পাঁচ বছর আগে কেন্দ্রে তাঁর প্রথম সরকার পত্তনের পর লালকেল্লা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, ভারতের অর্থনীতির হাল বদলে দিতে নতুন দাওয়াই দিতে চান তিনি,- ইজ অব ডুইং বিজনেস। দেশকে বৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে বাণিজ্য করা যেন সহজ হয়।
সেই লক্ষ্য বহাল রইল। সঙ্গে নতুন লক্ষ্য স্থির করলেন প্রধানমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবসে লালকেল্লা থেকে দেশের উদ্দেশে বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমার স্বপ্ন ভারতে মানুষের জীবনযাপন সহজ হবে। ইজ অব লিভিং লাইফ- এর পরিবেশ তৈরি করাই আমার পরের লক্ষ্য”।
কেমনতর সেই ভাবনা?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আকছার আমার অফিসারদের সঙ্গে বসে আলোচনা করি, – সাধারণ মানুষের জীবনে সরকারের যে দখলদারি রয়েছে তা কী ভাবে কম করা যায়। তা কি লঘু করা যায় না! যাতে মানুষ আরও সহজ ও সাবলীল ভাবে বাঁচতে। এ ব্যাপারে তাঁদের স্বাধীনতা থাকে। রোজ সরকারের দরজায় দরজায় ঘুরতে না হয়!”
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “সাধারণ মানুষের রোজকারের জীবনে সরকারের যেমন দাবাও তথা চাপ থাকা উচিত নয়। তেমনই সংকটের সময় সরকারের অভাব থাকাও উচিত নয়। দরকারে অদরকারে চাইলেই যেন পাশে পায় সরকারকে। এমন ব্যবস্থা আমাদের কায়েম করতে হবে”।
কী ভাবে মানুষের জীবন সহজ হহতে পারে তার মোটামুটি একটা ধারনা দেওয়ারও চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। একশ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে পরিকাঠামো নির্মাণ, পানীয় জলের বন্দোবস্ত থেকে শুরু করে ডিজিটাল পেমেন্ট, অপ্রয়োজনীয় আইন খতম করা, সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা ইত্যাদি সহ তাঁর ভাবনার কথা বক্তৃতার পরতে পরতে জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রচুর অপ্রয়োজনীয় আইন ছিল। সরকারের আসার পর থেকে সে রকম বহু আইন খতম করেছি। গত পাঁচ বছরে ১৪৫০ টি আইন খতম করে দিয়েছি। দ্বিতীয় মেয়াদে গত দশ সপ্তাহের মধ্যে ৬০ টি অপ্রয়োজনীয় আইন বাতিল করেছি।
তাঁর কথায়, প্রত্যেকটা মানুষই জীবনে এগোনোর চেষ্টা করে। আমাদেরও এগোতে হবে। কিন্তু আমরা যে সন্ধিক্ষণে এসে পৌঁছেছি তাতে একটু একটু করে এগোলে চলবে না। হাই জাম্প লাগাতে হবে। এর পরই পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য একশ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা বলেন। তিনি জানান, আমার লক্ষ্য হল আগামী পাঁচ বছরে সড়ক, বন্দর, রেলপথ ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই টাকা খরচ করা। যাতে পরিকাঠামো বাড়বে, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে, মানুষের জীবনযাপনও আগের তুলনায় সহজ হবে।
নিজের ভাবনার পাশাপাশি উন্নয়ন ও আর্থিক বৃদ্ধির জন্য সাধারণ মানুষের উচ্চাকাঙ্খা ও আগ্রহের কথাও এ দিন গল্পের মতো করেই বোঝানোর চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ছোট বেলায় দেখেছি কোথাও রেল স্টেশন বানানোর জন্য কাগজে কলমে সিদ্ধান্ত হলেই মানুষ খুশি হয়ে যেত। পাড়ায় পাড়ায় বহুদিন ধরে আলোচনা হতো,- আমাদের এখানে রেল স্টেশন হবে। এখন আধুনিক রেল স্টেশন তৈরি হতেই সেখানকার মানুষ প্রশ্ন করেন, বিমানবন্দর কবে হবে? এখন শুধু পাকা সড়কের কথা মানুষ করে না। প্রশ্ন করে, স্যার চার লেনের রাস্তা হবে না ছয় লেনের। এখন শুধু বিদ্যুতের পোল দেখে খুশি হয় না, বলে চব্বিশ ঘন্টা বিদ্যুৎ কবে থেকে চালু হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, সময় বদলাচ্ছে। তা আমাদের বুঝতে হবে। সরকার তাঁর প্রথম বাজেটে জানিয়েছে, আমরা কোন আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চাইছে। এটা ঠিকই পাঁচ ট্রিলিয়ন অর্থনীতি তৈরি করা কঠিন কাজ। কিন্তু চ্যালেঞ্জ তো নিতেই হবে। উপরের দিকে দেখতে হবে। সত্তর বছরে ভারত দুই ট্রিলিয়ন অর্থনীতিতে পৌঁছেছিল। গত পাঁচ বছরে তা তিন ট্রিলিয়ন ইকোনমিতে পৌঁছেছে। আগামী পাঁচ বছরে তা পাঁচ ট্রিলিয়ন ইকোনমিতে পৌঁছবে।