অমিতাভ বচ্চনের “নমক হালাল” আর “নমক হারাম” সিনেমা দুটোর কথা মনে আছে ? বহু বাঙালি কে দেখেছি সিনেমা দুটোর নাম গুলিয়ে ফেলতো। আসলে এটা হতো শব্দ গুলোর সঠিক অর্থ না জানার কারণে। আজও বেশিরভাগ বাঙালি তথা ভারতীয় এই হালাল বা হারাম শব্দের সঠিক অর্থ জানেন না। অথচ প্রতিদিন এই হালাল শব্দের আড়ালে মুসলিম অমুসলিম সকল মানুষ একদিকে যেমন বলশালী করে চলেছে ইসলামকে, অন্যদিকে দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করাতেও জ্ঞানে অজ্ঞানে মদত দিয়ে চলেছে ।
আজ এই হালাল বিষয়ের ব্যাপ্তি নিয়ে আলোচনা করাই আমার উদ্দেশ্য ।
বর্তমান সময়ে “হালাল” শব্দটি শুনলেই সাধারণ বাঙালি বা ভারতীয় মানুষ মনে করেন এটা মাংস কাটার একটি পদ্ধতি। যে পদ্ধতিতে মুরগি বা খাসি আড়াই প্যাঁচে কাটা হয়। কেউ হয়তো আর একটু অ্যাড করেন যে কাটার সময় কিছু কলমা পড়া হয়। ব্যস। কিন্তু এইটুকু জ্ঞান সম্পূর্ণ তো নয়ই, বরং হালাল শব্দের বিস্তার সম্পর্কে আলোচনা করলে দেখা যাবে এটা 5% ও নয়।
আজ আমার চেষ্টা বিষয়টা বিষদে ব্যাখ্যা করার।
আরবী শব্দ “হালাল” এর অর্থ আল্লাহর স্বীকৃত বা অনুমোদিত। একদম শুরু তে আমাদের দেশে এটি খাদ্য দ্রব্যের উপরেই এবং মূলত মাংসের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হতো। এখন ব্যাপ্তি বেড়েছে।
একটি প্রাণীর মাংসকে “হালাল” তকমা পেতে গেলে নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি অবশ্যই মানতে হবে :-
- প্রাণীটিকে একজন প্রকৃত মুসলিমকেই কাটতে হবে,
- প্রাণীটিকে কর্তন করার আগে বিসমিল্লাহ আল্লাহ হু আকবর উচ্চারণ করতে হবে,
- প্রাণীটির মুখ কর্তন করার সময় মক্কার দিকে ঘোরানো রাখতে হবে,
- প্রাণীটির শ্বাসনালী এবং খাদ্যনালী একটি আঘাতে কেটে রক্তটাকে বইতে দিতে হবে।
এই পদ্ধতি গুলি লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে প্রথমেই মুসলিম ছাড়া অন্য কোনো জাতের মানুষের জন্য একটি জীবিকার দ্বার (কসাই) বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বা বলা ভালো কসাই এর জীবিকাটি শুধু মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত করে দেওয়া হচ্ছে। এবং এই জীবিকাটির জন্য কোনো পড়াশোনার প্রয়োজন নেই। হিন্দু খটিক সমাজের লোকজন আগে এই পেশায় নিযুক্ত থাকতো। কিন্তু ধীরে ধীরে তাদের জন্য জায়গা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ।
কিন্তু শুধু এইটুকু বিষয়ের উপরেও হালাল এর ব্যাপ্তি সীমাবদ্ধ নেই।
2013-2014 সাল নাগাদ মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন ইসলামিক দেশ ও আন্তর্জাতিক ইসলামিক সংগঠন গুলোর মধ্যে একটি মিটিংএ ইসলাম কে অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালী করার উপায় আলোচনা করার সময় এটা স্থির হয় যে বিশ্বের যেকোনো ইসলামিক দেশে কোনো পণ্য রপ্তানি করতে গেলে সেই পণ্যটিকে হালাল তকমা যুক্ত হতেই হবে।
কিভাবে পাওয়া যাবে এই তকমা ?
