গোগরা-হটস্প্রিং থেকে সরছে ভারত ও চিনের সেনা, অস্থায়ী ছাউনি তুলে নিয়েছে লাল ফৌজ

পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিন ও ভারতীয় সেনার মুখোমুখি সংঘর্ষের প্রায় ১৫ মাস পরে গোগরা ও হট স্প্রিং এলাকা থেকে সেনা সরাতে (ডিসএনগেজমেন্ট) রাজি হয়েছে চিন। দফায় দফায় দুই দেশের সেনা কম্যান্ডার পর্বের বৈঠকের পরে বরফ গলছে বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগেও গোগরা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার কথা বললেও চিন রাজি হয়নি। বদলে গোগরা হটস্প্রিং ও গালওয়ান উপত্যকা থেকে ২ কিমি করে মোট ৪ কিলোমিটার এলাকায় তৈরি হয়েছিল বাফার জোন। ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, এবার গোগরা থেক পুরোপুরি ছাউনি তুলে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে চিনের লাল ফৌজ।

চলতি মাসের শুরুতে চুসুল-মলডোতে প্রায় ৯ ঘণ্টা ধরে দুই দেশের সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ে বৈঠক চলে। মূলত দু’দেশের সীমান্তে হট স্প্রিং ও গোগরা এলাকায় সেনা সরানো নিয়ে সেই বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল। দু’দেশের মধ্যে এই দ্বাদশতম বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলে লে-তে অবস্থিত ১৪ কোরের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল পি জি কে মেনন ও বিদেশ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব (পূর্ব এশিয়া) নবীন শ্রীবাস্তব। উল্টো দিকে চিনের প্রতিনিধিত্ব করেন সে দেশের সেনার ওয়েস্টার্ন থিয়েটারের কম্যান্ডার জিউ কিউলিং। এই বৈঠকের পরেও চিন সেনা সরাতে রাজি হবে কিনা সে নিয়ে সংশয় ছিল। ভারতের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আগে গোগরা ও হট স্প্রিং এলাকা থেকে সেনা সরাতে হবে চিনকে, তবেই পরবর্তী পদক্ষেপ করবে ভারত। নচেৎ নয়। তবে চিনের সেনা যে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, সে সন্দেহও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভারতীয় সেনা সূত্র জানাচ্ছে, সবরকম পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য তৈরি রয়েছে ভারতীয় বাহিনী। এর আগেও সেনা সরিয়ে নেওয়ার নাম করে, লাদাখের অন্যান্য স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে নতুন করে সেনা মোতায়েন করতে শুরু করেছিল চিন।

India-China standoff: Disengagement complete at Galwan, Hot Springs, Gogra  in Ladakh - India News

India-China standoff: Disengagement complete at Galwan, Hot Springs, Gogra in Ladakh – India News

পূর্ব লাদাখে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রথম নয়। আগেও বহুবার হয়েছে। কিন্তু সামরিক ও কূটনৈতিক স্তরে বৈঠকের পরে তার সমাধানও করা গেছে। কিন্তু ১৫ জুন গালওয়ানের মুখোমুখি সংঘাতের পরে সীমান্ত পরিস্থিতি চরমে ওঠে। দফায় দফায় বৈঠকেও শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। বরং প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উত্তেজনা আরও বেড়েছে। ভারতীয় প্রতিরক্ষা সূত্র জানাচ্ছে, উত্তর ও দক্ষিণ প্যাঙ্গং লেক ও তার সংলগ্ন পাহাড়ি খাঁজ থেকে লাল সেনা সরেছে ঠিকই, তবে অন্যদিকে গোগরা, হট স্প্রিং, দেপসাং ভ্যালিতে নতুন করে সেনা মোতায়েন শুরু করেছিল পিপলস লিবারেশন আর্মি। অস্ত্রসস্ত্রও মজুত হচ্ছিল। তবে এখন সেইসব অস্থায়ী ছাউনি তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেই খবর।

প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা (এলএসি) বরাবর ১৫ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্টকে (পিপি) বলে গোগরা পোস্ট। গত বছর মে মাসে এই গোগরা পোস্ট দিয়েই ভারতীয় সীমায় ঢুকে পড়েছিল চিনের বাহিনী। এলএসি-র ১৭ নম্বর পেট্রোলিং পয়েন্ট থেকে পিপি-১৭এ অবধি এলাকাকে বলে হট স্প্রিং। গত বছর চিনের সেনা এই এলাকায় ঢুকে পড়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল। ভারতীয় বাহিনী সজাগ থাকায় হাতাহাতি করেই ফিরে যেতে হয় তাদের।

প্রতিরক্ষা সূত্র বলছেন, আন্তর্জাতিক সীমান্ত চুক্তি মাফিক কোনও দেশের সেনাই বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হতে পারে না। আঞ্চলিক সীমান্তগুলির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য চুক্তিবদ্ধ দুই দেশই। কিন্তু চিনের বাহিনী সে চুক্তি বারে বারেই লঙ্ঘণ করেছে। গালওয়ানের সংঘাত তার অন্যতম বড় প্রমাণ। সেনা ঢুকিয়ে জোরজবরদস্তি আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা সম্ভব নয় বুঝেই চিন ঘুরপথে একটু একটু করে সীমান্তে তাদের শক্তি বাড়িয়ে চলেছে। ভারতের সীমান্ত বারবর এমন অনেক জনপদ তৈরি করে রেখেছে চিন, যেখানে সেনাদের বসবাস করা ও যুদ্ধাস্ত্র মোতায়েন রাখার মতো ব্যবস্থা রয়েছে। তাই লাদাখে এখনই শান্তি ও সুস্থিতি ফিরবে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.