তিব্বতে সমরসজ্জা বাড়িয়েই চলেছে চিন, পরোয়া নেই, তৈরি ভারতও: বিপিন রাওয়াত

লাদাখ সীমান্তে সমঝোতা করতে রাজি হলেও তিব্বতে সেনা বাড়িয়েই চলেছে চিন। একের পর এক সামরিক কাঠামো তৈরি হচ্ছে। লাদাখের পাহাড়ি এলাকা দখলে নেওয়ার জন্য ঘুরপথে তৈরি হচ্ছে চিন, এমনটাই জানালেন চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত। তাঁর বক্তব্য, চিন যতই কৌশল করুক না কেন ভারত যে কোনও পরিস্থিতির জন্যই তৈরি। অন্যায়ভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টা কিছুতেই বরদাস্ত করা হবে না।

চিফ অব ডিফেন্স স্টাফের কথায়, লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারতীয় বাহিনীকে ব্যস্ত করে রাখছে লাল ফৌজ। অন্যদিকে, তিব্বতে সামরিক কাঠামো গড়ে তুলছে তারা। তবে চিন্তার কোনও কারণ নেই বলেই জানিয়েছেন রাওয়াত। কারণ ভারতীয় বাহিনীও একই ভাবে চিনকে রোখার জন্য কৌশলগত পদক্ষেপ নিয়েই রেখেছে। বিশেষত ভারতের পার্বত্য বাহিনি তথা স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সকে যে কোনও পরিস্থিতির জন্যই তৈরি রাখা হয়েছে।

ভরতীয় সেনা জানাচ্ছে, হট স্প্রিংয়ের কাছে দুই দেশের বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পরে জুলাই মাস থেকেই তিব্বতে তৎপর পিপলস লিবারেশন আর্মি। শিকুয়ানহি ও তার আশপাশের এলাকাজুড়ে বিশাল সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তুলছে চিনের বাহিনী। তৈরি হচ্ছে হেলিপ্যাড। অন্তত পাঁচ হাজার সেনা ও অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েনের মতো পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে ওই এলাকায়। এর আগে ওই এলাকায় এমন পরিকাঠামো দেখা যায়নি। নতুন করেই নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাওয়াত বলছেন, চিনের লাল ফৌজের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে আকসাই চিনেও। ওই এলাকাকে বরাবরই ‘বিতর্কিত ভূখণ্ড’ বলে দাবি করে এসেছে ভারত। মানচিত্রে ভারতের উত্তর ও পূর্বে চিনের অধিকৃত তিব্বতের সঙ্গে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। ভারত বরাবরই দাবি করে এসেছে, ওই সীমান্তবর্তী এলাকার একটা বড় অংশ চিন অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। ১৯৬২ সাল ভারত-চিন যুদ্ধের সময় লাদাখ ঘেঁষা আকসাই চিন দখল করেছিল চিনের বাহিনী। এরপরে আরও কয়েকধাপ এগিয়ে প্যাঙ্গং লেকের উত্তরে পাহাড়ি এলাকা, গালওয়ান উপত্যকা, দেপসাং, গোগরা, হট স্প্রিং থেকে একেবারে দৌলত বাগ ওল্ডি পর্যন্ত এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করা শুরু করে চিন। গালওয়ানে সংঘর্ষের পর থেকে ফের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় মরিয়া তারা। এমনকি এও দেখা গিয়েছে, কারাকোরাম পাসের ৩০ কিলোমিটার পূর্বে সমর লুঙ্গপায় ছোট ছোট ঘর তুলছে চিনা বাহিনী। রেচিন লা-র দক্ষিণে সাজুন পাহাড়ের কাছেও এমন নির্মাণকাজ দেখা গিয়েছে। এই সাজুন পাহাড়ের কাছে আন্তর্জাতিক সীমানা রয়েছে। তাই মনে করা হচ্ছে, ভবিষ্যতের কথা ভেবেই চিনা ফৌজ তাদের প্রস্তুতি সেরে রাখছে।

তবে লাল সেনাকে ঠেকাতে পার্বত্য বাহিনীর পাশাপাশি যথেষ্ট অস্ত্রশস্ত্রও মজুত রেখেছে ভারত। লাদাখে ইতিমধ্যেই কুইক রিঅ্যাকশন সারফেস টু এয়ার মিসাইল মোতায়েন করা হয়েছে। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমকে আরও মজবুত করতে ডিআরডিও (ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন)-র বানানো বিয়ন্ড ভিসুয়াল রেঞ্জ এয়ার-টু-এয়ার ‘অস্ত্র’ মিসাইল এবং সারফেস-টু-সারফেস ল্যান্ড অ্যাটাক  ‘নির্ভয়’ ক্রুজ মিসাইল প্রস্তুত রেখেছে ভারতীয় বাহিনী। সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল ব্রাহ্মসের সবকটি ভার্সনই প্রস্তুত আছে। সূত্রের খবর, আকসাই চিন শুধু নয় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার ৩,৪৮৮ কিলোমিটার রেঞ্জে কাশগড়, হোটান, নিংচিতে মিসাইল সিস্টেম তৈরি করছে চিনের সেনা। তাই চিনা বাহিনীকে সবদিক থেকে রুখতে আরও ভারত তার সেরা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকেই ফোরফ্রন্টে রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.