আমাদের দেশ ভারতবর্ষে চারটি প্রাইভেট সংস্থাকে এই সার্টিফিকেট দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়েছে ।
সেগুলো হলো :-
- হালাল ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেদ
- হালাল সার্টিফিকেশন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড
- জামাত এ উলেমা ই হিন্দ
- জামাত এ উলেমা ই মহারাষ্ট্র
আসুন এবার জানি কিভাবে এই সার্টিফিকেট বা তকমা পাওয়া যেতে পারে। কোনো পণ্য উৎপাদনকারী সংস্থা তার পণ্যের জন্য হালাল সার্টিফিকেট পেতে চাইলে উপরের চারটি সংস্থার যেকোনো একটিতে আবেদন করতে হবে এবং সেই আবেদনের ভিত্তিতে ওই সংস্থাগুলি থেকে উপযুক্ত ব্যক্তি ওই উৎপাদনকারী সংস্থায় ইনকোয়ারি করতে যাবেন।
যে যে বিষয়গুলি ওই উৎপাদনকারীকে নিশ্চিত করতে হবে তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো :-
- সেই উৎপাদক সংস্থায় নির্দিষ্ট পরিমানে মুসলিম কর্মী নিযুক্ত থাকতে হবে,
- উৎপাদন পদ্ধতি অবশ্যই শরিয়া আইন অনুযায়ী হতে হবে ,
- উৎপাদিত দ্রব্য কোনোভাবেই নন-হালাল দ্রব্যের সংস্পর্শে আনা চলবে না ,
- শারিয়া স্বীকৃত নয় এমন কোনো পদার্থ ওই দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহার করা যাবে না।
সার্টিফিকেট পেতে গেলে ওই সার্টিফিকেট প্রদানকারী সংস্থাকে 21500/- টাকা দিতে হবে।
এই সার্টিফিকেট পেলেই কোনো দ্রব্য ইসলামিক দেশে রপ্তানি করা যেতে পারে। শুধু ইসলামিক দেশে নয় আমাদের দেশ সহ যেকোনো অমুসলিম দেশে মুসলিম মানুষরা ওই হালাল সার্টিফিকেট প্রাপ্ত দ্রব্যই ব্যবহার করে থাকেন (একান্ত উপায় না থাকলে আলাদা)।
ইসলামিক সংস্থাগুলির আয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রায় সকল পণ্যকেই হালাল সার্টিফিকেশন এর আওতাভুক্ত করা হয়েছে বা হচ্ছে। শুধু মাংস বা আমিষ খাবার নয়; এগলেস কেক, পেস্ট্রি, ভেজ প্যাটিস, সফটড্রিংকস, এমনকি নামকরা সংস্থার ভুজিয়াও এই সার্টিফিকেট নিতে বাধ্য হচ্ছে শুধুমাত্র ব্যবসার উদ্দেশ্যে। একটা মজার ব্যাপার হলো বিগত সময়ে বহু পণ্য ইসলাম মতে হারাম হিসেবে চিহ্নিত ছিল … যেমন মেকাপ সামগ্রী , নেল পালিশ, লিপস্টিক ইত্যাদি। কিন্তু বর্তমানে ওই পণ্যগুলিকেও নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করার পর হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা সহজেই বুঝতে পারছি কিভাবে ইসলামিক সংগঠনগুলি অর্থনৈতিক ভাবে বলীয়ান হয়ে উঠছে আমাদের পয়সায়, আমাদেরই অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে। সবথেকে ভয়ঙ্কর এই শক্তিবৃদ্ধি বহুক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হচ্ছে দেশ বিরোধী কার্যকলাপে।
উদাহরণ চান ? ওই যে “জামাত এ উলেমা ই হিন্দ” যেটি হালাল সার্টিফিকেট প্রদান করার জন্য 21500/- টাকা করে নিয়ে থাকে তারা ওই টাকা কোথায় কোন কাজে ব্যবহার করছে তার একটা ধারণা দিতে চাইবো এবার।
2007 সাল থেকে 2022 সালের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত 700-র অধিক মুসলিম মানুষ যারা বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যুক্ত তাদেরকে আইনি সহায়তা দিয়েছে এই সংস্থা। এই সংস্থা যেসকল ঘটনায় অভিযুক্তদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সেরকম কয়েকটির উল্লেখ করলাম নিচে :-
• Accused of Mumbai train blast case 2006
• Accused of Malegaon blast case 2006
• Aurangabad arms case 2006
• 2011 Mumbai bomb blasé case (26/11)
• Lashkar Connection Case (Abdul Rahman V/s State SLP)
• ISIS conspiracy case Kochi (State of Kerala v/s Arshi Qureshi &
others)
• ISIS conspiracy case Mumbai (Arshi Qurashi & others v/s State of
Maharashtra)
• ISIS conspiracy case (State of Rajasthan v/s Sirajuddin)
• 26/11 Mumbai attack case (Syed Zabiuddin v/s State of
Maharashtra)
• Chinnaswamy Stadium Bomb Blast Case (State V/s Qatil Siddiqui
and others)
• Jungli Maharaj Road Pune Bomb blast case (A.T.S. v/s Asad Khan
& others)
• Indian Mujahideen Case (Maharashtra VS Afzal Usmani & others)
• Zaveri Bazar Serial Blast (State v/s Azaz Shaikh and others)
• SIMI conspiracy case (Madhya Pradesh) State V/S Irfan Muchale &
others)
• Jama Masjid Blast Case (Delhi State V/s Qateel Siddqui Others)
• Indian Mujahideen conspiracy case (State vs. Yasin Bhatkal &
others) Ahmedabad.
• Serial Blast Case 2008 (State V/s Jahid & Others)
এর পরেও কি আপনার মনে হবে না যে যতবার আপনি হালাল সার্টিফিকেট প্রাপ্ত কোনো সামগ্রী ব্যবহার করছেন ততবার একজন হিন্দু ভাই বা বোনের থেকে তার জীবিকার অধিকারকে দূরে ঠেলে দিচ্ছেন ?
মনে হবে না যে আপনার দেওয়া পয়সাতে পুষ্ট হয়ে একটি সংস্থা আপনার মাতৃভূমিকেই রক্তাক্ত করার চক্রান্ত করছে ?
আপনার আমার আগামী প্রজন্ম যাতে নিশ্চিন্তে দিনযাপন করতে পারে , আর কোনো মালেগাঁও বা আহমেদাবাদ বিস্ফোরণের ভ্রূকুটি যাতে তাদের সামনে না থাকে তার জন্য আজ থেকেই হালাল সামগ্রী বয়কট করা শুরু করুন।
বলুন নো হালাল, স্টপ টেররিসম।
সবিতাব্রত ঘোষ ।