এতদিন বিশ্বাস হতো না, মনে হতো এসবই বাজে কথা। দেশের খেয়ে, দেশের পরে, দেশের দেওয়া সব সুযোগ-সুবিধা, সব অধিকার ভোগ করছে যারা, তারা কখনই পাকিস্তানের প্রতি প্রেমাসক্ত হতে পারে না। কিন্তু হা হতস্মি! সাম্প্রতিক ঘটনাবলী আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। যে দেশের অভ্যন্তরে পাকপ্রেমীর অভাব নেই।
প্রথমেই প্রধান বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীর দিকে তাকানো যাক। এই নেতা মাসের পর মাস বিভিন্ন সভাসমিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে গালি দিয়ে চলেছেন। মোদীজীকে জনসমক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করা ছাড়া তার আর কোনও বক্তব্য থাকে না। রাফাল নিয়ে মাসের পর মাস চীৎকার করে রাহুল মানুষের কান ঝালাপালা করে দিয়েছেন। কিন্তু কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি, এমনকী সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত রাফাল কেস প্রমাণ নেই বলে বাতিল করে দিয়েছে। ভারতীয় বায়ুসেনা মোদী সরকারের নির্দেশে পাকিস্তানের ভেতরে ঢুকে বালাকোটে গিয়ে সেখানকার জয়েশ-ই-মহম্মদের ডেরায় ওপরে বোমা মেরে ডেরা উড়িয়ে দিয়ে ফিরে এসেছে। রাহুল গান্ধী ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা প্রমাণ চাইছে ওই এয়ার স্ট্রাইকের।
অতি সম্প্রতি রাহুল গান্ধী পুলওয়ামার আক্রমণকারী জইশের মূল পাণ্ডা মাসুদ আজহারকে সম্মান জানালেন, তাকে ‘মাসুদ আজহারজী’ বলে উল্লেখ করলেন এক সভায়। সেই সঙ্গে দেশের ন্যাশনাল সিকিওরিটি অ্যাডভাইজার অজিত দোভালের সমালোচনা করলেন। তার কথায়— “অজিত দোভাল মাসুদ আজহারজী কো কান্দাহার মে জাকর পাকিস্তানকে হাওয়ালে করকে আয়ে থে”। তার সম্ভবত মনে ছিল না অথবা তার ট্রেনাররা বলতে ভুলে গিয়েছিল আসল ব্যাপারটা। ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভারতের একটি প্লেন হাইজ্যাক করে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট কিছু আতঙ্কবাদী কান্দাহার নিয়ে যায়। সেই সময় অজিত দোভাল ছিলেন আইবি চিফ। সরকার একটি চার সদস্যের নেগোশিয়েটিং টিম তৈরি করে, যে টিমের লিডার অজিত দোভাল তার টিম নিয়ে কান্দাহার যান। ওই প্লেনে ১৭১ জন যাত্রী এবং কর্মী ছিলেন নারী ও শিশু সমেত। সরকার ওই ১৭১ জন ভারতীয় এবং অবশ্যই নিরীহ যাত্রীদের প্রাণ বাঁচাবার জন্য মাসুদ আজহারকে ছেড়ে দিয়েছিল। সরকার অতগুলি নিরীহ মানুষের মৃত্যু চায়নি। দোভাল এরপর মাসুদ আজহারকে কান্দাহার পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিলেন সন্ত্রাসবাদীদের শর্ত অনুযায়ী। যেহেতু তখন কেন্দ্রে ছিল বিজেপি সরকার, তাই রাহুল গান্ধী ঘটনার অগ্রপশ্চাৎ উল্লেখ না করে শুধু আজহারকে ছেড়ে দেবার কথাই উচ্চকণ্ঠে বলে চলেছেন। এবং আজহারকে তিনি আজ মাসুদ আজহারজী বলে সম্মান জানাচ্ছেন। অবশ্য তার দলের সিনিয়র নেতারা টেররিস্টদের এর আগেও প্রচুর শ্রদ্ধাভক্তি জানিয়েছেন, যেমন দিগ্বিজয় সিংহ ওসামা বিন লাদেনকে ‘ওসামাজী’, সুশীল সিন্ধ্রে বলেছেন ‘হাফিজসাব’। যে হাফিজ সইদ মুম্বই আক্রমণের মাস্টারমাইন্ড, তাকে সম্মান জানাতে এদের কোনও দ্বিধা সংকোচ নেই।
রাহুল গান্ধীদের কাছে পাকিস্তান-লালিত টেররিস্টরা সম্মাননীয় ব্যক্তি আর নিজের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আন-পার্লামেন্টারি শব্দ ব্যবহার করে অসম্মান করছেন, সমানে বলে চলেছে সর্বত্র—‘চৌকিদার চোর হ্যায়’। মানুষ যে তার কথা বিশ্বাস করছে না, সেটা বোঝার ক্ষমতাও এই নির্বোধ, বালখিল্য নেতার নেই।
