মাতৃভাষা : আহা মরি মরি !

প্রতি বছর প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালিত হয়।যা-ছিল পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী নাগরিকদের মাতৃভাষা রক্ষার সংগ্রাম।সেই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামকেই রাষ্ট্রসঙ্ঘ স্বীকৃতি দেয় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে।বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা রূপে টিকিয়ে রাখা এবং রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্বীকৃতি আদায় করা,দুটোর একটাও সহজে হয় নি।বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালী নাগরিকদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।অগণ্য তাজা জীবনের বিনিময়ে তাঁরা বাংলা ভাষাকে রক্ষা করতে পেরেছিলেন।
কেন না,
প্রথমত :- তৎকালীন পাকিস্তানী রাষ্ট্রের শাসকগণ বাঙালী ছিলেন না।দ্বিতীয়ত :- পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে প্রায় দুই হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব ছিল।দুই পাকিস্তানের মধ্যে ভারত অবস্থিত ছিল।একই দেশের দুই অংশের মধ্যে যোগাযোগ করতে হলে ভারতের উপর দিয়ে অথবা ভারতকে এড়িয়ে সমুদ্র-পথে অথবা রাশিয়া-আফগানিস্তান-চীন হয়ে।যার একটা পথও সহজগম্য ছিল না।তৃতীয়ত :- দুই পাকিস্তানের জলবায়ু-আবহাওয়ার বিরাট ব্যবধান।চতুর্থত :- দুই পাকিস্তানের নাগরিকদের মনের মিল ছিল না।তাঁদের আবেগ-অনুভূতি-প্রেম-ভালোবাসার মধ্যেও ছিল ফারাক।
পঞ্চমত :- উর্দু ও বাংলা ভাষার মাঝেও কোনোরূপ মিল নেই।
ষষ্ঠত :- প্রাচীন কাল থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের আত্মীক যোগ ছিল অখন্ড ভারতের সাথে।যদিও অখন্ড ভারতেরই অংশ পশ্চিম পাকিস্তানও ছিল।তবে,ভারতের ওই অংশের সাথে বঙ্গপ্রদেশেরও অনেক অমিল বিদ্যমান ছিল।যা পূর্ব পাকিস্তানের ছিল না।মূলতঃ পূর্ব পাকিস্তান বঙ্গের সাথে মিলেই অখন্ড ভারতের বৃহত্তর বঙ্গপ্রদেশ ছিল।তাঁদের ভাষা এক।খাদ্যাভ্যাস এক।ভূ-প্রকৃতি এক।জলবায়ু-আবহাওয়া এক।আবেগ-অনুভূতি এক।দুই পাকিস্তান এক দেশ হওয়া স্বত্ত্বেও এই মিল তাদের মধ্যে ছিল না।তাই বিভাষার শাসকরা যখন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী নাগরিকদের উপর অপরিচিত উর্দু ভাষা জোর করে চাপাতে চাইলেন,তখন পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী নাগরিকরা গর্জে উঠলেন।শুরু হল সার্বিক ভাষা আন্দোলন।হিংস্র সশস্ত্র বিভাষী শাসকের সাথে একই দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের মরণপণ লড়াই।বহু প্রাণের বিনিময়ে বাংলাভাষী পূর্ব পাকিস্তানীরা তাঁদের মাতৃভাষা বিভাষী শাসকের অগ্রাসন থেকে রক্ষা করলেন।
ঐতিহাসিক ও সঙ্গত কারণেই ভারতের বাংলাভাষীরা পূর্ব পাকিস্তানী বাঙালীদের মাতৃভাষা রক্ষার করার আন্দোলনের সাথে একাত্মতা অনুভব করেন।ওখানকার ভাষা-শহীদদের জন্য এখানকার বাংলাভাষীদের অশ্রু ঝরে।
