এক দিনে নতুন সংক্রমণ বেড়ে ২ লাখ ৬১ হাজার, সব পরিসংখ্যান ভেঙে দেড় হাজার পেরলো মৃত্যু

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ কি উল্টে দেবে সমস্ত হিসেব নিকেশ? যে হারে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে চলেছে, তা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই এমন প্রশ্ন ঘুরছে বিশেষজ্ঞ মহলে। তাঁদের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, ফের এক বার হাতেনাতে তার প্রমাণ মিলল। এ বার দৈনিক নতুন সংক্রমণ এবং মৃত্যু আগের সব রেকর্ড ছাপিয়ে গেল।

রবিবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে, সেই অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন ২ লক্ষ ৬১ হাজার ৫০০ জন। বৃহস্পতিবার থেকে দেশে দৈনিক সংক্রমণ ২ লক্ষের উপরেই রয়েছে। কিন্তু গত দেড় বছরে এক দিনে এত জন মানুষের সংক্রমিত হওয়ার রেকর্ড নেই। সংক্রমণে এই রেকর্ড বৃদ্ধির জেরেই দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১ কোটি ৪৭ লক্ষ ৮৮ হাজার ১০৯ হয়েছে।

অন্য দিকে, গত ৯ মার্চই দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দৈনিক মৃতের সংখ্যা কমে ৭৭-এ নেমে এসেছিল। কিন্তু তার পর দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে দৈনিক মৃতের সংখ্যা সর্বোচ্চে গিয়ে ঠেকল। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১ হাজার ৫০১ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। করোনার প্রকোপে এখনও পর্যন্ত ১ লক্ষ ৭৭ হাজার ১৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন দেশে।

ভারতে দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণ

এমন পরিস্থিতিতে শনিবারই প্রতিষেধকের উৎপাদন বাড়িয়ে টিকাকরণে জোর দেওয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতিষেধকের জোগানে ঘাটতি নিয়ে ইতিমধ্যেই অভিযোগ করেছে একাধিক রাজ্য। তার মধ্যেও প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে দেশের ১২ কোটি ২৬ লক্ষ ২২ হাজার ৫৯০ জন নাগরিক কোভিড-১৯ প্রতিরোধী প্রতিষেধক পেয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রতিষেধক পেয়েছেন ২৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৯৪৯ জন নাগরিক।

আগের তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষাও বেড়েছে। প্রতি দিন যতগুলি নমুনা পরীক্ষা হয় এবং তার মধ্যে যতগুলির রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তাকে সংক্রমণের হার বলা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩৯৪টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এই মুহূর্তে দেশে সংক্রমণের হার ৫.৫৫। বর্তমানে দেশে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১৮ লক্ষ ১ হাজার ৩১৬। মোট আক্রান্তের মধ্যে এখনও পর্যন্ত দেশে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ কোটি ২৮ লক্ষ ৯ হাজার ৬৪৩ জন রোগী। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লক্ষ ৩৮ হাজার ৪২৩ জন।

সংক্রমণের নিরিখে গোটা বিশ্বে এই মুহূর্তে আমেরিকার পরেই স্থান ভারতের। ব্রাজিল নেমে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে। মৃত্যুর নিরিখে বিশ্বতালিকায় চতুর্থ তালিকায় রয়েছে ভারত। এমন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা ও টিকাকরণ না বাড়ালে সংক্রমণ ঠেকানো অসাধ্য হয়ে দাঁড়াবে বলে মত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু টিকাকরণের শ্লথ গতি, ওষুধ, অক্সিজেন এবং প্রতিষেধকে ঘাটতির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকেই কাঠগড়ায় তুলেছে একাধিক রাজ্য।


এই মুহূর্তে দেশে করোনার প্রভাব সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রেই। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে শনিবার প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত বলে তাঁকে জানানো হয়। সেই নিয়ে প্রকাশ্যে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন উদ্ধব। এ দিকে মহারাষ্ট্রে দৈনিক সংক্রমণ একলাফে বেড়ে ৬৭ হাজার ১২৩ হয়ে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৪১৯ জন করোনা রোগী প্রাণ হারিয়েছেন। দিল্লিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৭ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ছত্তীসগঢ়ে মারা গিয়েছেন ১৫৮ জন করোনা রোগী। উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত, কর্নাটকেও যথাক্রমে ১২০, ৯৭ এবং ৮০ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মধ্যপ্রদেশ ও পঞ্জাবে যথাক্রমে ৬৬ ও ৬২ জন করে প্রাণ হারিয়েছেন।

ভোটের মরসুমে বিপুল জনসমাগমের জেরেই নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে বলে সম্প্রতি অভিযোগ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এর জন্য কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বকে দায়ী করেছে তারা। বলা হয়, ‘বহিরাগত’দের নিয়ে এসে রাজ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছেন গেরুয়া নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গেও দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে ৭ হাজার ৭১৩ হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে বাংলায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.