বালাকোট আক্রমণের ছবি, যেগুলি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পাওয়া গেছে, সেসব দেখার পরেও এরা বলছে ‘প্রমাণ চাই’। সেনাকর্তারা এভিডেন্স দেখিয়েছেন, প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণও পাওয়া গেছে, টেলিভিশনের পর্দায় আমরা সকলেই দেখেছি ও শুনেছি। তা সত্ত্বেও পাক- প্রেমীদের আওয়াজ থামছে না, ‘কতজন মারা গেছে জানাও’। এইসব কথা পাকিস্তানের মিডিয়া মহাউৎসাহে প্রচার করে চলেছে। তাদের সংবাদপত্রগুলির প্রথম পাতায় ভারতের পাক-প্রেমীদের কথা বড়ো বড়ো অক্ষরে ছেপে বেরোচ্ছে। অন্য কোনও দেশ হলে এইসব ঘরের শত্রুদের সঙ্গে সঙ্গে জেলে পুরে দেওয়া হতো।
পাকিস্তান সরকার পৃথিবীর সব মিডিয়াকে বালাকোটে ঢোকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কারণটা সহজেই অনুমান করা যায়। সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি যে ভারতের এয়ার ফোর্স গুঁড়িয়ে দিয়েছে, সেটা ওরা বহিঃবিশ্বকে জানতে দিতে চায় না। অথচ ভারতের অভ্যন্তরের পাক-প্রেমীরা প্রমাণ চাইছে। এর দ্বারা যে দেশের মিলিটারির মনোবল ক্ষুণ্ণ হতে পারে, সেই বোধটা এই রাষ্ট্রবিরোধীদের নেই। কুখ্যাত সন্ত্রসাবাদীদের ‘জী’ বলে সম্মান জানানো লোকগুলির কি ভারতে থাকার অধিকার আছে?
পাঠকদের নিশ্চয়ই মনে আছে রাহুল গান্ধী কুখ্যাত আইএসআইএস জঙ্গিদের প্রসঙ্গে বলেছিলেন বেকার ছেলেরা চাকরিবাকরি না পেলে আইএসআইএস-এ জয়েন করে। এটা কি এক ধরনের টেরর-অ্যাপিজমেন্ট নয়? তার দলের নেতারাই বলেছে ২৬/১১-তে যে মুম্বই অ্যাটাক হয়েছিল, সেটা আর এস এস করিয়েছিল। মাওবাদীদের প্রতি এদের দরদের অন্ত নেই। মাওবাদীরা নাকি মোটেই সন্ত্রাসবাদী নয়, তারা হচ্ছে বিপ্লবী। ‘ক্রান্তিকারী’ কুখ্যাত জাকির নায়েককে এরা বলে ‘শান্তির দূত’। ইশরাত জাহানকে বলে একটি নিরীহ মেয়ে। পরে অজস্র প্রমাণ পাওয়া গেছে যে সে ছিল একটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভারত বিরোধী জঙ্গি সেনা, সে কারণেই তাকে মারা হয়। কংগ্রেস দল আফজল গুরুকে আজও ‘গুরুজী’ বলে থাকে, বিশ্বাস হয়? বাটালা হাউস এনকাউন্টারের পরে খবর শুনে সোনিয়া গান্ধী নাকি কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। যেখানে পুলওয়ামার বীভৎস ঘটনার পর সেই সিআরপিএফ জওয়ানদের পরিবারের কান্না আজও কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, তখন ওই আক্রমণের মূল পাণ্ডা মাসুদ আজহারকে ‘মাসুদ আজহার জী’ যারা বলতে পারে, তাদের ভারতে থাকার কোনও অধিকার নেই। আসলে এদের মনের মধ্যে যে পাক-প্রেমের বন্যা বইছে, সেটা মাঝে মাঝে মুখের ভাষায় চলে আসে। হিন্দীতে একটা কথা আছে—‘দিল কি বাত যো হ্যায়, জুবান পে আহী যাতা হ্যায়।” এদেরই দলের, শীলা দীক্ষিতের পুত্র সন্দীপ দীক্ষিত, ভারতীয় সেনাপ্রধান রাওয়াতকে ‘সড়ক কা গুন্ডা’ বলেছিলেন। শশী থারুর, যার বিরুদ্ধে পত্নীহত্যার মামলা চলছে, সেই ব্যক্তি বলছে যে জহরলাল নেহরুর দৌলতেই নাকি এক চাওয়ালা প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছে। এইসব লোকজনদের করুণা করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করবার নেই।
