শুক্রবার মাঝরাতটা যেন কেটেছে দুঃস্বপ্নের মত। ইসরো জুড়ে হতাশা। মাত্র কয়েক মিনিট দূরে থমকে গেল ইতিহাস। কিন্তু বিজ্ঞান থেমে থাকে না। তাই ভারতের গবেষণা যে আবার মোড় নেবে, সেকথা বারবারই উঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। পাশে থেকে বার্তা দিয়ে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর ভারতের যেসব মানুষ রাত জেগে একটা মিরাকলের জন্য প্রার্থনা করলেন, তাঁরাও বলছেন, ‘এখানেই শেষ নয়।’ তবে এবার বার্তা এল মহাকাশ গবেষণার আর এক পীঠস্থান নাসা থেকে।

প্রতিবেশী পাকিস্তানে যখন ভারতের ব্যর্থতা নিয়ে উল্লাস চলছে, আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা তখন অভিনন্দন জানাল ইসরোকে। ট্যুইট করে সঙ্গে থাকার বার্তা দিল নাসা। তারা লিখেছে, ‘মহাকাশটা বড্ড কঠিন। তোমাদের পথচলা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আগামিদিনে সৌরজগতকে আরও বেশি আবিষ্কার করার সঙ্গী হতে পারি আমরা।’

চাঁদের অবতরণের মিনিট দুয়েক আগে ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইসরোর। তবে চন্দ্রযান ২ কিন্তু পুরোপুরি ব্যর্থ নয়। অরবিটারের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি। বরং সেটি সঠিক কক্ষপথে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করছে, ছবি তুলেও পাঠাবে ভারতে। মাত্র পাঁচ শতাংশ ব্যর্থ হয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

জানা গিয়েছে, এই অরবিটারের ছবি থেকে বিজ্ঞানীদের হাতে উঠে আসবে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক তথ্য। ভারত সরকারের প্রিন্সিপ্যাল সায়েন্টিফিক অ্যাডভাইজর আধ্যাপক কে বিজয় রাঘবন ট্যুইটারে বলেন, এই অরবিটারের আয়ু এক বছর হবে বলে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু ইসরো যেভাবে পাঠিয়েছে তাতে ৭ বছর থাকবে অরবিটারটি।

যেভাবে জিএসএকভি মার্ক ৩-তে চন্দ্রযান মহাকাশে পৌঁছেছে ও চাঁদের কক্ষপথে সফলভাবে প্রবেশ করেছে, তা ভারতের মহাকাশ গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সাফল্যকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেন একটি চলন্ত ট্রেন থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের অন্য একটি চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে বুলেট ছোঁড়া হয়েছে।

এছাড়া এত কম খরচে চন্দ্র অভিযান করার রেকর্ড তো থাকলই ভারতের হাতে। মাত্র ১৪০ মিলিয়ন ডলার খরচেই সম্পূর্ণ হয়েছে পুরো অভিযান। আমেরিকা অ্যাপোলো মিশনে খরচ করেছিল ১০০ বিলিয়ন ডলার। হিসেব কষে দেখা হয়েছিল, ভারতের এই অভিযানের খরচ হলিউডি ছবির থেকেই কম।

শুক্রবার রাত ১.৪০-এর পর চাঁদের মাটি স্পর্শ করার কথা ছিল ল্যান্ডার বিক্রমের। রাতভর দেশের মানুষ সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের অপেক্ষায় বসে ছিল। কিন্তু, মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরে থাকতেই বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইসরোর। কন্ট্রোল রুমে নেমে আসে নৈশব্দ। সেই স্তব্ধতা ভেঙে কে সিবানই ঘোষণা করেন, সব কিছু পূর্ব পরিকল্পনা মত হলেও বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.