একেই বলে খাল কেটে কুমির আনা! তোলাবাজি ও ঘুষের অভিযোগে আরিয়ান খান মাদক মামলা সহ মোট ছয়টি তদন্ত থেকে সমীর ওয়াংখেড়ে-কে সরিয়ে নিজের বিপদই বাড়ালেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিক। সমীর ওয়াংখেড়ের হাত থেকে মোট ছয়টি মামলার তদন্ত শুরু করেছে প্রাক্তন সিবিআই কর্তা সঞ্জয় সিংয়ের নেতৃত্বে এনসি বি(NCB)-র বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT)। সূত্রের খবর, সিটের তদন্তকারী দল এবার নবাব মালিকের জামাতা সমীর খানের জামিন বাতিল করে দেওয়ার আবেদনও জানাতে পারে।
এএনআই সূত্রে খবর, গতমাসেই সমীর খান-এর জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়েছিল। এনসিবির বিশেষ তদন্তকারী দল যে ৬টি মামলার তদন্তভার নিয়েছে, তারমধ্যে নবাব মালিকের জামাতা সমীর খানের মামলাও রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই মামলাতেই এ বার আদালতে জামিনের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে বিশেষ তদন্তকারী দল।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিকের জামাতার নাম জড়িয়েছিল মাদককাণ্ডে। প্রায় ২০০ কেজি মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির সঙ্গে সমীর খানের যোগাযোগ ও ২০ হাজার টাকার লেনদেনের প্রেক্ষিতেই এনসিবি সমন জারি করেছিল সমীর খানের বিরুদ্ধে। একটানা জেরার পর তাঁকে গ্রেফতার করে এনসিবি। তবে সেপ্টেম্বর মাসেই তাঁকে জামিন দেয় আদালত। সেই সময় নবাব মালিক দাবি করেছিলেন, এনসিবি যে জিনিসকে মাদক বলে দাবি করছে, তা আসলে ভেষজ তামাক।
পরবর্তী সময়ে মামলাটি ধামাচাপা পড়ে গেলেও মুম্বইয়ের প্রমোদতরী থেকে গত ২ অক্টোবর মাদক উদ্ধার ও সেই মামলায় আরিয়ান খানের গ্রেফতারির পরই ফের একবার এনসিবির বিরুদ্ধে সরব হন এনসিপি নেতা নবাব মালিক। তিনি অভিযোগ করেন, এনসিবি চক্রান্ত করে আরিয়ান খানকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। মাদক কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার সমীর ওয়াংখেড়ের বিরুদ্ধেও তোলাবাজি, ঘুষ নেওয়া, ফোন ট্যাপ করা এবং ভুয়ো উপজাতি সার্টিফিকেট দেখিয়ে আসন সংরক্ষণ করার অভিযোগ এনেছেন নবাব মালিক। মহারাষ্ট্র ও বলিউডের ভাবমূর্তিকে বিনষ্ট করার অভিযোগও এনেছেন তিনি।
সম্প্রতিই তিনি একটি হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটও প্রকাশ করেছেন, যেখানে তিনি দাবি করেছেন সমীর ওয়াংখেড়ের বোনের সঙ্গে একজন মাদক পাচারকারীর যোগাযোগ ছিল। এনসিবি আধিকারিকই অভিনেতাদের ফাঁসিয়ে টাকা আদায়ের ছক কষেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। যদিও এই সমস্ত অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছেন সমীর ওয়াংখেড়ে ও তাঁর পরিবার। তাদের দাবি, ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণেই নবাব মালিক এই ধরনের অবাস্তব অভিযোগগুলি আনছেন এবং এনসিবির ভাবমূর্তি খারাপের চেষ্টা করছেন।
এদিকে, আরিয়ান খানের মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরই সমীর ওয়াংখেড়ে বলেন,”আমি এখনও এনসিবির মুম্বই শাখার জ়োনাল ডিরেক্টর। আমাকে এই পদ থেকে সরানো হয়নি। আমি মাদকচক্রের বিরুদ্ধে তদন্ত জারি রাখব।” একইসঙ্গে তিনি জানান, আরিয়ান খানের মাদক মামলার তদন্ত যাতে কোনও কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা করে, তার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। আদালতে তিনি এই মর্মে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন বলেও জানান।
মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নবাব মালিকও পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন সমীর ওয়াংখেড়ের দাবি নিয়ে। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের দাবি প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা নবাব মালিক বলেন, “হয় সংবাদসংস্থা সমীর ওয়াংখেড়ের বয়ানের ভুল ব্যাখ্যা করেছে, নয়তো উনি নিজেই দেশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। তাঁর (সমীর ওয়াংখেড়ে) বিরুদ্ধে ওঠা তোলাবাজি ও দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্তভার যাতে মুম্বই পুলিশের বদলে সিবিআই বা এনআইএ-কে দেওয়া হয়, সেই দাবি জানিয়েই তিনি রিট পিটিশন দায়ের করেছেন। আদালত সেই দাবি খারিজও করে দিয়েছে। দেশবাসীর সম্পূর্ণ সত্যিটা জানা উচিত।”