তারপর রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্বীকৃতি–একটা বিরাট প্রাপ্তী বাংলাভাষীদের কাছে।রাষ্ট্রসঙ্ঘের স্বীকৃতি এই নয় যে,পৃথিবীর সব-ভাষীরাই বাংলাকে মাতৃভাষা হিসেবে পালন করবে।স্বীকৃতির মূল প্রতিপাদ্য হল, পৃথিবী সকল-ভাষীরাই ইংরাজি বর্ষপঞ্জীর ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে নিজ নিজ মাতৃভাষা হিসেবে মান্য করবে।মাতৃভাষাকে সম্মান জানাবে।তার উন্নয়ন-প্রসার-বিস্তারে সক্রিয় হবে।নিজ নিজ ভাষায় সাহিত্য-শিল্পকলা সৃষ্টিতে মনোনিয়োগ করবে।সেই সাথে অন্যান্য ভাষাকেও হিংসা করবে না।
কিন্তু যতদিন যাচ্ছে,ততই প্রকট হচ্ছে যে,অন্যান্য ভাষাভাষীরা দিনটিকে নিয়ে অতটা মাতামাতি করছেন না।বেশি দূরে যেতে হবে না।ভারতেই দেখা যাচ্ছে হিন্দি-সহ অন্যান্য ভাষীরা বাংলাভাষীদের মতো আবেগে ভাসছেন না।আবার বাংলাভাষী পশ্চিমবঙ্গবাসী সব বাঙালীরাও মেতে উঠছেন না।শহর-কলকাতা এবং অধুনা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী শহরের কিছু কিছু পশ্চিমবঙ্গবাসী বাঙালী সাহিত্যিক-শিল্পী-নাট্যদল-প্রকাশন সংস্থা-ছোটো ছোটো পত্রিকাগুলি ভাষা দিবস নিয়ে বেশি আলোড়িত হয়।হয়ত এসবের পিছনে কোনোরূপ অর্থনৈতিক মনোবৃত্তি কাজ করে।তবে সকলের মনেই যে অর্থনৈতিক লাভালাভ কাজ করে–এমনটা কিন্তু নয়।কলকাতার নামী-অল্পনামী সাহিত্যিকগণ বাংলাদেশে ভাষা দিবসে আমন্ত্রিত হয়ে যান।বাংলা চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত অনেকেই আমন্ত্রণ পান।সেখানে গিয়ে নানা সভা-আলোচনায় যোগ দেন।পশ্চিমবঙ্গেও আসেন কেউ কেউ আমন্ত্রিত হয়ে।উভয় পক্ষই পরস্পরের প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেন না।বেশ একটা আত্মীয়-আত্মীয় মনোভাব প্রকাশ পায়।বাংলা ভাষা প্রসারে-বিস্তারে সবাই নানাবিধ পন্থা-কৌশল উদ্ভাবন করেন।পরিপাটি ভোজন-শয়ন-ভ্রমণ সবকিছুই মসৃণ ভাবে সম্পন্ন হয়।এবং অবশ্যই কিছু অর্থাগম তো হয়ই।প্রতিবছরই এই আসা-যাওয়া,ভোজন-শয়ন-ভ্রমণ উত্তোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

  মাতৃভাষা বিশেষত বাংলা ভাষার প্রসার-বিস্তার-সংরক্ষণে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বাঙালী তথা সাহিত্যিক-নাট্যদল-চলচ্চিত্রকার-চলচ্চিত্রের অভিনয়-শিল্পীদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম-আন্তরীকতা-আসা-যাওয়ার ধকল এসবের পর বাংলা তথা বাঙালীদের মাতৃভাষা কতটুকু কী উন্নয়ন-প্রসার-বিস্তার-সংরক্ষণ হল তার কী কোনোরূপ বিশ্লেষণ-ধর্মী তথ্য বা তত্ত্ব বাংলাভাষা-প্রেমীদের কাছে আছে কি ! যেসব সংগঠন-ব্যক্তি বা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের কাছে যবে থেকে মাতৃভাষা দিবস পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরা পালন করছেন,তবে থেকে মাতৃভাষার অবনয়ন-উন্নয়ন বিষয়ক কোনো তথ্য-তত্ত্ব কি আছে কারুর কাছে ? কেন না,পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর মাতৃভাষা দিবস পালনের আয়োজন করে থাকে প্রতিবছর।সেখানে মন্ত্রী-আমলা-জনপ্রতিনিধি ও জনগণ বিপুল সংখ্যায় উপস্থিত থাকেন।বলাইবাহুল্য যে,এসব ব্যয়বহুল অনুষ্ঠান মন্ত্রী-আমলা-জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের অর্থে আয়োজন করেন না।জনগণের করের টাকাতেই হয়ে থাকে।নাচ-গান-খাওয়া-বিনোদন হয়।যা হয় না,সেটা হল মাতৃভাষা বিষয়ক  গঠনমূলক কোনোকিছু।
