রামকে চিহ্নিত করেছেন? নিউজভারতী কি রিপোর্টে বলেছিল, যে তারা সাধুদের হত্যা করেছিল? না তারা শুধু উপজাতি শিক্ষক যেমন বলেছিলেন তেমন পরিবেশ সৃষ্টির কথাই লিখেছিলো।

এইসব ঘটনা আমার দৃষ্টিকে একটি দিকে নিবদ্ধ করেছে। আপাতদৃষ্টিতে নকশালদের প্রতি সহানুভূতিশীল প্রতীক (তাঁর নিজের প্রকাশ্যে দেওয়া তথ্য অনুসারে) উপজাতিদের মধ্যে অসন্তুষ্টি ছড়িয়ে মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দিচ্ছে ও এবং কোনো সিরিয়াস তদন্তের ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করছে। তিনি কি তার বন্ধু এনজিও গুলোর মধ্যে তদন্ত বন্ধ করতে চান? যেগুলোর বেশিরভাগই এফসিআরএর অধীনে বিদেশ থেকেও তহবিল পায় এবং সম্ভবত সেগুলি যে উদ্দেশ্যে পাঠানো হয় সেই উদ্দেশ্যে আদৌ ব্যয়িত হয় না। তিনি কি এই তথ্য গোপন রাখতে চান যে বেশিরভাগ প্রোমোটারেরই কেরল থেকে দিল্লি, রাজস্থান থেকে মধ্যভারত থেকে উত্তর-পূর্বভারত, দিল্লি থেকে যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নেটওয়ার্ক আছে? কী হবে যদি সিবিআই এই কেস হাতে নেয়? টুকড়ে টুকড়ে গ্যাঙের এই অশুভ ছায়া থেকে আমাদের দেশের প্রতিটি কোণকে রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। আমাদের এই বিষয়ে সর্বদা সাবধান থাকতেই হবে।

https://www.newsbharati.com/Encyc/2020/5/9/A-Tryst-with-Truth-for-Newslaundry.html

রতন শারদা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.