তিনি নরেন্দ্র নাম্বার ওয়ান। জন্ম কলকাতায়। পুরো নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত। অ্যাটর্নি বিশ্বনাথ দত্তের বড়ো ছেলে। তাকে সমগ্র ভারত চেনে স্বামী বিবেকানন্দ নামে। আর একজন হলেন নরেন্দ্র নাম্বার টু।নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। গুজরাটে জন্ম। বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। দ্বিতীয়বারের জন্য। নরেন্দ্র নম্বর ওয়ান স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। নরেন্দ্র নাম্বার টুতরুণ বয়সে রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসীদের সংস্পর্শে আসেন। আন্তরিক ইচ্ছা ছিল মিশনের মাধ্যমে নিজেকে মানুষের সেবায় উৎসর্গ করার। সেদিন যদি তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী হতেন, তাহলে আজ আমরা পেতাম মিশনের এক বলিষ্ঠ সন্ন্যাসীকে। শিবজ্ঞানে জীবসেবাকে জীবনব্রত হিসেবে গ্রহণ করে যিনি শ্রীশ্রী ঠাকুরের চরণে সমর্পণ করেছেন নিজেকে। আমরা পেয়েছি আমাদের দেশের জন্য বলিষ্ঠ এক প্রধানমন্ত্রীকে। ষাট পেরিয়েও যুবকের মতো দৃপ্ত যার পদসঞ্চার, কণ্ঠস্বরে ঝরে পড়ে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস ও সংকল্পে দৃঢ়তা। মাঝে মাঝে বক্তৃতার সময় সেই কণ্ঠস্বর যখন খাদে নেমে আসে তখন তা অত্যন্ত হৃদয়স্পর্শী হয়ে উঠে। দেশে-বিদেশে সর্বত্র তিনি ভারতীয়দের প্রতি আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছেন।
স্বামী বিবেকানন্দ বলতেন, “বিশ্বাস বিশ্বাস নিজের উপর বিশ্বাস, ঈশ্বরে বিশ্বাস। নরেন্দ্র মোদী তার ঈশ্বর বিশ্বাসকে অতিযত্নে হৃদয় গুহায় সুরক্ষিত রেখেছেন। তিনি ধ্যানে অভ্যস্ত, যোগাভ্যাসে স্বচ্ছন্দ। যোগাসন করেন সাবলীল ভঙ্গিমায়। স্বামী বিবেকানন্দ চাইতেন মানুষ কাজ করুক দেশ ও জাতির জন্য। আর্ত, অসহায়, দুর্বল ও দরিদ্রের পাশে দাঁড়াক। কিন্তু শরীরকে দৃঢ় করার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুক, যোগাসন করুক এবং মনের একাগ্রতার জন্য ধ্যান। ধ্যান যে দেব দেবীর মূর্তিতে করতে হবে এমন কথা নেই। সানফ্রানসিসকোর প্রাকৃতিক পরিবেশে একটি ক্যাম্পে তিনি তাঁর অনুগামীদের একদিন বললেন, সেদিন তিনি সিংহের হৃৎপিণ্ডে ধ্যান করবেন। ধ্যান, যোগ এবং কর্মতৎপরতায় নরেন্দ্র নাম্বার টু নাম্বার ওয়ানের ভাবশিষ্য। তার যথার্থ অনুগামী।
তিন বছরের কিছু বেশি সময় পাশ্চাত্যদেশে ভারতীয় ধর্ম ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি সম্পর্কে ভাষণ দান, আলোচনা ও যোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দানের পর স্বামী বিবেকানন্দ ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। দাক্ষিণাত্য হয়ে কলকাতায় ফিরলে তাকে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কলকাতা অভিনন্দনের উত্তরে তিনি দীর্ঘ বক্তৃতা করেন। বক্তৃতার শেষভাগে তিনি বলেন “ভয় পাইও না, কারণ মনুষ্যজাতির ইতিহাসে দেখা যায়, সাধারণ লোকের ভিতরেই যত কিছু মহাশক্তির প্রকাশ হইয়াছে।…কিছুতেই ভয় পাইওনা, তোমরা বিস্ময়কর কার্য কবিবে। যে মুহূর্তে তোমাদের হৃদয়ে ভয়ের সঞ্চার, সেই মুহূর্তেই তোমরা শক্তিহীন।”
