গত মাসে জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, লকডাউন হচ্ছে শেষ অস্ত্র। তা এখনই প্রয়োগ করা হচ্ছে না। কিন্তু ভারতে প্রতিদিন কোভিড সংক্রমণ যে ভাবে বল্গাহীন আকার নিচ্ছে তাতে যত দ্রুত সম্ভব ভারতে কয়েক সপ্তাহের পূর্ণ লকডাউন জারি করা উচিত বলে উপদেশ দিলেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা অ্যান্থনি ফৌজি।
অ্যান্থনি নিজে একজন মহামারী বিশেষজ্ঞ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পূর্ণ লকডাউনের কথা বলেছেন তিনি। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, অক্সিজেন, ওষুধ, পিপিই কিটের মতো চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জাম সরবরাহ মসৃণ রাখতে হবে। অর্থাৎ একদিকে লকডাউন এবং অন্যদিকে সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিষেবা—দুটিকে সমান্তরাল ভাবে চালাতে পারলে তবেই সংক্রমণ রোখা সম্ভব।
ওই সাক্ষাৎকারে কোনও সরকারের নাম না নিয়েই ডাক্তার অ্যান্থনি বলেছেন, “অনেকটা আগেই জয় ঘোষিত হয়েছিল।” অনেকের মতে, মোদী সরকারের উদ্দেশেই এই মন্তব্য করেছেন বাইডেনের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা।
ঠিক কী বলেছেন অ্যান্থনি?
তাঁর কথায়, “ভারতে সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে জরুরি ভিত্তিতে পূর্ণ লকডাউন প্রয়োজন। তা কয়েক সপ্তাহ ধরে চালানো উচিত। কেউ দেশকে তালাবন্ধ রাখতে চায় না। কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে হবে। সেই পরিস্থিতির কথা অনুধাবন করেই বলছি, এখনই ভারতে পূর্ণ লকডাউন দরকার।”
সেই সঙ্গে তিনি এও বলেছেন , “আমি টানা ছ’মাস লকডাউন করার কথা বলছি না। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ টানা লকডাউন প্রয়োজন। যা সংক্রমণের চক্রকে ভেঙে দেবে। লকডাউন ঘোষণা করে তা সঠিক ভাবে কার্যকর করতে হবে। তবেই সংক্রমণ রোখা সম্ভব।” তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “লকডাউনের পাশাপাশি চিকিৎসা পরিষেবাও চালিয়ে যেতে হবে সমান তালে। অক্সিজেন জোগান নিশ্চিত করতে হবে। পিপিই কিট, ওষুধ-সহ অন্যান্য সামগ্রীর সরবরাহও রাখতে হবে স্বাভাবিক।”
তিনি সাক্ষাৎকারে চিনের উদাহরণ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “গতবার চিনে যখন সংক্রমণ মাত্রা ছাড়াল, তখন তারাও পূর্ণ লকডাউন করেছিল। সেই লকডাউন ছিল ধাপে ধাপে। কখনও কয়েক সপ্তাহ। কখনও টানা আড়াই মাস। যখন যেমন পরিস্থিতি হয়েছে।”
অনেকের মতে, অ্যান্থনি ফৌজি ভারতের বিপুল জনসংখ্যা ও জনঘনত্বের কথা মাথায় রেখেই এই উপদেশ দিয়েছেন। কারণ এই ঘন জনবসতিপূর্ণ দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণের সম্ভাবনা বিপুল।
এমনিতেই দেশে রেকর্ড ভাঙা সংক্রমণ হচ্ছে প্রতিদিন। শনিবার সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে চার লক্ষাধিক মানুষ নতুন করে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষের। এমনিতেই বিভিন্ন রাজ্য পূর্ণ লকডাউনের পথে হাঁটতে শুরু করেছে। বাংলাতেও আজ থেকে আংশিক লকডাউন শুরু হয়েছে। ঠিক সেই সময়েই মার্কিন প্রশাসনের স্বাস্থ্য উপদেষ্টার এউ মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত অনেকের।