কাশীর রাস্তায় রিকশায় চেপে লালমোহনবাবু ওরফে সন্তোষ দত্ত রীতিমত শিহরিত। বারংবার হাত চলে যাচ্ছে কপালে। কারণটা আপনারা অনেকেই জানেন। মন্দির দর্শন করছেন যে। সহযাত্রী তপেশরঞ্জন আর চুপ থাকতে না পেরে বলেই ফেলেছিল, ‘তার চেয়ে হাতটা মাথায় ঠেকিয়ে রাখুন না। হাত ব্যথা হয়ে যাবে যে।’
রীতিমতো রোমাঞ্চিত লালমোহনবাবু আর চুপ থাকতে পারলেন না।

বলেই ফেললেন, ‘কাশীতে কত মন্দির আছে জানো?

তপেশ : ‘কত?’

এবার লালমোহনবাবু ব্যাকফুটে। একটুও ঘাবড়ে না গিয়ে জ্ঞানসমুদ্রে ঝাঁপিয়ে নিজেকে জ্ঞানসমৃদ্ধ করার জন্য হাতের কাছে হাজির ‘উইকিপিডিয়া’ ফেলুবাবুর কাছে ছুঁড়ে দিলেন প্রশ্ন, ‘ফেলুবাবু, কাশীতে মন্দিরের সংখ্যা কত?’

এ যেন ১৯৫৩ সালের ২৬ আগস্ট জ্যাক পিকার্ড ও ডন ওয়ালশ কর্তৃক ‘Trieste (bathyscaphe)’ নিয়ে পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে মারিয়ানা খাতের দক্ষিণ প্রান্তে ‘The Challenger Deep’ (১০৯০২-১০৯২৯ মিটার)-এ ঝাঁপিয়ে পড়ার রোমাঞ্চ।

ফেলুবাবুর স্মার্ট উত্তর এসেছিল, ‘তেত্রিশ কোটি।’
তখনও লালমোহনবাবু জানতেন না যে, তাঁর জন্য আরও বিস্ময় অপেক্ষা করে আছে কাশীর ক্যালকাটা লজের তিন নম্বর ঘরে!

ফেলুদার কথায়, ‘বিশ্বনাথের মন্দির তো সবাই দেখে কাশীতে, ‘বিশ্বশ্রী’-র মন্দির আর ক’জন দেখে বলুন?’
মনে পড়ে, জটায়ু বলেছিলেন, ‘আচ্ছা আপনার ওই হাতের গুলি কী সত্যিই সতেরো?’

গুণময়: সেভেন্টিন অ্যান্ড হাফ।

লালমোহন: বাব্বা!

গুণময়: (এগিয়ে এসে) দেখুন…

লালমোহনবাবু: উরিবাব্বা… এ তো মানুষের গায়ে হাত দিচ্ছি বলে তো মনেই হচ্ছে না। লৌহ ভীমের কথা পড়েছিলাম মহাভারতে।

নিশ্চয়ই সংলাপগুলো আজও সত্যজিৎ প্রেমিকদের মুখে মুখে ঘোরে। এই হাতের গুলি সাড়ে সতের প্রসঙ্গে একটা সময় খ্যাতনামা বডি বিল্ডার ফ্রাঙ্ক জেন (Frank Zane)-এর সঙ্গে আমাকে তুলনা করা হয়েছিল। কে এই ফ্রাঙ্ক জেন!

মার্কিন বডি বিল্ডার ফ্রাঙ্ক ‘The Chemist’ নামেই বেশি পরিচিত। এই ডাকনামের বিশেষত্ব হল, ফ্রাঙ্ক শরীর চর্চার পাশাপাশি পড়াশোনাতেও ছিল বেশ ওস্তাদ। উইলকেস ইউনিভার্সিটি (Wilkes University) থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক পাঁচ ফুট ন’ ইঞ্চির ফ্রাঙ্ক ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত টানা তিন বার ‘মি. অলিম্পিয়া’ খেতাব জয় করেন। বডি বিল্ডিংয়ের ইতিহাসে চমৎকার শারীরিক সৌন্দর্যের অধিকারী ফ্রাঙ্কের চমৎকার চেহারার রহস্য হিসেবে বলা হয় “due to his meticulous focus on symmetry and proportion.”

একটা সময় মি. অলিম্পিয়া প্রতিযোগিতায় অপরাজেয় হিসেবে যখন ফ্রাঙ্কের নাম মুখে মুখে, ঠিক তখনই ঘটে গেল বিপত্তি। প্রতিযোগিতা শুরুর আগে বাড়িতে একটা দুর্ঘটনায় জড়িয়ে ফ্রাঙ্ক হারাল তার ছন্দ। সেটা ১৯৮০ সাল। হসপিটাল থেকে ফিরে প্রতিযোগিতায় নামল ঠিকই, কিন্তু বিতর্কিত সিদ্ধান্তে মুকুট খোয়াল ফ্রাঙ্ক। নতুন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উঠে এল আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার। প্রতিবাদ স্বরূপ পরের বছর প্রতিযোগিতা থেকে নাম তুলে নিল ফ্রাঙ্ক। ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে প্রতিযোগিতায় নাম লেখালেও হারানো মুকুট আর ফেরত এল না। ততদিনে মি. অলিম্পিয়ার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে আর্নল্ড শোয়ার্জেনগারের নাম খোদাই হয়ে গিয়েছে।

চলুন, একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ফ্রাঙ্কের শারীরিক কাঠামোর দিকে।
উচ্চতা: ৫ফিট ৯ ইঞ্চি (১৭৫ সেমি)।
ওজন (প্রতিযোগিতায়): ৮৪ কেজি।
ওজন (প্রতিযোগিতা ছাড়া অন্য সময়): ৯০ কেজি।
বুকের ছাতি: ৫১ ইঞ্চি।
ঘাড়: ১৭.৫ ইঞ্চি।
বাহু: ১৮ ইঞ্চি।
থাই: ২৬ ইঞ্চি।

ধারে-ভারে না আসলেও আমার বাহুর জন্য একটা সময় ফ্রাঙ্কের সঙ্গে আমার তুলনা চলত। ফ্রাঙ্কের যেখানে ছিল ১৮ ইঞ্চি, সেখানে আমার ছিল ১৭.৫ ইঞ্চি। বোধহয় মানিকজেঠুর নজর এড়ায়নি বিষয়টি। জেঠু সংলাপে তুলে ধরেছিলেন ‘সেভেন্টিন অ্যান্ড হাফ’-এর প্রসঙ্গ। জটায়ুর কথায়, ‘বাগচীর বাইসেপস যমের সামনেও সাড়ে সতেরো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.