ইলেকশন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশ করার সঙ্গে সঙ্গে বিরোধীরা চীৎকার শুরু করে দিল—“রমজান মাসে ভোট করা চলবে না, তাহলে মুসলমান ভোটাররা কেউ ভোট দিতে আসতে পারবে না” ইত্যাদি। কী হাস্যকর যুক্তি! রমজান মাসে মুসলমানরা কি সব বাইরের কাজকর্ম বন্ধ রাখে? আসাদুদ্দিন ওয়েসি যেই বিবৃতি দিয়ে জানালেন যে রমজান মাসে মুসলমানরা আরও বেশি করে ভোট দিতে যাবে, তারপর দেখা গেল বিরোধীদের আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেছে।
সম্প্রতি জানা গেল যে রাহুল গান্ধী এক বিশাল জমি ঘোটালায় যুক্ত আছেন। তিনি এইচ এল পাওয়া নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৬.৩ একর জমি কিনেছিলেন। এই পাওয়ার বাড়িতে একবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট জানা দিয়েছিল। এ হেন পাওয়া ওই একই জমি ৪০০শতাংশ বেশি দাম দিয়ে কিনে নেয়। রাহুল গান্ধীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি জানান যে ওই জমি তিনি তার বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বাটরাকে গিফট করে দিয়েছিলেন। অর্থাৎ প্রিয়াঙ্কাই ৪০০ শতাংশ প্রফিট করেছে ওই জমি বিক্রি করে। পাওয়া জানিয়েছে যে তার কাছে টাকা পয়সা ছিল না, তাকে পি.সি. থাম্পি ধার দিয়েছিল পঞ্চাশ লাখ টাকা। এই থাম্পি ইউপিএ জমানায় পেট্রোলিয়ামের দালালি পেয়েছিল। সঞ্জয় ভাণ্ডারী নামে এক কুখ্যাত আর্মস্ ডিলার এদের খুবই ঘনিষ্ঠ। রাহুল গান্ধীর জামাইবাবু রবার্ট বাটরাকে এই ভাণ্ডারী লন্ডনে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
জমির ঘোটালা ল্যান্ডডিল স্ট্যাম্প পেপারেই করা হয়েছিল। থাম্পি ও ভাণ্ডারী রাহুল গান্ধী ও রবার্ট ভাডরার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, এরা চারজন মিলেই এই জমি ঘোটলা করেছে। এদেরকে জমি-হাঙ্গর বললে অত্যুক্তি হয় না। আমেথীতে গরিব কৃষকদের জমি রাহুল গান্ধী ছলে-বলে-কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ।
আশ্চর্যের বিষয় হলো যে একটি জমি একজন ব্যক্তি যে দামে বিক্রি করে দিল, তার ৪০০ গুণ বেশি দাম দিয়ে ওই একই জমি সে কিনে নিল, ব্যাপারটা কি বিশ্বাসযোগ্য? রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন যে তিনি জমিটা বোন প্রিয়াঙ্কাকে গিফট করে দিয়েছিলেন। তাহলে দাঁড়াচ্ছে যে এই জমি ঘোটলায় প্রিয়াঙ্কা ভাডরাও জড়িত। যে রাহুল ও সোনিয়া দুজনেই দুর্নীতির কারণে ধরা পড়ে জামিনে খালাস আছেন, তারা, বিশেষ করে রাহুল গান্ধী দেশের প্রধানমন্ত্রীকে চোর বলেন কোন মুখে? তাদের বাড়ির জামাইটি অতি গুণধর, সে চাকরি করে না, ব্যবসা করে না, অথচ সে হাজার কোটির মালিক হয়ে বসেছে। হরিয়ানা ও রাজস্থানে একরের পর একর জমির মালিক সে। সেও এখন জামিনে খালাস আছে। এই তো কংগ্রেস দলের চেহারা, এই দল থেকে রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী হলে দেশটা জাহান্নামে যাবে এবং ভারতের জনগণ সেটা আজ বুঝে ফেলেছে।
মোদী-বিরোধীরা এখন আর বিজয় মালিয়া, নীরব মোদীদের নামও উচ্চারণ করে না, এতদিন এই নামগুলি নিয়ে এরা গলা ফাটিয়ে চীৎকার করেছে। এখন এরা চুপ, তার কারণ মোদী সরকার এদের ভারতে নিয়ে আসার ব্যবস্থা পাকা করে ফেলেছে, শীঘ্রই আমরা এই দুজন ব্যাঙ্কলুঠেরাকে দেশের জমিতে দেখতে পাবো। শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অসাধ্য সাধন করেছেন, বিরোধীদের মুখবন্ধ করতে পেরেছেন নিজের অক্লান্ত পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও অব্যর্থ ডিপ্লোম্যাসির সাহায্যে।
রমা বন্দ্যোপাধ্যায়