করোনার সেকেন্ড ওয়েভের ধাক্কার মাঝেই টাউকাটের ভয়। এ কেমন ভয়? ঘূর্ণিঝড়। তা ছোটখাটো নয়। আম্ফানের মতো সুপার সাইক্লোন। হবে না কি আবার? সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে মানুষের মুখে এখন লকডাউনের মতোই আবার আম্ফান – ২ এর ভয় দেখানো খবর ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অন্তত এক সপ্তাহ ধরে বাজার ধরে রেখেছে টাউকাটে নামক ঘূর্ণিঝড়ের আতঙ্ক। তাও আবার বলা হয়েছে আম্ফানের মতোই ওই একই সময়ে আছড়ে পড়তে পারে সেই সাইক্লোন। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশ কুমার দাস জানিয়েছেন, ‘এসব খবর আমাদের কাছেও এসেছে। অনেক জায়গাতেই এসব লেখা হচ্ছে কিন্তু আমাদের কলকাতার অফিস বলুন কিংবা দিল্লির প্রধান অফিস কেউই এমন কোনও সাইক্লোনের কথা বলছি না। এমন কোনও সম্ভাবনাও আমরা এখনও দেখতে পাইনি। এমন হলে মানুষের জীবন বাঁচানোর স্বার্থে আমরা দ্রুত সব কিছু জানিয়ে থাকি। কলকাতা অফিস আগামী ৫ থেকে সাত দিনের পূর্বাভাস দেয়। সেখানে কোনও সম্ভাবনা নেই। এরপরে দিল্লিও ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে বলেও কিছু জানায়নি। হলে জানিয়ে দেওয়া হত’। অভয় দিলেন অধিকর্তা। মৌসম ভবনের তথ্য অনুযায়ী আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর যে অঞ্চলটিকে উত্তর ভারতীয় মহাসাগরের অংশ বলা হয় সেখানে বিচ্ছিন্ন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে মেঘপুঞ্জ। কোনটি ছোট , কোনওটি মাঝারি আকারের। তবে তার কোনও বড় প্রভাব নেই আগামী ১২০ ঘণ্টা বা আগামী ৫ দিনে।
ঘূর্ণিঝড় আতঙ্ক ধীরে ধীরে বড় আকার ধারন করছে কেন? সেখানে দেখা যাচ্ছে বেশ কতগুলি যুক্তি রয়েছে। ১) প্রথমে বলা হচ্ছিল এপ্রিল। তারপরে বলা হচ্ছে মে – জুনেও তা আছড়ে পড়তে পারে এই সাইক্লোন। ঘটনা হল হল মে মাসেই আছড়ে পড়েছিল আম্ফান। হাওয়ায় হাওয়ায় খবরে তাই আতঙ্ক বেড়েছে ২) আম্ফানের খবরও অনেক দিন ধরে শোনা যাচ্ছিল। এক সময় বলেই দেওয়া হয়েছিল মাঝ সমুদ্রে হারিয়ে গিয়েছে সাইক্লোন। পাট চুকে গিয়েছে ঝড়ের। তারপর মাঝ সমুদ্রে থিতু হয়ে বিশাল শক্তি নিয়ে যা ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল সেই ঝড় তা পশ্চিমবঙ্গবাসীর চেয়ে ভালো কে জানে? ৩) বিগত সপ্তাহ দু’য়ের বেশি সময় ধরে গুমোট হয়ে রয়েছে দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া। হাওয়া নেই। আম্ফানের আগেও বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে এমনটাই হচ্ছিল। পরে বলা হয়, সমুদ্র থেকে সমস্ত হাওয়া শুষে নিচ্ছিল সাইক্লোন। এই বিষয়ে কলকাতার আবহাওয়া দফতরের যুক্তি, এমন সময় এমন আবহাওয়াই নাকি থাকে। গরম বেশি হয়। অতিরিক্ত হয়ে গেলে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিও হয়। তাই এমন হচ্ছে।
ঘটনা হল, মার্চ-এপ্রিল-মে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য আদর্শ সময়। এই সময় সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রি পার হয়ে যায়। যা ঘূর্ণিঝড়ের পক্ষে আদর্শ। পাশাপাশি বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প ঘূর্ণিঝড়ের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে এই সময়। আর এপ্রিল-মে মাসেই সব থেকে বেশি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় বঙ্গোপসাগরেই।
যে খবর ছড়িয়েছে সেই অনুযায়ী, ২৯ মার্চ নাগাদ বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে বাংলা, ওডিশা অথবা মায়ানমার উপকূলে আঘাত হানতে পারে। কবে? ৩ থেকে ৪ এপ্রিল নাগাদ। এখন যদি ঘূর্ণাবর্ত ঘূর্ণিঝড়ে পরিনত না হয় তাহলে তা তৈরি হতে মা-জুন মাসও হয়ে যেতে পারে। এমনই বলছে বেসরকারি তথ্য। অনুমান ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘন্টায় প্রায় দেড়শো কিমি। নাম হবে টাউকটে। এরপরে লাইনে রয়েছে যাস, গুলাব, শাহীন, জওয়াদ, অশনি, সিতরং, ম্যানডৌস, মোচা।