     বাঙালীর মাতৃভাষার উন্নয়ন-অবনয়ন এতদিনে কতটুকু কী হল,তা বোঝার জন্য হয়ত ভাষা-পণ্ডিত বা ভাষা-বোদ্ধা হবার প্রয়োজন নেই।এককথায় বলা যায় যতটুকু-যা হয়ে চলেছে তা অসাধারণ!শহরের দিকে তো বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয় ক্রমে বিলুপ্ত হয়েই চলেছে।একই গতিতে বিভাষা মাধ্যমের বিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান।সরকার-প্রোষিত বা চালিত বাংলা মাধ্যমের বিদ্যালয় চিরকালের জন্যই বন্ধ হয়েছে!এমন-কি দেশের প্রাণ যে গ্রাম সেখানেও বিভাষার বিদ্যালয় গড়ে ওঠা শুরু হয়েছে।যাঁরা ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে মাতৃভাষার পক্ষে ঝড় তোলেন,তাঁদের সন্তানদেরও সেই বিভাষার বিদ্যালয়ে কখনো-বা বিদেশী উচ্চ ও উন্নতমানের শিক্ষার জন্য পাঠান।আধুনিক বাংলা ভাষার সাহিত্যিকদের রচনাতেও বিভাষার তোষামদি শব্দের বহুল ব্যবহার দৃষ্টিগোচর হয়।বলা চলে শুদ্ধ বাংলা ভাষার রচনা বর্তমানে পাওয়া খুবই দুষ্কর।ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে এসেও "মাতৃভাষা-প্রেমীগণ" অনর্গল বিভাষায় কথা বলে চলেন মাতৃভাষার পক্ষে।মাতৃভাষা-অনুষ্ঠানে দেখা যায় বিভাষায় লেখা নানাবিধ সতর্কবার্তা ও অনুরোধের ছড়াছড়ি!তথাকথিত মাতৃভাষাপ্রেমীদের গৃহাশ্রমের ভাষা যদি কেউ শুনে থাকেন,তাহলে বুঝতে পারা যায় তাঁদের মাতৃভাষা প্রেম কতটা গভীরে শিরায় শিরায় প্রবাহিত হয়!বাঙালীরা মাতৃভাষার প্রসারে যতটা মরিয়া তার সিকিভাগও  হিন্দিভাষীরা করেন না।অথচ প্রতিক্ষণেই বাংলাভাষীর ঘরে ঘরে হিন্দির প্রবেশ হয়েই চলেছে।ইংরেজির কথা না-হয় উহ্যই থাকল।

   যুগে যুগেই দেখা যায়,জীবন জীবিকার জন্য যখন যে ভাষার কদর বাড়ে,সাধারণ্যে সেই ভাষা শেখার জন্য আগ্রহও বাড়ে।ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি-জার্মানী শেখারও ঝোঁক বেড়েছিল।মোগল আমলে উর্দুর প্রতি আগ্রহ দেখা দিয়েছিল।আবার প্রকৃত স্বদেশ ও মাতৃভাষাপ্রেমীরা শাসকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শাসকের ভাষায় প্রতিবাদ জানানোর জন্য শাসকের ভাষা শেখেন।মাতৃভাষার প্রতি তীব্র ভালবাসা-অনুরাগ থাকলে তার উন্নয়ন-প্রসারে নিজেকে নিয়োজিত রেখে বিভাষা প্রয়োজনে শেখা যেতেই পারে।কিন্তু ছলনাময়ী মাতৃভাষাপ্রেম খুবই ক্ষতিকর।

নদীর মতো ভাষারও মৃত্যু ঘটে।বস্তুত পৃথিবী থেকে অনেক ভাষারই মৃত্যু ঘটেছে।অদূর ভবিষ্যতে বাংলাও সেদিকেই এগিয়ে চলেছে।যাঁরা ভাষা আন্দোলনে প্রাণ দিলেন,তাঁরা যদি আজকের বাংলা ভাষার হতশ্রী অবস্থা দেখতেন,তাহলে তাঁদের মানসিক পরিস্থিতি কী হত তা আমাদের পক্ষে অনুভব করা কঠিন।কেন না,তাঁদের মতো অকৃত্রিম ভাষাপ্রেম আমাদের নেই।
নিচের কবিতাটি দেখলে বুঝতে পারা যায় বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থা :-

“আজ এই ২১ শের পবিত্র সাঁঝবেলায়
আসমানের সিতারা গুলোর মাঝে
ওই দেখা যায় কাদের তসবির ?
সালাম , বরকত , জব্বর , রফিক
আরো কতো কতো পবিত্র ইনসান !
