আসল জলবায়ু পরিবর্তন কী, বিশ্বকে বোঝালেন নরেন্দ্র মোদী।

গ্লাসগোতে সিওপি২৬ বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্বের দরবারে পাঁচটি বিষয় পেশ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই বিশেষ পাঁচকে ‘পঞ্চমৃত’ হিসেবে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতীয় পুরাণে অমরত্ব লাভে অমৃতের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। পঞ্চমৃত পাঁচটি মিষ্টি তরল পদার্থ যা পুজোর সময় দেবতাদের নিবেদন করা হয়। আমাদের জলবায়ুকে আগলে রাখা ও সংরক্ষণের জন্যই এই বিশেষ শব্দটি ব্যবহার করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্য রাখার আগেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছিলেন, এই সম্মেলন ব্যর্থতার দিকে যাচ্ছে। এর পরেই নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্যে জলবায়ু সম্মেলন এক নয়া দিক পেল বলেই মনে করা হচ্ছে।

জলবায়ু সম্মলনে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি, ২০৭০ সালের মধ্যে ভারতে কার্বন নির্গমণের পরিমাণ শূণ্যতে গিয়ে পৌঁছবে। গ্লাসগোর এই জলবায়ু সম্মলনে দৃঢ়তার সঙ্গে এই ধরনের দাবি অন্য কোনও দেশের রাষ্ট্রনেতা করতে পারেননি। তাই স্বভাবতই প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই ঘোষণার পর প্রথম বিশ্বের দেশগুলি থেকে আগত প্রতিনিধিরা খানিকটা অবাকই হয়ে যান। বিশেষজ্ঞদের মতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমগ্র বিশ্বকে সাক্ষী রেখে নরেন্দ্র মোদী যে লক্ষ্যের কথা ঘোষণা করেছেন, সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে আগামী বেশ কিছু বছরে ভারত অচিরাচরিত শক্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করবে। নরেন্দ্র মোদী দেখিয়ে দিলেন বিশ্বের পশ্চিমী ও উন্নত দেশগুলি যে কথা ভাবতেও পারেনি সেখানে ভারতের মত একটি উন্নয়নশীল দেশ শুধু নিজেরদের একার বদলে পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এই ধরনের চিন্তা ভাবনা করতে পারে।

মোদীর এই বার্তা পশ্চিমী দেশ ও চিনের ক্ষেত্রে ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই বিশ্ব উষ্ণায়ণ নিয়ে এই দেশগুলি কোনও ধরনের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি। নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির কথা ভেবে এই দেশগুলি পৃথিবীর পরিবেশ দূষণ মানচিত্রে সবার ওপরে নিজেদের জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু যেকোনও নিন্দার মুখেও তারা নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে এসেছে।

জলবায়ু সম্মলনে মোদী দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছা শক্তিটাই আসল। ইচ্ছে থাকলেই উপায় খুঁজে বের করতে বেশি দিন সময় লাগেনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত এখনও কয়লার ওপরই প্রধানত নির্ভরশীল। এমনকি খুব তাড়াতাড়িও দেশের এই কয়লা নির্ভরতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উত্সগুলির উন্নতির জন্য চেষ্টার কোনও খামতি রাখছে না ভারত। এই কাজ আরও সফলভাবে করতে হলে বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগেরও প্রয়োজন রয়েছে। চিনের বিরোধিতার কারণে রাষ্ট্রপুঞ্জের সব থেকে শক্তিশালী, পরমাণু সরবরাহকারী গোষ্ঠী বা এনএসজির স্থায়ী সদস্য হতে পারেনি ভারত। এই কারণ কম দামে পরিচ্ছন্ন ও সস্তা তেলের জোগান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশ। চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জ্বালানির সীমাবদ্ধতা মধ্যে বুক চওড়া করে দেশের প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের প্রতিশ্রুতি নিঃসন্দেহে প্রশাংসা যোগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.