এক পরম ব্যতিক্রমী ঘটনার সাক্ষী হল দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়। মা ও মেয়েকে একসঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রি দিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ! বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের ইতিহাসে এই প্রথম মা ও মেয়ে একসঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রি পেলেন।
ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে ইকোনমিক সার্ভিস অফিসার হিসেবে কাজ করেন মালা দত্ত। তিনিই মেয়ের সঙ্গে ডিগ্রি নিয়েছেন এই বছর। মালা জানালেন, ১৯৮৫ সালে দিল্লি স্কুল অফ ইকোনমিক্স থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন তিনি। তীব্র ইচ্ছে ছিল, পিএইচডি করবেন। কিন্তু তার পরে নানা কারণে আর পড়াশোনা নিয়ে এগোনো হয়নি।
মাঝে চলে গেছে অনেকগুলো বছর। চাকরি, সংসারের টানাপড়েনে প্রায় মিলিয়েই যেতে বসেছিল পিএইচডি করার ইচ্ছে। কিন্তু মিলিয়ে যে পুরোপুরি যায়নি, তা টের পেলেন কয়েক বছর আগে। যখন জানতে পারলেন, তাঁর ছোটো মেয়ে শ্রেয়া পিএইচডি করতে শুরু করছেন।
ব্যস, মেয়ের সঙ্গেই জুড়ে গেলেন মা। কলেজ শেষ করার দীর্ঘ ৩৪ বছর পরে পিএইচডি করতে শুরু করলেন তিনি!
মালা জানিয়েছেন, তাঁর ছোটো মেয়ে শ্রেয়া যখন দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিচ্ছে, তখনই পরিকল্পনাটি তাঁর মাথায় এসেছিল। কিন্তু তখন একা একা এগোনোর সাহস পাননি। তার পরে, শ্রেয়া কলেজ পর্ব শেষ করে, বছর দুয়েক চাকরি করার পরে, সিদ্ধান্ত নেন পিএইচডি করার। তখন তিনিও ফিন্যান্সে পিএইচডি করার জন্য আবেদন করেন। পড়াশোনার জন্য চাকরি থেকে স্টাডি লিভও নেন। মা-মেয়েতে জোর কদমে শুরু করেন পড়াশোনা। আর আজ, বছর পাঁচেক পরে, শেষ পর্যন্ত পিএইচডি ডিগ্রি হাতে পেলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, গত বছরেই মা ও মেয়ে থিসিস জমা দিয়ে, একসঙ্গে মৌখিক পরীক্ষা দেন। মালা জানিয়েছেন, মেয়ের বয়সি পড়ুয়াদের সঙ্গে পড়াশোনা করাটা প্রথম প্রথম তাঁর কাছে খুব একটা সহজ ছিল না। কিন্তু পরে তিনি গোটা বিষয়টাই উপভোগ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, মেয়ের এক বছর আগেই শেষ হয় তাঁর পিএইচডি। গত বছরের নভেম্বরে তাঁর কনভোকেশনও ছিল। কিন্তু তিনি সে দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি ডিগ্রি নিতে। পরের বছরে, মেয়ের সঙ্গেই ডিগ্রি নেবেন বলেই অপেক্ষা করছিলেন। সে কথা জানিয়েও ছিলেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে।
মালা দত্তের মেয়ে শ্রেয়া মিশ্র পড়াশোনা শেষ করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের কনসালট্যান্ট হিসেবে যোগ দেন। গ্র্যাজুয়েশনের দু’বছর পরে সাইকোলজিতে পিএইচডির জন্য আবেদন করেন তিনি। শ্রেয়া জানিয়েছেন, তিনি আবেদন করার কথা বাড়িতে জানানোর পরেই এগিয়ে আসেন তাঁর মা। খুব খুশি হন শ্রেয়া। সে দিনই ঠিক করেন, একই সঙ্গে পিএইচডি শেষ করবেন তাঁরা। তা হলে তাঁদের দু’জনের জন্যই সেটা স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে।
হলও তাই। মা-মেয়েতে মিলে একই সঙ্গে শেষ করলেন পিএইচডি, পেলেন ডক্টরেট সম্মান। আপাতত অভিবাদনের ঝড়ে ভাসছেন দু’জনেই।