উনিশশো পঞ্চাশের দশকের শুরুর সেই বছরগুলোতে যখন শ্যামাপ্রসাদ, বিধানচন্দ্র রায় এবং আর এস এস তাঁদের যথাসাধ্য শক্তি নিয়ে ওই সবহারা লক্ষ লক্ষ মানুষগুলোর পায়ের নীচে একটু মাটি, মাথার উপর একটু আচ্ছাদন আর মুখে দু মুঠো অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন, তখন এই বাংলার কমিউনিস্টরা নেমে পড়েছিল ঘোলা জলে মাছ ধরতে। মানুষের দুঃখ-কষ্টই তো ওদের রাজনীতির পুঁজি। তাই তারা শুরু করলো ধ্বংসাত্মক আন্দোলন। নেতারা সবাই পূর্ব পাকিস্তান থেকে লাথ খেয়ে আসা কমিউনিস্ট। সুষ্ঠু পুনর্বাসনের কাজে সরকারকে সাহায্য না করে উদ্বাস্তুদেরকে অবৈধ ও অনৈতিক কার্যকলাপে উস্কানি ও প্ররোচনা দিতে লাগল যমের অরুচি এই কমিউনিস্টরা। এই শুয়ারের বাচ্চারাই ভারত ভাগ সমর্থন করেছিল, এরাই মুসলিম লীগ এর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল, এরাই স্লোগান তুলেছিল, “আগে পাকিস্তান দিতে হবে তবেই ভারত স্বাধীন হবে”। সেই ভারতভাগের বলি হিন্দুরা যখন সব খুইয়ে নিঃস্ব অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে এসে রাস্তায় দাঁড়ালো, তখন তাদেরকে কোনরকম মানবিক সাহায্য না করে তাদেরকে রাজনৈতিক আন্দোলনের “ভিড়” ও পেশীশক্তি (cannon fodder) হিসাবে ব্যবহার করতে লাগল। আর ধন্য সেই উদ্বাস্তুরা, যারা ভুলে গেল যে এই কমিউনিস্টরাই ভারত ভাগে জিন্নার দোসর ছিল। আরো ভুলে গেল কাদের অত্যাচারে তাদেরকে চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি ছেড়ে তাদেরকে চলে আসতে হয়েছে। এসব ভুলে গিয়ে তারা ওই কমিউনিষ্টদের প্ররোচনায় লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে অবৈধ ও অনৈতিকভাবে স্থানীয় মানুষদের (শুধু হিন্দুদের) জায়গা জমি দখল করতে নিজেদের ঐক্য ও বাহুবল দেখালো। ভাবলে হাসি পায় যখন দেখি এরকম একটা কলোনীর নাম “বিজয়গড় কলোনী”। খুব নামকরা উদ্বাস্তু কলোনী। হঠাৎ কলোনী, নতুন গ্রাম, পূর্ব পাকিস্তান কলোনী, বাঙালপাড়া, সূর্য সেন কলোনী, নেতাজীগড়, চট্টগ্রাম কলোনী, ইত্যাদি নামের অর্থ বোঝা যায়। কিন্তু “বিজয়গড়”! এই নামের অর্থ কী? কার বিজয়? নিজের বাপ ঠাকুরদার জমি ছেড়ে পালিয়ে এসে কার উপর বিজয়লাভ করল এরা? কিসের বিজয়? একটু ভেবে দেখুন তো! এর উত্তর শুনতে খুব তিতো লাগবে। তাই না?
তাই যখন ত্রাণ, পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনের সময়, তখন এই কমিউনিস্টরা করেছিল ধ্বংসাত্মক, অনৈতিক আন্দোলন। এই উদ্বাস্তুদেরকে দিয়েই কম্যুনিস্টরা ১৯৫৩ সালে কলকাতার রাস্তায় ট্রাম পুড়িয়ে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করে হিংসাত্মক আন্দোলন করে শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুতে বাঙালি হিন্দুর যে শোক দুঃখ আবেগ ও নেহেরুর প্রতি বিতৃষ্ণা ও ক্রোধের ঢেউ তৈরী হয়েছিল তাকে নষ্ট করে দিয়েছিল। কম্যুনিস্টরা বরাবরই নেহেরু ইন্দিরা কংগ্রেসের দোসর।
ওই একই সময়, যখন পাঞ্জাব ও দিল্লীতে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত হিন্দু ও শিখ উদ্বাস্তুরা আর এস এসের শাখায় যোগ দিয়ে হিন্দুর শক্তিকে সুসংহত করছে, তখন পশ্চিমবঙ্গে উদ্বাস্তুরা লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে ইনক্লাব জিন্দাবাদ করছে, স্থানীয়দের জমি দখল করছে আর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ও হিন্দু সংগঠনগুলোর শ্রাদ্ধ করছে।
হ্যাঁ বন্ধু, এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে স্বাধীনোত্তর বাংলার মাটিতে হিন্দু চেতনা, হিন্দুত্বের গর্ব ও হিন্দু রাষ্ট্রীয়তার বোধ একটুও শিকড় গাড়তে পারে নি। আজ এখানে যেটুকু হিন্দুত্বের গ্রহণযোগ্যতা দেখা যাচ্ছে, তার জন্য প্রধান কৃতিত্ব মুসলমানের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসন ও সারা ভারতে নরেন্দ্র মোদীর অভূতপূর্ব রাজনৈতিক সাফল্য। দ্বিতীয় কৃতিত্ব ৩৪ বছর বাম শাসন ও ৮ বছর মমতা শাসনের সীমাহীন ও নগ্ন মুসলিম তোষণ। তৃতীয় কারণ আর এস এসের দ্বারা ৮০ বছর বাংলার মাটি কামড়ে কাজ, শিবপ্রসাদ রায়ের সাড়া জাগানো লেখা এবং তপন ঘোষ এর আর এস এস থেকে বেরিয়ে গিয়ে দশ বছরের মারমুখী হিন্দুত্বের কাজ।
বাঙালির মনে যে কমিউনিস্ট জঞ্জাল জমে বাঙালিকে হিন্দুত্বচ্যুত করেছে ও ভারতপ্রীতি কমিয়ে দিয়েছে, সেই জঞ্জালকে দূর করতে হলে হিন্দুত্বের আরো শুদ্ধিকরণ দরকার ...