ভোরে পাশের মসজিদের আজান শুনি
কবুতরের ডাকের মধ্যে নিঃশব্দে দরজা খুলি…”
নিঃসন্দেহে বোঝা যাচ্ছে কী মিশে আছে পরতে পরতে।সংগৃহীত এই কবিতাংশটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নেওয়া।লেখকের নাম অজানা।
যদি পশ্চিমবঙ্গের সরকারি বা অসরকারি দূরদর্শনে প্রচারিত নানা ধারাবাহিকের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া যায়,দেখা যাবে সেখানেও এক জগাখিচুড়ি ধরণের বাংলা ভাষা ব্যবহৃত হয়।সেই ভাষা বাংলা নাকি “বাংলিশ” নাকি “বাইন্দি” বোধগম্য হওয়ার আগেই সেদিনের মতো ধারাবাহিক শেষ হয়ে যায়।বঙ্গীয় ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্রে দেখা যায় দু-একটি চরিত্রের মুখে উপভাষা ব্যবহার করা হয়। শহর-শহরতলী-মফসল শহরে বেড়ে ওঠা অভিনেতা বা অভিনেত্রীর মুখে সেই আঞ্চলিক সংলাপ না-হয় ব্যাকরণ সম্মত না-হয় আঞ্চলিক উপভাষা সম্মত!সে-এক কিম্ভূতকিমাকার ব্যাপার!যা একই সাথে শ্রবনকটু,বিরক্তিকর,উপভাষীদের অবমাননাকর ও উপভাষার ক্ষতিকারক।

 উপভাষা যেকোনো ভাষারই অতি মূল্যবান সম্পদ।বাংলা উপভাষার সংখ্যা পাঁচটি।প্রতিটি উপভাষাই নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র ও সমৃদ্ধ।তাদের উচ্চারণ,বাকরীতি,উচ্চারণকালে শ্বাসবায়ুর আদান-প্রদান এবং উচ্চারণে অংশগ্রহণকারী বাকযন্ত্রের তারতম্যের কারণে প্রতিটি উপভাষাই শ্রুতি-নন্দন।যাঁরা উপভাষায় কথা বলেন,ভাষার সাথে তাঁদের নাড়ির টান জড়িয়ে থাকে।পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং ব্যবহারকারীর মধ্যে এক আত্মীক বন্ধনে উপভাষা আষ্টেপৃষ্টে বদ্ধ থাকে।সেই ভাষা যদি কৃত্রিম ভাবে,বিকৃত উচ্চারণে কর্ণগোচর হয়,তা যে কী পরিমাণে বিরক্তিকর সে বর্ণনা করে বোঝানো মুসকিল।
   বাংলাদেশের নাটক-চলচ্চিত্রে বেশির ভাগই উপভাষা ব্যবহার হতে দেখা যায়।পরিবেশ-কাহিনির সাথে ওতপ্রোত ভাবে মানিয়ে যায়।প্রমিত বাংলা ওখানে ব্যবহার কমই হয়।এমন-কি বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার ভাষাই আলাদা আলাদা বাংলা।তাঁদের গৃহের ভাষা বা মৌখিক ভাষার মধ্যেও বৈচিত্র্য লক্ষিত হয়।সাধারণত প্রতি দুই কিলোমিটারের ব্যবধানে ভাষার উচ্চারণ বদলে যায়।তার সাথে ধর্ম-অর্থনৈতিক স্বাচ্ছলতা-শিক্ষা-নারী পুরুষ ভেদেও ভাষার বিভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়।এত বিভিন্নতা নিয়েও বাঙালীর মাতৃভাষা যে বাংলা তা অন্তঃসলিলার মতো প্রবহমান।
 চর্যাপদকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম লিখিত নিদর্শন বলা হয়।সেই হিসেবে বাংলা সাহিত্যের বয়স এগারো-'শ বছর হয়।এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যের পথচলা শুরু বিদ্যাসাগর মহাশয়ের হাত ধরে।বঙ্কিমচন্দ্র হয়ে রবীন্দ্রনাথে এসে যার পূর্ণতা প্রাপ্তী।রবীন্দ্রনাথের নোবেল জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিশ্ব ভাষা ও সাহিত্য দরবারে নিজের আসন দখল করে নেয়।বলা হয় যে,ঠিক সময়ে,ঠিক মতো অনুবাদ করতে পারলে বাংলা ভাষা আরও নোবেল জয় করে নিতে পারত।
 এত বৈভব,এত সমৃদ্ধি,এত কালজয়ী সাহিত্যকর্ম সৃষ্টি হয়েছে যে ভাষায়,তার এই দৈন্যদশা বাংলা মাতৃভাষা যাঁদের এবং যাঁরা মাতৃভাষা-অনুরাগী তাঁদের খুবই পীড়া দেয়।
 বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য যাঁরা বিভিন্ন সময়ে প্রাণ দিয়েছেন তাঁরা এই বিকৃত-ক্রম ক্ষীয়মান-বিলুপ্তীর পথিক বাংলা ভাষার জন্য কি প্রাণ দিয়েছিলেন!
তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বছরের একটা দিনের কয়েক ঘন্টার বিনোদনমূলক শ্রদ্ধাজ্ঞাপনে কতটা সম্মান জানানো হয় ?
  সুজিত চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.