হিন্দুর ধমনীতে বইছে দেশ ভক্তি।
জে কে বাজাজ এবং এম দি শ্রীনিবাস লিখিত “মেকিং অফ এ হিন্দু পেটরিওট : গান্ধীজির হিন্দ স্বরাজের নেপথ্য কাহিনী” বইটি আনুষ্ঠানিক ভাবে রিলিজ করার সময়, মাননীয় মোহন ভাগবত জি, সেই কথাই একাধিক বার উল্লেখ করলেন।তিনি বলেন, হিন্দুর ধমনীতে দেশপ্রেম রক্ত হয়ে বইছে।
বিবেকানন্দের ভাষায়, শিক্ষা যখন মজ্জাগত হয়ে ধমনীতে বয়, তখনই তা কৃষ্টিতে পরিণত হয়। তেমনই ভাবে হিন্দুর ধমনীতে বইছে দেশপ্রেম।
মোহন ভাগবত জি, বইটি রিলিজ করার সময় বলেন যে, গান্ধীজির শিক্ষা ও কিন্তু একই দিশা তে ধাবমান।গান্ধীজির মতে, গান্ধীজির ধর্মই হলো তার দেশভক্তির শোপান।তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন, ধর্ম আর দেশভক্তি একে অপরের পরিপূরক। ধর্ম মানুষের জীবনের একটা অঙ্গ। তার ব্যাপ্তি তথাকথিত “organised religion” এর চাইতে অনেকটা বেশি। ধর্ম আর দেশপ্রেমের বীজ লুকিয়ে আছে মানুষের আধ্যাত্মিকতার মধ্যে।মননশীল মানুষের মনে ধর্ম, তারই মনসিজ, দেশভক্তি।উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, বইটি তে লেখক উল্লেখ করেছেন গান্ধীজির লিও টলস্টয় কে লেখা চিঠি যেখানে গান্ধীজি বলেছেন, “..my patriotism is patent enough, my love for India is ever growing but it is derived from my religion and is therefore no sense exclusive”ভাগবত জি বলেন, বইটি তে বর্ণনা করা আছে, গান্ধীজি ১৯০৫ সাল থেকে যে শুধু হিন্দু ধর্মকে নিজের জীবনধারণের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন তা নয়। তিনি অনেক জায়গায় হিন্দু ধর্মের মহিমা ব্যাখ্যা করে ভাষণ দিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায়, বর্ন বৈষম্য নিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করার সময় এবং মহামান্য আদালতে পিটিশন করার সময় বার বার উল্লেখ করেছেন শ্রীমদ্ভগবদগীতা, মহাভারতের শ্লোক।১৮৯৩-৯৪ সালে তাকে অনেকভাবে তার মুসলিম নিয়োগকর্তা এবং খ্রিষ্টান সহকর্মীরা প্ররোচনা দেন ধর্ম বদলাতে। চাপ সৃষ্টি করেন বললেও ভুল হবেনা। কিন্তু গান্ধীজি ছিলেন নিজের চিন্তাধারায় অটল। তাকে কক্ষ বিচ্যুত করার ক্ষমতা কারুর ছিলনা।
উল্লেখ্যযোগ্য ভাবে, ভাগবত জি এটাও বলেন যে, উপরোক্ত বিশ্লেষণের মানে এই নয়, যে এক্ষেত্রে তিনি বা সঙ্ঘ, গান্ধীজির সমস্ত আদর্শ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন। ভাগবত জি বলেন, গান্ধীজি মহান, অনাবিল। এবং ওনার ব্যাপ্তি অসীম। তাকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব না। কিন্তু দেশপ্রেম বা দেশভক্তি একটাই। সেখানে পথ অনেক। গন্তব্য, একটাই। দেশের উন্নতি সাধন।
ভাগবত জি, হিন্দু ধর্মে দেশভক্তির সমন্বয় বর্ণনা করার সময় বলেন, হিন্দু ধর্ম একতার প্রতীক। নদী যেমন সাগরে মেশে, তেমনই সব ধর্ম গিয়ে মেশে হিন্দু ধর্ম। তাই আজকের এই ধর্মভিত্তিক ভেদাভেদ স্বাভাবিক। ভেদাভেদ থাকবে, কিন্তু তার লব্ধি, বিচ্ছিন্নতাবাদ হতে পারেনা।
দেশমাতৃকার চমকপ্রদ বর্ণনা দিতে দিতে তিনি বলেন, দেশ মানে শুধু মাটি, জমি, জঙ্গল, পাহাড় নয়। দেশ মানে মানুষ। দেশ মানে সর্বসাধারণ। দেশ মানে একটা আবেগ।
গান্ধীজির “স্বরাজ” ভাবধারা নিয়ে আলোচনা করলেন ভাগবত জি। গান্ধীজির মতে, রাজা বদলালে বা শুধুমাত্র গনতন্ত্রের হাত ধরে, স্বরাজ স্বীকৃতি পায়না।স্বরাজ স্বীকৃতি পায় সমাজের শুদ্ধিকরণে, সভ্যতার হাত ধরে, সমাজে শিক্ষার পরিপূর্ন বিন্যাসে।
ভাগবত জি লেখকের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, এই বইটি লেখার পেছনে রয়েছে গান্ধীজির জীবন ও তাঁর চিন্তাধারা নিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে গবেষণা এবং পড়াশোনা।
©অভিজিৎ