নরেন্দ্র মোদীর জন্ম সাধারণ পরিবারে। সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্মাননি। কিন্তু তরুণ বয়স থেকেই তিনি জানতেন অসাধারণ হবার শক্তি রয়েছে তার মধ্যে। তখন থেকে আত্মশক্তি জাগ্রত করার প্রয়াস করেছেন সর্বক্ষণ। সমাজে মান্যগণ্য হবার অথবা কোনোকিছু প্রাপ্তির আশায় যারা রাজনীতি করে তিনি তাদের দলভুক্ত নন। তিনি মনে প্রাণে জানেন রাজনীতি তঁার কাছে। মানবসেবা। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, অকুতোভয় মানুষ তিনি। চালাকির দ্বারা কোনো কাজ করেন না। নোটবন্দি থেকে সার্জিকাল স্ট্রাইক প্রতিটি সিদ্ধান্ত তিনি গ্রহণ করেছেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে, দোলাচল চিত্তে নয়। তিনি ভেবেছিলেন এতে দেশের মঙ্গল হবে তাই করেছেন। ভারতীয় জনগণ নোটবন্দির কষ্ট সহ্য করবে কিন্তু তারা কিছুতেই সইবেনা দ্বিধাগ্রস্ত গোবেচারা দুর্বল চিত্তের কোনো ব্যক্তিকে দেশের প্রধানমন্ত্রীরূপে। এবারের নির্বাচনের পর বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে গেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নামজাদা পণ্ডিত কিংবা সবজান্তা হতে হবে এমন কথা নয়। কিন্তু তাকে অবশ্যই বলিষ্ঠ, নির্ভীক ও সৎ হতে হবে, ঠাণ্ডা মাথায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংকটের মোকাবিলায় তৎপর হতে হবে।
স্বামী বিবেকানন্দের সময় ভারতবর্ষ পরাধীন। ভারতবর্ষ যে ফেলনা নয়, তার সভ্যতা সুমহান মানবজাতির পক্ষে কল্যাণকর একথা তিনি বিশ্বের দরবারে তুলে ধরলেন তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ও বাগ্মিতা দিয়ে। নরেন্দ্র মোদী গত পাঁচ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের প্রতিনিধিরূপে। স্বাধীন ভারতের চিন্তাভাবনা ও কর্মধারাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মৈত্রী ও বাণিজ্যের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্য। ভারতের সুনাম বৃদ্ধির জন্য।সমালোচকরা যাই বলুক না কেন মোদী যে প্রমোদ ভ্রমণে বিদেশ যাননি একথা নিশ্চিত। আসলে নরেন্দ্র মোদী যখন যে কাজে হাত লাগান, সেই কাজে সমস্ত মনপ্রাণ অর্পণ করেন। তার বিদেশ সফরের বেশ কিছু সুফল মিলেছে। এ বিষয়েও নিন্দুকেরাও অবগত আছেন।
স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘নূতন ভারত বেরুক চাষার লাঙ্গল ধরে, দরিদ্রের কুটির ভেদ করে, ভুনাওয়ালার উনুনের পাশ থেকে। নরেন্দ্র মোদী বিবেকানন্দের সেই নতুন ভারত। আজ যিনি প্রধানমন্ত্রীর আসন অলংকৃত করেছেন একসময় তিনি চা বিক্রি করতেন। কিছু মানুষ তাকে চা-ওয়ালা বলে যতই বিদ্রুপ করুক না কেন, তিনি ছিলেন এক সফল চা-ওয়ালা, একনিষ্ঠ স্বয়ংসেবক, কুশলী মুখ্যমন্ত্রী এবং বর্তমানে তিনি এক সার্থক প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানেন, সাফল্যের রহস্য সিনসিয়ারিটি, পিউরিটি, টেনাসিটি, অনেস্টি এবং সেলফ স্যাক্রিফাইস। নরেন্দ্র নাম্বার টু-র সংকল্প ভারতকে বিশ্বের অন্যতম উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করা। নরেন্দ্র নাম্বার ওয়ান বলেছিলেন ভারত আবার জাগিবে…।
অঞ্জন মহাপাত্র
2019-07-26