নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় রাম মন্দির আন্দোলন নিয়ে তখন উত্তাল সর্বভারতীয় রাজনীতি। ৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়েছে। হিন্দুত্বের রাজনীতিতে তাতে রাতারাতি আরও উত্থান হয়েছে লালকৃষ্ণ আডবাণী ও অটলবিহারী বাজপেয়ীর। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও হিমাচল প্রদেশে খেসারত দিতে হয়েছে বিজেপিকে। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হয়ে গিয়েছে সেখানে।
পরের বছরই হিমাচলে ভোট। বিজেপি স্থির করল নতুন প্রজন্মের থেকে কিছু মুখ তুলে আনা হবে ভোটে। দেখা গেল, হিমাচলের একটি আসনে সমস্ত শক্তি ঢেলে দিয়েছে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার নেতারা। সেখানে প্রার্থী যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নাড্ডা। এমনিতে অমায়িক, হাসিখুশি ও মিতভাষী। বর্তমান টেলিকম মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ তখন যুব মোর্চারই তরুণ নেতা। তিনিও নাড্ডার হয়ে প্রচারের জন্য চলে গিয়েছিলেন হিমাচলে।
দলের সংগঠন থেকে সংসদীয় রাজনীতিতে নাড্ডার উত্থান তখনই। অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের একজন সাধারণ কর্মী থেকে এভাবেই তাঁর উঠে আসা। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি সভাপতি পদের দায়িত্ব নিলেন তিনি।
নাড্ডার জন্ম ১৯৬০ সালের ২ ডিসেম্বর। বাবা নারায়ণলাল নাড্ডা ও মা কৃষ্ণ নাড্ডা। লেখাপড়া বিহারে। পাটনার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পড়াশোনা করেন। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কলা বিভাগে স্নাতক হন। এর পরে চলে আসেন হিমাচল প্রদেশে। সিমলার হিমাচল প্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে লেখাপড়া করেন এবং সেখান থেকেই এলএলবি পাশ করেন।
৯৩ সালে প্রথমবার হিমাচল প্রদেশ থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন তিনি। পরে ১৯৯৮ এবং ২০০৭ সালের ভোটেও জিতেছিলেন। সেই সময়ে তিনি হিমাচল প্রদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ ও পরিষদীয় দফতরের মন্ত্রিত্ব সামলান। তবে বিজেপির অন্দরে তাঁর নাম আরও আগে থেকেই ছিল প্রথম সারিতে। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থার সময়ে ৪৫ দিন জেলেও ছিলেন জগৎপ্রকাশ।
৫৯ বছরের নাড্ডা প্রথমে মোদী মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। দ্বিতীয় বার নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এলেও নাড্ডাকে আর মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। তাঁকে নিয়ে আসা হয় দলের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বে। সেদিনই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বুঝে গিয়েছিলেন অমিত শাহর পরে তাঁকেই সভাপতির চেয়ারে বসাতে চায় বিজেপি। আগে থাকতেই দলের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার জন্যই কার্যকরী সভাপতি করা হয়েছে জেপি নাড্ডাকে। ২০১৯ সালের মে মাসে কার্যকরী সভাপতি হন আর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে পেলেন সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব।
অনেকের মতে, নাড্ডার এই উত্থানের নেপথ্যে সঙ্ঘ পরিবারের প্রভাবও রয়েছে। বলতে গেলে ২০১০ সালের আগে জাতীয় রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত মুখ ছিলেন না তিনি। ২০১০ সালে নিতীন গড়কড়ি বিজেপি সভাপতি হওয়ার পরে তাঁকে সাধারণ সম্পাদক করেন। তখন থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিতি গড়ে উঠতে শুরু করে নাড্ডার। ২০১২ সালের এপ্রিলে রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন। তখন সাংগঠনিক দায়িত্বও বেড়ে যায় অনেকটাই। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে ছিলেন।
আর হ্যাঁ শ্বশুরবাড়ি সূত্রে নাড্ডার আবার বাঙালি-যোগও রয়েছে। তাঁর স্ত্রী হলেন মল্লিকা নাড্ডা। মল্লিকার মা-ও ছিলেন বিজেপিতে—মধ্যপ্রদেশের সাংসদ জয়শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়।