প্রপার্টি কার্ড চালু প্রধানমন্ত্রীর, গ্রামীন ভারতের ছবি বদলে দেবে ‘স্বামীত্ব যোজনা’, দাবি মোদীর

দেশের প্রতিটি গ্রামকে স্বনির্ভর করতে স্বামীত্ব যোজনা প্রকল্পের আওতায় প্রপার্টি কার্ড চালু করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রবিবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই প্রকল্পের সূচনা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দাবি, এই যোজনার ফলে গ্রামবাসীরা তাদের জমি ও সম্পত্তির মালিকানা থেকে বঞ্চিত হবেন না। গ্রামে গ্রামে সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে বিবাদ ঘুচবে। এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রামীণ ভারতের ছবি বদলে দেবে বলেই দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিনের উদ্বোধনের পরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের জমি ও সম্পত্তি অর্থনৈতিক লগ্নী হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। এর মাধ্যমে লোন নেওয়া ও অন্যান্য অর্থনৈতিক সুবিধা পাবেন তাঁরা।

প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে জানানো হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার উপভোক্তার কাছে মেসেজের মাধ্যমে একটি লিঙ্ক পাঠানো হবে। সেই লিঙ্কে ক্লিক করেই নিজেদের প্রপার্টি কার্ড ডাউনলোড করতে পারবেন তাঁরা। পরবর্তীকালে বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলি মানুষের হাতে প্রপার্টি কার্ড তুলে দেবে বলে জানানো হয়েছে।

আরও জানানো হয়েছে, ছ’টি রাজ্যের ৭৬৩ টি গ্রামের বাসিন্দারা প্রাথমিকভাবে এই প্রপার্টি কার্ডের সুবিধা পাবেন। তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ৩৪৬, হরিয়ানার ২২১, মহারাষ্ট্রের ১০০, মধ্যপ্রদেশের ৪৪, উত্তরাখণ্ডের ৫০ ও কর্নাটকের ২টি গ্রামের বাসিন্দারা উপকৃত হবেন।

স্বামীত্ব (সার্ভে অফ ভিলেজেস অ্যান্ড ম্যাপিং উইথ ইম্প্রোভাইজড টেকনোলজি ইন ভিলেজ এরিয়াজ) প্রকল্পের আওতায় যাঁরা সুবিধা পাচ্ছেন, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এই প্রপার্টি কার্ডের জন্য তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানান।

পঞ্চায়েতরাজ দিবসে প্রতিটি গ্রামকে স্বনির্ভর হওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির কাজের দক্ষতা বাড়াতে ও প্রয়োজনীয় তথ্য জোগাতে ‘ই-গ্রামস্বরাজ অ্যাপ’ এবং গ্রামীণ ভারতের জমি-সম্পত্তির মালিকানা সংক্রান্ত ‘স্বামীত্ব যোজনা’-র উদ্বোধন করেন।

জানা গিয়েছে, স্বামীত্ব যোজনার আওতায় আসবে ৬ লক্ষ ৬২ হাজার গ্রাম। ডিজিটাল ভারতে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকাকেও পুরোদস্তুর ডিজিটাল সুযোগসুবিধার আওতায় আনতেই এই স্বামীত্ব যোজনা প্রকল্পের সূচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গ্রামোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা নিতে চলেছে এই যোজনা। এই উদ্যোগে গ্রামের জমি ও সম্পত্তি সংক্রান্ত মালিকানা নিয়ে ঝামেলা ঝঞ্ঝাট থাকবে না। ড্রোনের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের জমি ম্যাপিং করা হবে। জিপিএস ম্যাপিংয়ে সম্পত্তির খতিয়ান তৈরি হবে। এর ভিত্তিতেই কোন পরিবারের সম্পত্তি কতটুকু সেটা নির্ধারণ করা হবে। জমি ও সম্পত্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নথিবদ্ধ থাকবে ডিজিটাল অ্যাপে। কাজেই মালিকানার ভাগ নিয়ে কোনও বিবাদ হবে না। গ্রামবাসীরা তাদের প্রাপ্য সম্পত্তিই ভোগ করতে পারবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আত্মনির্ভর ভারত গড়ার লক্ষ্যে এটাই প্রথম ধাপ। জেলা থেকে গ্রাম, আত্মনির্ভর হবে প্রতিটি পরিবার। শহর শুধু নয় গ্রামাঞ্চলকেও ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় আনা যাবে।
স্বামীত্ব যোজনার সঙ্গেই আরও দুটি ডিজিটাল অ্যাপ চালু করার লক্ষ্যও রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। ই-গ্রাম স্বরাজ অ্যাপ ও পঞ্চায়েতী রাজ অ্যাপ।

এই দুটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে গ্রামীণ পঞ্চায়েতগুলির যাবতীয় তথ্য নথিবদ্ধ থাকবে। পঞ্চায়েতের কাজ কী ভাবে হবে সেই রূপরেখা বাতলে দেবে এই অ্যাপ। কোন কাজে কী অর্থ বরাদ্দ হবে, কোন কাজ কতটা এগোলো, তার খুঁটিনাটি পাওয়া যাবে এই অ্যাপে। ভবিষ্যতে একটাই অ্যাপ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতের কাজের সমস্ত তথ্য পাওয়া যাবে। গ্রামবাসীরাও জানতে পারবেন তাদের পঞ্চায়েত কী কী কাজ করছে গ্রামের উন্নতির জন্য। এতে পঞ্চায়েতের কাজের স্বচ্ছতাও বজায় থাকবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পঞ্চায়েত ব্যবস্থার ভিত যদি মজবুত হয় এবং কাজের স্বচ্ছতা বজায় থাকে, তাহলে গ্রামীণ এলাকায় সকলেই উন্নয়নের সুবিধা পাবে। স্বাবলম্বী পঞ্চায়েত গড়ে উঠবে। গ্রামীণ অর্থনীতিরও বিকাশ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.