আদিসাংবাদিক দেবর্ষি নারদের জন্মজয়ন্তীতে সেই সমস্ত সাংবাদিক স্মরনীয় হয়ে উবঠেন যাঁরা নিজের জীবন দিয়ে সত্য প্রকাশের অঙ্গীকার রক্ষা করে গেছেন।
একটি রিপাের্ট বলছে ১৯৯২ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত বিশ্বজুরে ১৯০০ জন সাংবাদিক কে হত্যা করা হয়েছে।এর মধ্যে ভারতের ৭৮ জন সাংবাদিক রয়েছেন। এই ৭৮ জনের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু ভয়ানক,৩৪ জনকে মেরে ফেলা হয়েছে,বাকি ৩০ জনের মৃত্যু কেমন করে হয়েছে তা এখনাে অজানা।
২০১৮ সালে সিপিজে(Committee to protect Journalist)সাংবাদিক হত্যায় দোষীদের শাস্তি না হওয়ার নিরিখে সবচেয়ে নিচের সারিতে থাকা বিশ্বের ১৫টি দেশের যে তালিকা করেছে তাতে ভারতের স্থান ১৪। গত ৩০শে অক্টোবর ২০১৮, ছত্রিশগড়ের দান্তেওয়ারায় মাওবাদীদের গুলিতে দু জন সিআরপিএফ জওয়ানের সাথে মৃত্যু হয় দুরদর্শনের ক্যামেরাম্যান অচ্যুতানন্দ সাহুর। অচ্যুতানন্দ সাহুর জীবনের অন্তিম রিপাের্টিং সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে মৃত্যুর অন্তিম মূহূর্তে একটু জলের জন্য কাতর আবেদন করেও মাওবাদীদের তরফে কোন সাড়া মেলেনি। মাওবাদীরা স্থানীয় ভাষায় সাংবাদিকদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যুর পর যারা পথে নেমে ছিলেন, আরবান নকশালদের গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে যারা প্রতিবাদের ঝড় তুলে আকাশ বাতাশ মুখরিত করে সুপ্রিম কোর্টে ছুটে গিয়েছিলেন, মাওবাদী বা কাশ্মীরী সন্ত্রাসবাদী নিহত হলে যারা মানবাধিকারে প্রশ্ন তুলে ভারতের সমস্ত গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাটিকে যারা প্রশ্নের মুখে দাড় করিয়ে দেন করেন সেই কবি সাহিত্যিক লেখক সাংবাদিকরা অচ্যুতানন্দ সাহুর হত্যাকান্ড নিয়ে কিন্তু সামান্য দু:খ প্রকাশের সৌজন্যও দেখালেন না। অচ্যুতানন্দ সাহুর ভয়ানক হত্যাকান্ড নিয়ে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠন এডিটার গিল্ড অফ ইন্ডিয়া এতটাই সাধারণ প্রতিক্রিয়া দিয়েছে যে তাতে মৃত সাংবাদিকের নাম পর্যন্ত নেই অথচ গৌরী লঙ্কেশের মৃত্যুর পর এই একই প্রতিষ্ঠানের প্রতিক্রিয়ার প্রতিটি বর্ণ থেকেই দু;খ-ক্ষোভ-ঘৃণা যেন ঝড়ে পড়ছিল।
প্রশ্ন হচ্ছে কেন এই দ্বিচারিতা। নিজেদের স্বরুপ প্রকাশিত হওয়ার ভয়ে যেমন মাওবাদীরা যেমন এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে সেই একই কারণে কি এই কবি সাহিত্যিক লেখক সাংবাদিকরা কিংবা এডিটার গিল্ড অফ ইন্ডিয়ার মতাে প্রতিষ্ঠান অচ্যুতানন্দ সাহুর মতাে সত্যের পূজারীদের বর্বর হত্যাকান্ড সর্বসমক্ষে আসতে দেন না? সাংবাদিক হিসেবে নিজের জীবন দিয়ে নারদীয় পরম্পরা রক্ষাকারী অচ্যুতানন্দ সাহুদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের পাশাপাশি সাংবাদিকবেশি রাজনীতির এজেন্টদের দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে পারলেই স্বার্থক হবে দেবর্ষী নারদ জন্মজয়ন্তী উদযাপন।