লাদাখে দুই কুঁজের উটকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সেনাবাহিনী, চিনের দিকে নজর রাখবে, অস্ত্রশস্ত্র বইবে

এক কুঁজের উট ভারতীয় বাহিনীর হাতে আছেই। তবে দুই কুঁজের উট বিশেষ নেই। এই প্রজাতির উট মূলত পাওয়া যায় লাদাখের নুব্রা উপত্যকায়। এরা আরও বেশি মালপত্র বইতে পারে। উঁচু পাহাড়ি উপতক্যায় পেট্রোলিংয়ের সময় অস্ত্রশস্ত্র, রসদ বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুই কুঁজের উট সবচেয়ে বড় ভরসা হবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর। তাছাড়া ঠিক মতো প্রশিক্ষণ দিতে পারলে সীমান্ত পাহারা দেওয়ার কাজেও লাগানো যেতে পারে এই উট বাহিনীকে।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা তথা এলএসি পেরিয়ে লাল ফৌজ যখন তখন ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ছে। কয়েকমাস আগেই নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে চিনের এক সেনাকে আটক করেছিল ভারতীয় বাহিনী। গোপনে ভারতীয় নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে পড়ার জন্য সর্বক্ষণই মুখিয়ে আছে লাল সেনা। একদিকে গালওয়ান উপত্যকা, অন্যদিকে প্যাঙ্গংয়ের পাহাড়ি খাঁজ ও দেপসাং মালভূমি, চিনের সেনাদের সবচেয়ে বড় টার্গেট। তাই এখন লাদাখের পাহাড়ি এলাকায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে নজরদারি চালানো হচ্ছে। পাহাড় চূড়াগুলিতে বসানো হয়েছে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের বাহিনীকে। এই উঁচু পার্বত্য এলাকায় সেনাবাহিনীর বিন্যাস মাঝে মাঝেই বদল করা হয়। তাদের কাছে অস্ত্র, খাদ্য ও অন্যান্য জরুরি রসদ পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাই উট নামানোর কথাই ভাবা হয়েছে। তাছাড়া সঠিক প্রশিক্ষণ দিলে নজরদারির জন্যও লাগানো যেতে পারে দুই কুঁজের উটকে।

Bactrian camel - Picture of Sand Dunes Leisure Park, Leh - Tripadvisor
দুই কুঁজের উট নামিয়ে কী কী সুবিধা হবে?

প্রথমত, এক কুঁজের উটের থেকে এই দুই কুঁজের উট কম সময় অনেক বেশি পথ পাড়ি দিতে পারে। বিশেষত, খাড়া পাহাড়ি ঢাল, পাহাড়ি খাঁজে অবলীলায় ভারী জিনিসপত্র বয়ে নিয়ে যেতে পারে। লাদাখের ১৭ হাজার ফুট উচ্চতাতেও পেট্রোলিংয়ের কাজে লাগানো যেতে পারে এই উটকে।

দ্বিতীয়ত, অনেক বেশি ভার বইতে পারে। এক কুঁজের উট যেখানে ৪০ কিলোগ্রাম অবধি ওজন নিয়ে যেতে পারে। দুই কুঁজের উট তার পাঁচ গুণেরও বেশি ওজন বইতে পারে। কম করেও ১৭০ কিলোগ্রাম ওজন বয়ে নিয়ে যেতে পারে এরা। তাও আবার এবড়ো খেবড়ো পাহাড়ি ঢাল দিয়ে।

Double hump camel to help Army patrol China border - The Kashmir Monitor

ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও এখন এই প্রজাতির উটকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেছে। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে কোনও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া সইতে পারে এই প্রজাতির উটরা। ১৫ থেকে ১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় নজরদারির কাজে লাগানো যেতে পারে এই উটকে। অস্ত্রশস্ত্র, নজরদারির সামগ্রী, গোলাবারুদ সবই উটের পিঠে চাপিয়ে নিয়ে যেতে পারবে সেনাবাহিনী।

Pin on Animals

সীমান্ত পাহারা দেওয়ার পদ্ধতিও শেখানো হবে তাদের। সীমানা পেরিয়ে বিপক্ষের সেনা ঢুকে পড়লে সঙ্কেত দিতে পারবে এই প্রজাতির উটরা। তার জন্য ট্রেনিং দেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে।

ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, প্যাঙ্গং হ্রদের উত্তর ও দক্ষিণে যেভাবে জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে চিন, তাতে এক মুহূর্তের জন্য অসর্তকতাও বিপদ ডেকে আনতে পারে। কালা টপ, হেলমেট পাহাড়ের নীচে যুদ্ধট্যাঙ্ক সাজিয়ে বসে গেছে তারা। চুসুল, মলডোর কাছেও লাল ফৌজের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে শত্রু সেনার অবস্থান জানার জন্য পাহাড়ি কুকুরের দক্ষতাকেও কাজে লাগাচ্ছে সেনাবাহিনী। পূর্ব লাদাখের গ্রামগুলি থেকে বাখারওয়াল, তিব্বতি ম্যাস্টিফ প্রজাতির কুকুরদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ চলছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পাহারা দেওয়ার কাজে, শিকার ধরা বা অন্যান্য কাজে এই কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরা দুরন্ত শিকারি, ঘ্রাণ শক্তি খুবই বেশি। তার থেকেও বড় কথা পাহাড়ি খাঁজ বা উপত্যকাতেও তাদের গতি প্রশংসনীয়। এই প্রজাতির কুকুরকে অনেকসময়ই সেনা ছাউনি পাহারার কাজে লাগান জওয়ানরা। ম্যাস্টিফ জাতীয় কুকুরকে সঠিক ট্রেনিং দিলে তারা নেকড়ের থেকেও বেশি আক্রমণাত্মক হতে পারে। তাছাড়া ঘন লোমে ঢাকা এই কুকুর পাহাড়ি এলাকার দুর্গম পরিবেশেও মানিয়ে নিতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.